স্টাফ রিপোর্টার: এবার দেশে পাটের উৎপাদন রেকর্ড করার পথে। প্রতিটি মৌসুমে পাটচাষি সোনালী আঁশ নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে পাট উৎপাদনে দিনরাত পরিশ্রম করেন। পাটচাষিরা হারানো অতীত ঐতিহ্য ফেরানোর প্রত্যাশা করেন। গেল বছরের আগের দু’টি মৌসুমে অধিকাংশ চাষিকে লোকসান গুনতে হয়।
এখন পাটের সুদিন ফিরছে। যদিও জমি চাষ, বীজ, পরিচর্যা, কাটা, পচানো, আঁশ ছড়ানো, শুকানো ও বিক্রির জন্য পরিবহনসহ পাট উৎপাদনে বর্তমানে অনেক খরচ হয়। এমন পরিস্থিতিতে উপযুক্ত মূল্য না পেয়ে মাঝেমধ্যেই কৃষকদেও মধ্যে হতাশা বাসা বাঁধে। তবে এবার আশাতীত ফলনে মুখে হাসি ফুটেছে। আর মাঠের হাসি বাজারেও যেন অটুট থাকে সেই প্রত্যাশা চাষিদের। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সারাদেশে পাটের উৎপাদন এবার স্মরণকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড সৃষ্টির পথে। উপযোগী রোদ ও বৃষ্টিসহ সার্বিক আবহাওয়া ছিল পাট আবাদ ও উৎপাদনের অনুকুলে। মাঝে মধ্যে বৃষ্টি এবং মাঝেমধ্যে রোদ রেশনিং পদ্ধতিতে হলে পাটের জন্য হয় খুবই সহায়ক হয়। আবাদ মৌসুম জুড়ে তা পুরোমাত্রায় হয়েছে। তাছাড়া পাটপচনে পানিরও সমস্যা নেই এবারও। রংও ভালো হওয়ার আশা রয়েছে। তাছাড়া চাষিরা পাট আবাদ ও উৎপাদনে যেভাবে ঝুঁকছে তাতে সোনালী আঁশের স্বর্ণযুগ ফেরার হাতছানি দিচ্ছে।
গতবার আশাতীত ফলনে চাষিদের মুখে হাসি ফোটে। তারা দামও পান ভালো। মূলত পাট বাজার তোলার সময়ে তদারকির অভাবে মুনাফালোভী ফড়িয়া, দালাল ও আড়তদারদের দাপট বেড়ে যায়। ওসব ব্যাপারে নজরদারি না বাড়ানোর কারণেই আশাতীত ফলন হওয়ার পরও অনেক সময় চাষীদের লোকসান গুনতে হয়। চাষিদের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা ও বাজার বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে আগেভাগেই সংশ্লিষ্টরা তৎপর হলে সার্বিকভাবে মঙ্গলজনক। যদিও এখন বাজার বিশৃঙ্খলা কম, তবু বরাবরের মতো বাজার বিশৃঙ্খলায় মুনাফালোভী ফড়িয়া, দালাল ও আড়তদারদের দাপট অপ্রতিরোধ্য গতি বাড়লে স্বর্ণযুগ ফেরার স্বপ্নভঙ্গের আশঙ্কা সৃষ্টি হবে। তাই বিভিন্ন মহল থেকে সতর্ক করা হয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে।
সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ৭ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে আবাদ হয়েছে ৮ লাখ ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিরাট সম্ভাবনাময় ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম মাধ্যম কৃষির এই খাতটির দিকে সামগ্রিকভাবে নজর দেয়া জরুরি। অতীতের মতো নানা অজুহাতে সহজ সরল নিরীহ চাষিদের যাতে কোনভাবেই কেউ প্রতারিত করতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজন হলে এখন থেকেই সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মাঠে নামাতে হবে। মূলত সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব ও নানামুখী বিশৃঙ্খলার কারণেই পাটের বাজারে মুনাফালোভীদের বরাবরই দাপট চলে।
এদিকে পাটের আবাদ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ গোলাম মারুফ জানান, এবার পাটের সার্বিক অবস্থা খুবই ভালো। আশানুরূপ উৎপাদন প্রত্যাশা করছি। এখন পাট কাটার অপেক্ষায় রয়েছেন চাষিরা। মাঠে মাঠে বাতাসে পাট দুলছে। খুশীতে মন ভর উঠছে চাষিদের। গত মৌসুমে পাটের দাম মোটামুটি ভালো ছিল। মৌসুম শেষে দাম বেড়ে যায় আরো। সেজন্য চাষিরা পাট আবাদের দিকে ঝুকে পড়েন। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যশোর, ফরিদপুর ও মাদারীপুরসহ অনেক জেলায় বেশি আবাদ হয়েছে পাটের। আর পাটের রোগবালাই ছিল না বললেই চলে।
< Prev | Next > |
---|