riceস্টাফ রিপোর্টার: বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। কিছুদিন ধরে চালের অব্যাহত দর বৃদ্ধি ও ঘাটতির শঙ্কার মধ্যে শুল্ক কমানোয় বিপুল পরিমাণে শুরু হয়েছে আমদানি শুরু হওয়ায় দাম কমছে। চলতি জুলাই মাসের প্রথম চার দিনেই ৬০ হাজার মেট্টিক টন চাল আমদানি হয়েছে, যা গেল অর্থবছরের পুরো সময়ের আমদানির প্রায় অর্ধেক।

বৃহস্পতিবার ঢাকার পাইকারি বাজারে দেশি চালের দাম কেজিতে এক থেকে দেড় টাকা কমেছে। আমদানি করা চালে কমেছে দুই থেকে আড়াই টাকা। তবে খুচরা বাজারে এখনও চালের দাম কমার প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যদিও টিসিবির সর্বশেষ বাজার দর-এ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকায় সরু চালে কেজিপ্রতি এক থেকে দুই এবং মোটা চালের দুই থেকে তিন টাকার কমার কথা বলা হয়েছে।

ঢাকায় চালের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বাদামতলী-বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলছেন, সরকার শুল্ক কমানোয় আমদানি বাড়ায় চালের দাম কমতে শুরু করেছে।

সারা দেশে চাল সরবরাহের জন্য পরিচিত দিনাজপুরেও চালের দাম কমেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলছেন, চালের দাম আরও কমবে। যে সব মিল মালিক ও আড়তদার বাজারে চাল না ছেড়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছিল তাদের ‘কপালে হাত’ পড়বে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের চার দিনেই (১ জুলাই থেকে ৪ জুলাই) প্রায় ৬০ হাজার মেট্টিক টন চাল আমদানি হয়েছে।

এরমধ্যে ৪ জুলাই বুধবারই আমদানি হয়েছে ৫৯ হাজার টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সব মিলিয়ে এক লাখ ৩৩ হাজার মেট্টিক টন চাল আমদানি হয়েছিল। এখন পর্যন্ত যে চাল আমদানি হয়েছে তার পুরোটাই বেসরকারি পর্যায়ে। সরকারি পর্যায়ে আমদানির কোনো চাল এখনও দেশে পৌঁছেনি। চালের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে আমদানি বাড়াতে ঈদের আগে বিদ্যমান শুল্কহার ২৮ শতাংশ থেকে এক লাফে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয় সরকার।

ঈদের ছুটির পর মূলত ১ জুলাই থেকে ১০ শতাংশ শুল্কে চাল আমদানি করছে ব্যবসায়ীরা। বাবুবাজারের ভূঁইয়া রাইস’র মালিক মনির হোসেন বলেন, প্রতিদিন ভারত থেকে প্রচুর চাল দেশে আসছে। শুল্ক কমানোয় আমদানিকারকরা চাল আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছে। যার ফলে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মোটা চালের দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কমেছে। আর সরু চালের দাম কমেছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। গত বৃহস্পতিবার বাদামতলী-বাবুবাজার চালের আড়ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা, বিআর-২৮, পারিজা) ৪২ থেকে ৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে এই চাল ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৪৬ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। আর সরু চাল (মিনিকেট, নাজিরশাইল) বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৫৩ টাকায়। ঈদের আগে এই চাল ৫১ থেকে ৫৪ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

তবে রাজধানীর শেওড়াপাড়া ও হাতিরপুল বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারির প্রভাব এখনও খুচরা বাজারে পড়েনি। গত বৃহস্পতিবার এই দুই বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর সরু চালের কেজি ৫৭ থেকে ৬০ টাকা। শেওড়াপাড়া বাজারের চাল ব্যবসায়ী শ্যামল কুন্ডু বলেন, ঈদের আমেজ এখনও কাটেনি। লোকজন কম আসছে, বিক্রি কম। নতুন চাল আনিনিৃ।

বেশি দামে কেনা চাল তো আর কম দামে বেচে লস দিতে পারি না। তাই আগের দামেই বিক্রি করছি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের (এফপিএমইউ) খাদ্যশস্য পরিস্থিতি বিষয়ক সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪ জুলাই পর্যন্ত সরকারি গুদামগুলোতে ১ লাখ ৫৩ হাজার টন চাল মজুদ আছে। গত বছরের ৪ জুলাই এই মজুদের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৯০ হাজার টনের বেশি। চালের বর্তমান বাজার সম্পর্কে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, চালের দাম কমতে শুরু করেছে। কয়েক দিনের মধ্যে আরও কমবে। এক মাসের মধ্যে বাজার স্বাভাবিক হবে বলে আমরা আশা করছি। চাল সঙ্কটের আর কোনো শঙ্কা নেই দাবি করে তিনি বলেন, শুল্ক কমানোয় বেসরকারি পর্যায়ে প্রচুর চাল আমদানি হচ্ছে।

সরকারি পর্যায়ে আমদানির চালও কয়েক দিনের মধ্যে এসে যাবে। সব মিলিয়ে বাজারে চালের সরবরাহ আরও বাড়বে। দামও আরও কমবে। মন্ত্রী বলেন, হাওর অঞ্চলে বন্যায় ফসলহানিকে কাজে লাগিয়ে বেশি লাভের আশায় যে সব মিল মালিক ও আড়তদার বাজারে চাল না ছেড়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং আরও বাড়ানোর পাঁয়তারা করেছিল তাদের এখন মাথায় হাত।

পাইকারি চালের বাজারে এরইমধ্যে স্বস্তি ভাব ফিরে এসেছে জানিয়ে বাদামতলী-বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, ঈদের আগে যে আতঙ্ক ছিল সেটা আর নেই। ইতোমধ্যেই চালের দাম কমতে শুরু করেছে। বন্যা-ঝড়-বৃষ্টি না হলে চালের দাম আরও কমবে। এদিকে মজুদ তলানিতে নেমে আসার পর দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে চাল আমদানিতে মরিয়া হয়ে ওঠে সরকার।

ঈদের আগে ভিয়েতনাম থেকে দুই লাখ টন চাল আমদানির জন্য দরপত্র আহ্বান করে খাদ্য অধিদপ্তর। এরমধ্যে এক লাখ টন আমদানির জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিও করা হয়। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এই চাল দেশে আসবে বলে জানান খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বদরুল হাসান। এবার বোরো মৌসুমে আগাম বন্যায় সরকারি হিসাবেই হাওরে ছয় লাখ টনের মতো ধান নষ্ট হওয়ায় এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে (১০ টাকা কেজি দরের চাল) সাড়ে সাত লাখ টন চাল বিতরণ করায় সরকারি মজুদ কমে আসে।

বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য চালের দাম গত কয়েক মাস ধরে বাড়তে থাকায় কষ্টে আছে সাধারণ মানুষ। সরকারি হিসাবে গত এক বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। চালের দরের ঊর্ধ্বগতিতে নানা মহল থেকে আলোচনা উঠেছে। চালের বাজার সহনীয় করতে বিরোধীদলীয় নেতা থেকে শুরু করে সরকারি দলের সদস্যরাও সংসদে দাবি তুলেছেন।

চাল আমদানির শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়ে ঈদের আগে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন, শুল্ক কমানোয় চালের বাজার দর কেজিতে ৬ টাকা কমবে। সন্তোষজনক বাড়তি মজুদ থাকায় আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে চালের শুল্কহার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করেছিল সরকার। এর সঙ্গে রেগুলেটরি ডিউটি তিন শতাংশ যোগ হওয়ায় ব্যবসায়ীদের ২৮ শতাংশ শুল্ক গুণতে হত। ফলে গত দেড় বছর ধরে বেসরকারি পর্যায়েও চাল আমদানি প্রায় বন্ধ ছিল। সঙ্কট মোকাবেলায় ব্যবসায়ীদের চাল আমদানিতে বিনা মার্জিনে ঋণপত্র খোলার সুযোগও দিয়েছে সরকার।

সাম্প্রতিক