স্টাফ রিপোর্টার: বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ তৎপরতার নির্দেশ রফতানি উন্নয়নে বিদেশে কর্মরত মিশনগুলো আশানুরূপ ফল দিচ্ছে না। ফলে বিদেশে দেশের অধিকাংশ মিশন রফতানি আয়ের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। মোট ৫৬ মিশনের মধ্যে গত অর্থবছরের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি ৩১ বাণিজ্যিক মিশনই। তার মধ্যে ৬ মিশনে সবচেয়ে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- প্যারিস, বার্লিন, মাদ্রিদ, জাকার্তা, হ্যানয় ও স্ককহোম। কিন্তু পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় রফতানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারেনি। ফলে সামগ্রিকভাবেই কমে গেছে রফতানি আয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রফতানি খাত গতানুগতিক দেশের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। সেজন্য নতুন নতুন দেশের দিকে ব্যবসায়িক পরিসর বাড়াতে মিশনগুলো ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করে থাকে। বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। কিন্তু বিদায়ী অর্থবছরে রফতানি আয় অর্জিত হয়েছে ৩ হাজার ৪৮৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। তার আগের অর্থবছরে যা ছিল ৩ হাজার ৪২৫ কোটি ৭১ লাখ ডলার। অর্থাৎ রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। রফতানির এই আয়ে বড় ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা বৈদেশিক মিশনগুলো। সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ৫৬টি মিশন রয়েছে। রফতানির ৯৭ শতাংশেরও বেশি আয় হয় ওসব মিশনের আওতায় থাকা অঞ্চলগুলো থেকে।
সূত্র জানায়, গত অর্থবছরের ৫৬ মিশন থেকে মোট রফতানি আয় হয়েছে প্রায় ৩৪৮৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, যা মোট আয়ের ৯৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। ওই ৫৬ মিশনের মধ্যে ২৫ মিশন রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে। আর ব্যর্থ হয়েছে ৩১ মিশন। তার মধ্যে ২৫ মিশনের আয় আগের বছরের আয়ের চেয়েও কম। সেগুলো হলো- দিল্লী, লন্ডন, ওয়াশিংটন, টোকিও, তেহরান, ক্যানবেরা, ব্রাসেলস, অটোয়া, ইয়াংগুন, দুবাই, জেনেভা, থিম্পু, আম্মান, মালে, মেক্সিকো সিটি, নাইরোব, ত্রিপোলি, দারুসসালাম, প্রিটোরিয়া, কুয়েত, ব্রাসেলিয়া, আঙ্কারা, মানামা, দোহা ও সিউল। তার মধ্যে বৃহৎ ও প্রচলিত বাজার হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন মিশনের গত অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৭৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার আয়ের। কিন্তু আয় হয়েছে ৫৮৯ কোটি ৫১ লাখ ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ কম। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ওই অঞ্চল থেকে আয় হয়েছিল ৬২৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অর্থাৎ এ বছর আয় কমেছে ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। একক বাজার হিসেবে আরেক বৃহৎ বাজার যুক্তরাজ্য। দেশটিতে থাকা লন্ডন মিশনের (আয়ারল্যান্ডসহ) গত অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৩১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের রফতানি। কিন্তু অর্জন হয়েছে ৩৭৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার। আর আগের অর্থবছরে একই সময়ে আয় হয়েছিল ৪০১ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ এই সময়ে আয় কমেছে ১৩ দশমিক ৫২ শতাংশ। কানাডার অটোয়া মিশনের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১০ দশমিক ১০ শতাংশ এবং আগের বছর থেকে ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ রফতানি কম হয়েছে। জাপানের টোকিও মিশনের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং আগের বছর থেকে ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ রফতানি কম হয়েছে। তবে ৬টি মিশন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলেও তাদের রফতানি আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি হয়েছে। সেগুলো হলোÑ প্যারিস, বার্লিন, হ্যানয়, মাদ্রিদ, জাকার্তা ও স্টকহোম। তার মধ্যে বড় বাজার স্পেনের মাদ্রিদ মিশনের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১০ দশমিক ২ শতাংশ কম হলেও আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি রফতানি হয়েছে। আর ফ্রান্সের প্যারিস মিশনের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২ দশমিক ৫২ শতাংশ কম হলেও আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি রফতানি হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রফতানি আয় করতে পারা ২৫ মিশন হলো- বেজিং, মস্কো, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, কায়রো, ভিয়েনা, এথেন্স, হংকং, বাগদাদ, রোম, বৈরুত, পোর্ট লুই, রাবাত, হেগ, মাস্কাট, ম্যানিলা, লিসবন, কোপেনহেগেন, রিয়াদ, কলম্বো, কাঠমান্ডু, ইসলামাবাদ, ব্যাংকক, তাসখন্দ ও ওয়ারশ। যদিও এসব মিশনগুলোর অধিকাংশই অপ্রচলিত ও ছোট বাজার। তাছাড়া বর্তমানে ৫৬ মিশনের মধ্যে ১৮ গুরুত্বপূর্ণ মিশনে কমার্শিয়াল উইং রয়েছে। সেগুলো থেকে অর্থবছরে রফতানি আয় হয়েছে ২৬৫০ কোটি ২৫ লাখ ডলার, যা মোট রফতানি আয়ের ৭৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। ওই ১৮ ইউংয়ের মধ্যে শুধুমাত্র ৪টি উইং তাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে। সেগুলো হলো- বার্লিন, বেজিং, মস্কো, কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুর। আর ব্যর্থ হওয়া ১৪ উইংয়ের মধ্যে ৬টির রফতানি আয় আগের বছরের এ সময়ের চেয়ে বেশি হয়েছে। সেগুলো হলো- প্যারিস, বার্লিন, মাদ্রিদ, জাকার্তা, হ্যানয় ও স্টকহোম। আর ১১ উইং লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করতে পারেনি, আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধিও করতে পারেনি। সেগুলো হলো ক্যানবেরা, ব্রাসেলস, অটোয়া, দিল্লী, তেহরান, টোকিও, ইয়াংগুন, জেনেভা, দুবাই, লন্ডন ও ওয়াশিংটন।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, মূলত বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে মিশনভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তবে সামগ্রিক বিবেচনায় দেশের রফতানির চিত্র আশাব্যঞ্জক বলা যায়। কিছু মিশন পিছিয়ে পড়লেও অনেক মিশন ভাল করছে। মিশনগুলোর কাজ হলো ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংযোগ করে দেয়া। বাকি কাজটা করতে হবে ব্যবসায়ীদের। দ্বিপক্ষীয় সংযোগ ঘটানোই মিশনগুলোর প্রধান ভূমিকার বিষয়।
< Prev | Next > |
---|