স্টাফ রিপোর্টার: আমদানি বেড়ে যাওয়ায় মোকাম ও পাইকারি বাজারে চালের দাম কমলেও খুচরায় এখনও তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। দোকানিরা ভারত থেকে আসা মোটা চাল কিছুটা কম দামে বিক্রি করলেও আগের মতোই চড়া দামেই স্বর্ণা, বিআর আটাশ ও মিনিকেট চাল বিক্রি করছেন।
শুক্রবার মহাখালী অন্তত তিনটি মুদি দোকান ঘুরে দেখা যায়, বিআর আটাশ ৫০/৫২ টাকা, বিআর ঊনত্রিশ ৫৪ টাকা, মিনিকেট ৫৮ টাকা, নাজিরশাইল ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। হাজী হায়দার আলী স্টোরের দোকানি জানান, বৃহস্পতিবার কচুক্ষেত থেকে নাজিরশাইল চালের বস্তা (৫০ কেজি) ২৭৩০ টাকায় কিনেছেন তিনি। মিনিকেট কিনেছেন ২৬৮০ টাকায়। সে কারণে প্রতি কেজি ৫৮ টাকায় মিনিকেট, ৫৪ টাকায় বিআর আটাশ ও বিআর ঊনত্রিশ চাল বিক্রি করছেন।
একই দিন উত্তর বাড্ডায় সাতারকুল রাইস এজেন্সির ব্যবস্থাপক বিপ্লব হোসেন জানান, গত এক সপ্তাহে মিল থেকে অন্তত ৭০ টাকা কমে মিনিকেট চালের বস্তা সংগ্রহ করতে পারছেন তারা। তার ভাষ্য, মোটা চালের বস্তায় দেড়শ’ টাকা, বিআর আটাশ ও নাজিরশাইল চাল বস্তায় ১০০ টাকা করে কমেছে। এখন মিনিকেটের বস্তা ২৬৩০ টাকা, বিআর আটাশ ২৪৫০ টাকা থেকে কমে ২৩৫০ টাকা, নাজিরশাইল ২৭৫০ টাকা থেকে কমে ২৬৫০ টাকা এবং মোটা চাল ২২০০ টাকা থেকে ২০৫০ টাকায় নেমেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি মিল থেকে শুক্রবারের চালান এসেছে জানিয়ে বিপ্লব বলেন, চাল আমদানির প্রভাব মিল পর্যায়েও পড়েছে। সে কারণেই সব ধরনের চালই কেজিতে ২/৩ টাকা কমেছে। অন্যদিকে মহাখালীর খুচরা চাল বিক্রেতা মানিক মিয়া দাবি করেন, কেবল ভারত থেকে আসা নূরজাহান স্বর্ণা (মোটা চাল) ছাড়া দেশি চালের দাম তেমন একটা কমেনি। খুচরায় এই চাল বিক্রি করছেন ৪৭ টাকা। বস্তা বিক্রি করছেন ২২০০ টাকা। মিনিকেটের বস্তা ২৭০০ টাকা, খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকা।
মহাখালীর পাইকারি বিক্রেতা মুরাদ জানান, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের আমদানিকারকদের কাছ থেকে ২০৫০ টাকায় ভারতীয় মোটা চাল সংগ্রহ করছেন তারা। বিআর আটাশ ২৩৫০ টাকা থেকে ২৪০০ টাকায় বস্তা, আর মিনিকেট ২৬৫০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা।
বৃহস্পতিবার বাদামতলী-বাবুবাজার চালের আড়ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা, বিআর-২৮, পারিজা) ৪২ থেকে ৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে এই চাল ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৪৬ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। আর সরু চাল (মিনিকেট, নাজিরশাইল) বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৫৩ টাকায়। ঈদের আগে এই চাল ৫১ থেকে ৫৪ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। মজুদ তলানীতে নেমে আসা এবং হাওরের পর উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যার পদধ্বনির পর সরকার চালের বাজার সহনীয় করতে তৎপর হয়ে ওঠে।
আমদানি বাড়াতে ঈদের আগে বিদ্যমান শুল্কহার ২৮ শতাংশ থেকে এক লাফে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয় সরকার। এরপর চলতি জুলাই মাসের প্রথম চার দিনেই ৬০ হাজার মেট্টিক টন চাল আমদানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের আমদানির প্রায় অর্ধেক। এখন পর্যন্ত যে চাল আমদানি হয়েছে তার পুরোটাই বেসরকারি পর্যায়ে।
সরকারি পর্যায়ে আমদানির কোনো চাল এখনও দেশে পৌঁছেনি। চালের দরের ঊর্ধ্বগতির জন্য অসাধু ব্যবসায়ীদেরই দায়ী করে আসছে সরকার। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলছেন, আমদানি সহজ হওয়ায় এখন ধীরে ধীরে কমে আসবে চালের দাম।
< Prev | Next > |
---|