স্টাফ রিপোর্টার: চট্টগ্রাম নগরী ও এর আশপাশে গড়ে ওঠা বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলো বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মানছে না। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে বেসরকারি ডিপোর কনটেইনারের চাপ বাড়ছে। অথচ চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমাতেই বেসরকারি ডিপোয় ৩৭ ধরনের ভোগ্যপণ্য খালাসের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই কাক্সিক্ষত সুফল পাচ্ছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পণ্যবাহী কনটেইনার বেসরকারি ডিপোয় খালাসের জন্য নেয়ার নিয়ম থাকলেও ডিপোর মালিকরা তা মানছেন। অনেক সময় পণ্যভর্তি ওসব কনটেইনার বন্দরের ইয়ার্ডেই দু-তিন সপ্তাহ পড়ে থাকে। তাতে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনারের জট তৈরি হওয়ার পাশাপাশি আমদানিকারকদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি মাশুল। বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০১৫ সাল থেকে আমদানিকৃত ৩৭টি ভোগ্যপণ্য ১৬টি বেসরকারি ডিপোর (আইসিডি) অধীনে খালাসের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বেসরকারি আইসিডি/ সিঅ্যান্ডএফ নীতিমালা অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দর থেকে ডিপোয় নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে স্থাপিত অধিকাংশ বেসরকারি ডিপোয় পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো নেই। ফলে নীতিমালাটির বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে বেসরকারি ডিপোর হাজার হাজার কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে পড়ে আছে। ওসব কনটেইনার খালাস না নেয়ায় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত কনটেইনারের চাপ বহন করতে হচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষকে। চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে ৩৬ হাজার ৩৫৭টি কনটেইনার রাখা যায়। কিন্তু বর্তমানে সেখানে তার চেয়ে অনেক বেশি কনটেইনার রয়েছে। অথচ সুষ্ঠুভাবে কনটেইনার পরিবহনের জন্য ধারণক্ষমতার প্রায় ৩০ শতাংশ জায়গা খালি রাখার নিয়ম রয়েছে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত কনটেইনার থাকায় পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বেসরকারি ডিপোগামী কনটেইনার খালাস নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার চিঠিও দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি পণ্য নির্ধারিত সময়ে খালাস করতে না পারায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর একাধিক আমদানিকারক অভিযোগও দাখিল করেছেন। এসব সমস্যার সাময়িক সমাধানে অতিসম্প্রতি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আমদানিকারকদের ওসব পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি খালাসের অনুমতি দেয়া হয়। ওই সুযোগ আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। ওই সময় সংশ্লিষ্ট ডিপোর সক্ষমতা অনুযায়ী কনটেইনার বণ্টনের পাশাপাশি কনটেইনার প্রাপ্যতা তদারকির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাশাপাশি ডিপোগুলোয় দুই থেকে তিন সপ্তাহ বিলম্বে পণ্য খালাসের ঘটনা বাড়তে থাকায় একই চালানের সব কনটেইনার বন্দর থেকে এক সাথে ডিপোয় স্থানান্তরেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সূত্র আরো জানায়, বন্দর ইয়ার্ডে বেসরকারি ডিপোগামী কনটেইনার রাখার জন্য নির্ধারিত জায়গা না থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে ওসব কনটেইনারের সংখ্যা বাড়ছে। গত জুনের শুরুর দিকে পণ্যভর্তি ওসব কনটেইনারের সংখ্যা ৪ হাজারের মতো থাকলেও জুলাইয়ের শুরুতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৬ হাজার ৮১৫টি। তারপর ক্রমেই চাপ বাড়তে থাকায় বন্দরের ধারণক্ষমতার দুই হাজার অতিরিক্ত কনটেইনারের স্তূপ তৈরি হয়। বাড়ছে আমদানিকারকদের পণ্য খালাসের চাপও।
এদিকে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বেসরকারি ডিপোগুলো যথাসময়ে পণ্য খালাস দিচ্ছে না। একটি চালানে একাধিক কনটেইনার থাকলে মাত্র একটি-দুটি করে কনটেইনার বন্দর থেকে খালাস করে। ফলে সব কনটেইনার বন্দর থেকে ডিপোয় যেতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যাচ্ছে। তাতে আমদানিকারকদের বাড়তি মাশুল গুনতে হচ্ছে। এ নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ করার পাশাপাশি আদায়কৃত বাড়তি মাশুল ফেরতের দাবিও জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে পণ্যভর্তি কনটেইনার বন্দর থেকে ছাড় না করার ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছে বেসরকারি ডিপোর মালিকপক্ষ। বিকডার সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খানের মতে, মূলত বন্দর-সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে এমন ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। কোনো কোনো ডিপোয় অতিরিক্ত কনটেইনারের চাপ তৈরি হয়। তা মোকাবেলা করতে না পারলে মাঝে মধ্যে কনটেইনার খালাসে ধীরগতি দেখা দেয়। এ বিষয়ে তদারকির পাশাপাশি সমন্বয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বয়ে একটি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। আশা করা যায় বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে বন্দর ব্যবহারকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয় করা গেলে এ ধরনের সংকট আর থাকবে না।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (পরিকল্পনা ও প্রশাসন) জাফর আলম জানান, বেসরকারি ডিপোগামী কনটেইনার বন্দরে পড়ে থাকার কারণে বন্দরের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ডিপোগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। একই সাথে ওসব ডিপোর যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামোগত সক্ষমতা বাড়ানোর জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বন্দর থেকে ওসব পণ্য সরাসরি খালাসের সুযোগ দেয়ায় চাপ কিছুটা কমেছে। পরবর্তীতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওসব পণ্য খালাস না হলে সংশ্লিষ্ট ডিপোর বিরুদ্ধে জরিমানাসহ কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
< Prev | Next > |
---|