farhad-mঢাকা : গেলো ৩ জুলাই ভোর ৫টায় শ্যামলীর নিজ বাসা থেকে বের হয়েছিলেন কবি ও সমাজকর্মী ফরহাদ মজহার।এরপর নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি। তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয় তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

এ নিয়ে বুধবার ফরহাদ মজহার ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানকে দেয়া সাক্ষাতকারে দাবি করেন তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। উদ্ধারের পর প্রথম কোন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেন তিনি।

হাসপাতালে বসে দেয়া সাক্ষাতকারে ফরহাদ মজহার বলেন, ঢাকার বাসা থেকে ভোর পাঁচটায় চোখের ওষুধ কিনতে বের হলে তিনজন লোক জোর করে মিনিবাসে(মাইক্রোবাস)উঠিয়ে নেয়। ১৬ ঘন্টা পর ঢাকা থেকে ২০০ কিমি দূরে এক শহরে তাকে পাওয়া যায়।

গার্ডিয়ানে আরো বলা হয় গেলো সপ্তাহের সোমবার তিনি নিখোঁজ হবার ঘটনা ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আনা হয়। তখন জাতিসংঘসহ মানবধিকার সংগঠনগুলো নিরাপত্তাবাহিনী দ্বারা জোরপূর্বক গুম ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশকে চাপ সৃষ্টি করে।

হাসপাতালে তার রুমে নেয়া সাক্ষাতকারটিতে ফরহাদ মজহার বলেন, তারা আমার সাথে খারাপ ভাষায় কথা বলেছে। আমার মোবাইল কেড়ে নিয়ে চোখ বেঁধে দেয় এবং মিনিবাসের মেঝেতে তাদের হাঁটুর মাঝখানে চাপ দিয়ে বসিয়ে রাখে।

সাক্ষাতাকারে তিনি বলেন, একজন অপহরণকারীর কাছ থেকে কৌশলে অল্প সময়ের জন্য মোবাইলটা নিয়ে তার স্ত্রীকে ফোন করেন এবং জানান অপহরণকারীরা তাকে নিয়ে যাচ্ছে, তাকে মেরে ফেলবে।

ফোন ট্র্যাক করে যাতে পুলিশ তার অবস্থান শনাক্ত করতে পারে সেজন্য তিনি অপহরণকারীদের মুক্তিপণ দেয়ার মাধ্যমে তাকে ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব করেন, যার কারণে অপহরণকারীরা তাকে কয়েকবার ফোনে কথা বলার সুযোগ দেয়।

ফরহাদ মজহার আরো বলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা মিনিবাসটি চলতে থাকে। তারা আমাকে অপমান করে, মাঝেমধ্যে গালিগালাজ করে, চড়ও মারে। ১০/১২ ঘন্টা পর তাদের একজন বলে আমাকে ছেড়ে দেয়া হবে। পরবর্তীতে চোখের বাঁধন খুলে দিয়ে খানিক অন্ধকার নির্জন এক জায়গায় নামিয়ে দেয়া হয় আমাকে।

পরে তিনি কিছুদূর হেঁটে খুলনার একটি মার্কেটে গিয়ে পৌঁছান। সেখানে থেকে তিনি খাবার কিনেন। অপহরণকারীরা তাকে রাত ৯টা ১৫ মিনিটের বাসের একটি টিকেট দিয়ে খুলনা থেকে ঢাকায় ফেরত যাবার জন্য বলে জানান তিনি।

কারা তাকে অপহরণ করেছে সে বিষয়ে তার কোন ধারণা নেই বলে তিনি জানান, অপহরণকারীরা সাধারণ পোষাকে ছিল। তাদের পরিচয় সম্পর্কে কিছুই তিনি বলতে পারেননি।

স্ত্রীকে করা ফোনকল ট্র্যাক করে পুলিশ তাকে আরো আগে উদ্ধার করতে পারত বলে তিনি জানান, আমি অবাক হয়েছি পুলিশ কেন খুলনা পৌঁছার আগেই মাইক্রোবাসটি আটক করলো না।

ফরহাদ মজহার জানান, তিনি এখনো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কিছু সময় লাগবে।

তিনি বলেন, অপহরণ থেকে ফিরে আসা অন্যদের মত আমি নিরব থাকবো না। আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা প্রকাশ করতে আমি ভীত নয়। বেশিরভাগ মানুষ অপহরণ হওয়া নিয়ে রহস্যজনকভাবে চুপ হয়ে যায়। আমি যখন কাজে ফিরে আসব এ বিষয় নিয়ে কাজ করব। আমাদের অপহরণ করার এ সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হবে।

বুধবার বিকেল ৫টায় বারডেম হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে রিলিজ করে দেন। এরপর তিনি শ্যামলী বাসায় ফেরেন।

সাম্প্রতিক