স্টাফ রিপোর্টার: গাজীপুরে পোশাক কারখানার বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনাস্থলে আরও তিনটি লাশের সন্ধান পেয়েছেন উদ্ধারকারীরা; এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ জনে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান এ কথা জানান। এছাড়া তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন বলেও জানয় ফায়ার সার্ভিস ও জেলা প্রশাসন। গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুরের নয়াপাড়ায় ‘মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড’ নামে একটি কারখানার ডাইং সেকশনের বয়লায় বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলে চার তলা ভবনের একপাশের দোতলা পর্যন্ত ধসে পড়ে। ঘটনার পরপরই কারখানার লোকজন ও এলাকাবাসীর সহায়তায় উদ্ধার কাজ শুরু করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
কারখানার ভেতরের ধ্বংস্তূপ থেকে রাতে উদ্ধার করা হয় ছয়জনের লাশ। ৪৭ জনকে হাসপাতালে পাঠানোর পর মারা যান আরও তিন জন। আখতারুজ্জামান বলেন, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে কারখানার ভেতরে ধ্বংসস্তূপে আরও দুটি এবং ৬টার দিকে আরেকটি লাশের সন্ধান পাওয়া গেছে। আমাদের রেসকিউ টিম লাশগুলো উদ্ধারে কাজ করছে।
জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক মো. শাহিন মিয়া জানান, রাত ১টার পর বৃষ্টির জন্য উদ্ধার কাজ স্থগিত রাখা হয়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে আবার তল্লাশি শুরুর পর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এক যুবকের লাশ পাওয়া যায়।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর, সাভার ইপিজেড, জয়দেবপুর, কালিয়াকৈর ও টঙ্গী ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা এই উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছেন বলে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান জানান।
তিনি বলেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও কেউ হতাহত আছে কিনা তা খুঁজে দেখা যাচ্ছে। গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের পরিদর্শক আবদুল খালেক জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকালে ওই কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিস টানিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাশের কটন ক্লাব, ইসলাম নিটওয়্যার, আলিম ফ্যাশন লিমিটেড, ডেল্টা ফ্যাশন, মাস্কো লিমিটেডসহ ১০টি কারখানায় গতকাল মঙ্গলবার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঈদের ছুটির পর গতকাল মঙ্গলবার কারখানাটি খোলার কথা ছিল। তার আগে গত সোমবার দুপুরে কারখানার ডাইং ইউনিটের বয়লার সেকশনটি চালু করে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
ঘটনার সময় প্রায় অর্ধশত কর্মী সেখানে কাজ করছিলেন। শ্রমিকরা জানান, সন্ধ্যায় বিকট শব্দে বয়লার বিস্ফোরণের পর নিচতলা থেকে দোতলা পর্যন্ত একাংশের দেয়াল, দরজা, জানালা ও যন্ত্রাংশ উড়ে আশপাশে গিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাহমুদ হাসান জানান, নিহতদের মধ্যে নয়জনের পরিচয় জানতে পেরেছেন তারা। নয়জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। যাদের পরিচয় জানা গেছে তারা হলেন- বগুড়া জেলার সোনাতলা থানার নামাজখালী গ্রামের শাহার আলীর ছেলে মাহবুবুর রহমান (২৩), চট্টগ্রামের মিরসরাই থানার বামনসুন্দর গ্রামের মোকছেদ আহমেদের ছেলে আবদুস সালাম (৫৫), চাঁদপুর সদরের মদনা গ্রামের বাচ্চু ছৈয়ালের ছেলে গিয়াস উদ্দিন (৩০), মাগুরার হরিশপুর থানার গোবরা গ্রামের আইয়ুব আলী সরদারের ছেলে আল আমিন (৩০), রাজবাড়ী গোয়ালন্দ থানার বরাট বাজার এলাকার মনিন্দনাথের ছেলে বিপ্লব চন্দ্র শীল (৩৮), ব্রাহ্মবাড়িয়ার নাসির নগর থানার কু-া গ্রামের সাগর আলী মীরের ছেলে মজিবুর রহমান (৩৭) এবং মনসুর (৩০) ও আরশাদ হোসেন (৩৬) নামে দুজন। শেষ দুজনের পরিচয় জানা যায়নি। এছাড়া গাইবান্দা জেলার পলাশবাড়ি থানার মরিয়া গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে সোলেমান মিয়ার (৩০) লাশ রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আহতদের মধ্যে রুকন (২৫) ও কামরুল ইসলাম (৩২) নামে দুইজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকিরা গাজীপুরের শরীফ মেডিকেলে ও কোনাবাড়ি ক্লিনিকে ভর্তি রয়েছেন।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস ও গাজীপুর জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুয়ায়ী এখনও তিন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। এরা হলেন-ফেনী সদরের মাহমুদুল হকের ছেলে এরশাদুল হক, পটুয়াখালীর বাউফলের ইন্দ্রকোল এলাকার আবুল কাশেম ফরাজীর ছেলে মাসুদ রানা ও গাইবান্ধা সাঘাটার হেলেঞ্চ এলাকার মো. নজরুল ইসলাম। গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাহেনুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলের পাশে জেলা প্রশাসন গতকাল মঙ্গলবার একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছে। কন্ট্রোল রুমটি সাত দিন পর্যন্ত হতাহতদের বিষয়ে তথ্য আদান প্রদান করবে।
< Prev | Next > |
---|