ec banglaস্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ করতে যাচ্ছে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৫ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পাঁচ মাসের মাথায় একাদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে আজ রোববার দেড় বছরের এ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আসছেন তারা। তবে ইসির এই কর্মপরিকল্পনাকে ‘অর্থহীন’ বলে প্রতিক্রিয়া এসেছে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপির কাছ থেকে। তারা নির্বাচনকালীন সরকারের উপরই গুরুত্ব দিচ্ছে।

নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত কর্মপরিকল্পনা ইসি চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে তা বই আকারে প্রকাশ হয়েছে। রোববার সিইসি তা উন্মোচন করবেন। আনুষ্ঠানিক এ রোডম্যাপ ধরেই কাজ বাস্তবায়ন হবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে। এ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে সবার কাছে ইসির সব কাজ তুলে ধরা হবে। তাদের মতামত নিয়ে সবার অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা হবে, বলেন তিনি।

সবার মতামতের ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে এ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি।

এ নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে জন-আকাক্সক্ষা পূরণে অন্যতম সাতটি বিষয়ে রাজনৈতিক দলসহ ছয় ধরনের অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের গেজেট প্রকাশের সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া, রাজধানীর মতো বড় শহরের আসন সীমিত করে নির্দিষ্ট করে দেওয়া, আরপিও-সীমানা নির্ধারণ অধ্যাদেশ বাংলায় রূপান্তরের প্রস্তাবও থাকছে কর্মপরিকল্পনায়।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, সংলাপে শেষ মুহূর্তে নারী সংগঠনের নেত্রীদের সঙ্গে বসার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ৩১ জুলাই থেকে অক্টোবর নাগাদ এ সংলাপে পর্যায়ক্রমে নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, নারী সংগঠনের নেত্রী ও নির্বাচন পরিচালনা বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। সেক্ষেত্রে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত সময়ে সংসদ নির্বাচন করতে দৃঢ়তার সঙ্গে ও সুচিন্তিত পন্থায় এগিয়ে যাচ্ছে। দেশবাসী একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছেন।

সার্বিকভাবে দেশে জাতীয় নির্বাচনের একটি অনুকূল আবহ সৃষ্টি হয়েছে। ইসি কর্মপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো নিয়ে অংশীজন, গণমাধ্যম, দলসহ সংশ্লিষ্টদের সামনে উপস্থাপন করে সবার মতামত নেবে। সবার মতামতের আলোকে আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আইনানুগ ও গ্রহণযোগ্য করে তোলা সম্ভব বলে ইসি বিশ্বাস করে।

কর্মপরিকল্পনায় ৭ করণীয়র মধ্যে রয়েছে আইনি কাঠামোসমূহ পর্যালোচনা ও সংস্কার; নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজ ও যুগোপযোগী করতে সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ গ্রহণ; সংসদীয় এলাকার নির্বাচনী সীমানা পুনর্নির্ধারণ; নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ; বিধি অনুসারে ভোটকেন্দ্র স্থাপন; নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ। কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, নির্বাচন পরিচালনায় বিদ্যমান আইন-বিধি প্রয়োগ করে অতীতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে। এখন আইনি কাঠামোর আমূল সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে ইসি বিবেচনা করে না। তবে পরিবেশ-পরিস্থিতির পরিবর্তনের মুখে এগুলো আরও যুগোপযোগী করার সুযোগ রয়েছে। যাতে ভোট প্রক্রিয়া আরও সহজতর ও অর্থবহ হয়। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও নির্বাচন পরিচালনা বিধি অনুযায়ী ‘পোস্টাল ব্যালটে’ ভোটে দেওয়ার প্রক্রিয়াটি জটিল। বিশেষ করে বিদেশে অবস্থানরতদের সহজ পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার কাঠামো বের করা প্রয়োজন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রার্থীর গেজেট প্রকাশ নিয়ে বিধিতে অস্পষ্টতা রয়েছে উল্লেখ করে তা দূর করার প্রস্তাব কমিশনের। সেই সঙ্গে আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করে আরও অসঙ্গতি পেলে তা দূর করতে উদ্যোগ থাকবে ইসির।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে এ পর্যন্ত দু’শতাধিক সংশোধনী আনা হয়েছে। এ আইনটিও যুগোপযোগী করতে আরও সংস্কারের প্রয়োজন হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও সীমানা পুনর্নির্ধারণ অধ্যাদেশ বাংলা ভাষায় রূপান্তর করা গেলে ভোটার, প্রার্থী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবার কাছে সহজবোধ্য হবে বলে মনে করছে ইসি। সীমানা পুনর্বিন্যাসে নতুন প্রশাসনিক এলাকা ও বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোকে নিয়ে নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণ করতে চায় ইসি। বিদ্যমান অধ্যাদেশে জনসংখ্যার বিবেচনায় আসন বিন্যাস করা হয়।

জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় শহর ও গ্রামাঞ্চলের আসনে বৈষম্য সৃষ্টি হবে। বড় শহরের জনসংখ্যা বাড়লেও অনেকে ভোটার হন গ্রামাঞ্চলে। ইসির প্রস্তাব হচ্ছে-আইন সংস্কার করে শুধু জনসংখ্যাকে বিবেচনা না করে জনসংখ্যা, ভোটার সংখ্যা ও আয়তনকে বিবেচনায় আনা যেতে পারে। রাজধানীর মতো বড় শহরের আসন সংখ্যা সীমিত করে নির্দিষ্ট করা যায় বলে মনে করে সংস্থাটি।

সীমানা পুনর্নির্ধারণে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নীতিমালার আলোকে সংসদীয় আসনের সীমানার খসড়া করে সংশ্লিষ্ট দাবি-আপত্তি-নিষ্পত্তি শেষে চূড়ান্ত করা হবে। অবৈধ অর্থ ব্যবহার রোধ ও পেশি শক্তির ব্যবহার দমনে আইনি সংস্কার ও তা প্রয়োগে সংশ্লিষ্ট সবার সুপারিশ পেলে শান্তিপূর্ণ ভোট করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছে ইসি।

এ-সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনারদের নিয়ে গঠিত কমিটি সব পর্যালোচনা করে তা চূড়ান্ত করবে। ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও বিতরণ; দলের নিবন্ধন হালনাগাদ, ইসির জনবলের সক্ষমতা বাড়াতে কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা পরিকল্পনাও তুলে ধরা হয়েছে রোডম্যাপে। ১৬ ফেব্রুয়ারি ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর ২৩ মে আগামি দেড় বছরের কাজের খসড়া সূচি ঘোষণা করেন সিইসি নূরুল হুদা।

সাম্প্রতিক