rohingaস্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশী পরিচয়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা বিদেশী পাড়ি জমাচ্ছে। কারণ এদেশ থেকে বিদেশ পাড়ি দেয়া তাদের জন্য সহজ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশী পরিচয়ে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে আশ্রয় নেয়া নাগরিকদের মধ্যে রোহিঙ্গারাও ঢুকে পড়ছে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা বাংলাদেশী পরিচয়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয়ও নিচ্ছে। আর তাদের দায়ভার বহন করতে হচ্ছে বাংলাদেশীদের। অথচ বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গাদের বিদেশে পাড়ি দেয়া নিয়ে সরকার থেকে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের বিদেশে আশ্রয় নেয়ার ঘটনা। আর বিদেশে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশকেই প্রধান রুট হিসেবে বেছে নিচ্ছেন তারা। তাদের কেউ কেউ বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। আবার কেউ কেউ সাগরপথে বিদেশে যাচ্ছে। মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে রোহিঙ্গা নাগরিকরা সকলেই যে বাংলাদেশে অবস্থানের জন্য আসছে তা নয়। অনেকেই আসছে বিদেশে পাড়ি দেয়ার জন্য। কারণ বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাড়ি দেয়াটা তাদের জন্য অনেকটা সহজ। এক শ্রেণীর দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট হাতিয়ে নিচ্ছে রোহিঙ্গারা। আর সেই পাসপোর্ট নিয়েই চলে যাচ্ছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।

সূত্র জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের হিসাব অনুযায়ী ২০০৮-১৫ সাল পর্যন্ত ৮ বছরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯৪ হাজার বাংলাদেশী অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে। তাছাড়া ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশীদের সংখ্যাও এখন বাড়ছে। ওসব বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে বাংলাদেশী পরিচয়ে যারা ইউরোপে গিয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোহিঙ্গা রয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশী পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরেই তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। অন্য কোন দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনবে না বাংলাদেশ। তাছাড়া প্রতিবছর হজ মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক নাগরিক হজে যান। ওই সুযোগে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে রোহিঙ্গারা। আবার ওমরাহ ভিসায় বাংলাদেশী নাগরিকদের পাশাপাশি রোহিঙ্গারাও বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। রোহিঙ্গারা ওমরাহ হজের নামে সৌদি আরবে পাড়ি জমালেও নাম হয়েছে বাংলাদেশী হিসেবে। কারণ তারা বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি যায়। ফলে হজ শেষে রোহিঙ্গাদের দেশে না ফেরার দায় নিতে হচ্ছে সরকারকে। যে কারণে সৌদি আরব একসময় ওমরাহ ভিসা বন্ধ করে দেয়। তাছাড়া সৌদি আরবে রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশী নাগরিকরা দুর্ভোগে পড়ছে। রোহিঙ্গারা সেখানে বিভিন্ন দুর্নীতি-অনিয়ম ও সামাজিক অনাচারে জড়িয়ে পড়ছে। আর সৌদি প্রশাসন থেকে ধরা পড়লেই দাবি করছে তারা বাংলাদেশী। যদিও সৌদি সরকার থেকে কাজের অনুমতিপত্রের (আকামা) জন্য রোহিঙ্গাদের প্রতি এখন অনেকটা সদয়। একজন রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্য কোন কোম্পানি আকামার মেয়াদ যদি ৪ বছর করে থাকে, বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে সেটা করা হচ্ছে ২ বছর। মুসলিম ও নির্যাতনের শিকার হওয়ায় রোহিঙ্গাদের প্রতি সৌদি আরব বরাবরই আন্তরিক। সৌদি আরবে এখন প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক রয়েছেন। আর ওসব রোহিঙ্গার বেশিরভাগই বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহারের মাধ্যমে সেদেশে গেছে।

সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবৈধ নাগরিকদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। সেখানে বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি প্রায় সাড়ে ৫শ’ বাংলাদেশীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তবে তারা সকলেই বাংলাদেশী কিনা এ প্রশ্ন রয়েছে। কেননা মালয়েশিয়ায় অনেক রোহিঙ্গা নাগরিক আশ্রয় নিয়েছে। সাগর পথের পাশাপাশি বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়েও মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন সময়ে পাড়ি জমিয়েছে তারা। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী পরিচয়ে অনেক রোহিঙ্গা এখন অবস্থান করছে। মূরত কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এলাকার মানুষের সাথে রোহিঙ্গা নাগরিকদের চেহারা ও ভাষার অনেকটা মিল রয়েছে। তাই অনেক সময় প্রশাসনের কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা নাগরিকদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারছেন না। তারা বিভ্রান্তিতে পড়ছেন। প্রশাসনের কর্মকর্তারা অনেক সময়েই ধারণা করেন তারা বাংলাদেশের নাগরিক। আর সেই সুযোগেই বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে রোহিঙ্গারা। একই ভুল করে এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারাও। তারা রোহিঙ্গাদের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের লোক মনে করে ছেড়ে দিচ্ছে।

এদিকে রোহিঙ্গা নাগরিকরা যাতে কোনভাবেই পাসপোর্ট না পায় সে বিষয়ে সরকারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের পাসপোর্ট অফিসকে এ বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। তবে প্রশাসনের কঠোর নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গারা পেয়ে যাচ্ছে পাসপোর্ট। কখনওবা দালালদের মাধ্যমে তারা পাসপোর্ট জোগাড় করে পাড়ি দিচ্ছে বিদেশে।

সাম্প্রতিক