স্টাফ রিপোর্টার: দেশে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বা শিল্প-কারখানা গড়তে হলে প্রথমেই পরিবেশ অধিদফতর থেকে অবস্থান ছাড়পত্র নিতে হবে। অন্যথায় সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারবে না। তার আগেই পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ সমীক্ষা (ইআইএ) অনুমোদন নিতে হবে। আর ইআইএ অনুমোদনের পরই কেবল দেয়া হবে পরিবেশগত ছাড়পত্র। ‘পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-২০১৭’ খসড়ায় এ বিধান যুক্ত করা হচ্ছে। এ বিধিমালা অনুমোদন পেলে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া ‘লাল’ শ্রেণীভুক্ত কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পে উদ্যোক্তা প্রকল্প এলাকায় নির্মাণ উপকরণ মজুদ ও মাটি ভরাটও করতে পারবে না। এমনকি সীমানা নির্ধারণের পাশাপাশি সীমানা পিলারও দিতে পারবে না। তবে রামপাল, রূপপুর, মাতারবাড়ী, পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এর আওতার বাইরে থাকবে। পাশাপাশি সবুজ ও কমলা শ্রেণীর প্রকল্পে আগাম ছাড়পত্রের প্রয়োজন পড়বে না। শিগগিরই বিধিমালা অনুমোদন পাওয়ার কথা রয়েছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পরিবেশ অধিদপ্তর পরিবেশবাদী সংগঠন, পরিবেশ বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন মহলের ব্যাপক সমালোচনা ও চলমান আন্দোলনের মধ্যে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ‘পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা’ সংশোধন করতে যাচ্ছে। আইনের ফাঁকফোকর বের করে এতোদিন পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ‘অবস্থান ছাড়পত্র’ নিয়েই পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর শিল্প-কারখানা ও উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করে দিতো সরকার ও বেসরকারি খাতের প্রভাবশালীরা। দুর্বল আইনের কারণে পরিবেশ বিনষ্টকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ ছিল না। এখন খসড়া পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালায় অনিয়মের ফাঁকফোকর বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংশোধিত বিধিমালায় বলা হয়েছে, সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো উদ্যোক্তা পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের কাজ শুরু করলে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রকল্পের কাজ বন্ধের পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।
সূত্র জানায়, নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত হলে পরিবেশ দূষণ অনেকাংশেই কমে আসবে। একই সাথে বিতর্কিত ও পরিবেশ বিনষ্টকারী উন্নয়ন প্রকল্প নেয়াও বন্ধ হবে। তাছাড়া পরিবেশ দূষণের দায়ে ক্ষতিপূরণ আদায়েও কঠোর অবস্থান নিচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর। খসড়া বিধিতে বলা হয়েছে, দায়ি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হলে মোট জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করেই কেবল পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে মামলা করতে পারবে উদ্যোক্তা। ২৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ না করে মামলা করতে গেলে সে মামলা নেয়া হবে না। বর্তমানে একজন উদ্যোক্তাকে জরিমানা করলে কোনো অর্থ পরিশোধ না করেই ওই উদ্যোক্তা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে মামলা করতে পারে। নতুন বিধিতে সে সুযোগ থাকছে না।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল হক জানান, খসড়া বিধিমালা চূড়ান্ত হলে পরিবেশ ছাড়পত্র পাওয়ার আগেই শিল্প-কারখানা ও প্রকল্পের কাজ শুরু করার সুযোগ থাকবে না। সংশোধিত বিধিমালা অনুমোদন পেলে পরিবেশ ছাড়পত্র নিতে হবে আগে। তারপর প্রকল্পের কাজ শুরু করতে হবে। মূলত কোনো শিল্প-কারখানা ও প্রকল্পের জন্য স্থান উপযুক্ত কিনা তা ইআইএ প্রতিবেদন পাওয়ার আগ পর্যন্ত বোঝার সুযোগ থাকে না।
< Prev | Next > |
---|