tech-eduস্টাাফ রিপোর্টার: কর্মমুখী কারিগরি শিক্ষায় আশানুরূপ আগ্রহী হচ্ছে না মেয়েরা। যদিও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ ছেলেদেও সমান অথবা কিছুটা বেশি। কিন্তু টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সাধারণ শিক্ষার মতো কারিগরি শিক্ষায়ও ছেলে-মেয়ে সমতার প্রয়োজনীয়তার কথা লছেন বিশেষজ্ঞরা। অথচ গত কয়েক বছরে কারিগরি শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ না বেড়ে বরং কমেছে। সর্বশেষ শিক্ষাশুমারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালে কারিগরি শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিল ২৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। আর ২০১৬ সালে এসে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৯৫ শতাংশে। কর্মমুখী শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণের হার কমে যাওয়াকে টেকসই উন্নয়নের জন্য বাধা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় ৬ হাজার। তার মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান ২৮৮টি। সরকারিভাবে ছাত্রীদের জন্য ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খুলনায় ৪টি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট আছে। ছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য আরো ৩টি ইনস্টিটিউট ও প্রতিটি বিভাগীয় শহরে মেয়েদের জন্য একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৯ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। তার মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থী ২ লাখেরও কিছু বেশি। কারিগরি শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ সবচেয়ে কম গ্লাস ও সিরামিক বিষয়ে, মাত্র ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আর মেয়েদের অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। সেক্ষেত্রে মোট শিক্ষার্থীর ৩৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ মেয়ে। তার বাইরে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২১ দশমিক ১৯, গ্রাফিক আর্টস ইনস্টিটিউটে ৯ দশমিক ৯৩, মেডিকেল টেকনোলজিতে ৩১ দশমিক ৬০, টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটে ৭ দশমিক ৮১, টেক্সটাইল ভোকেশনালে ২৩ দশমিক ৮৮, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ২১ দশমিক ৫১, মেরিন টেকনোলজিতে ১১ দশমিক ৫৭ ও জরিপ শিক্ষায় ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে।

সূত্র জানায়, কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সম্প্রসারণে ২০১০ সাল থেকে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৬ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের কাজ সন্তোষজনক হওয়ায় বিশ্বব্যাংক নতুন করে ১০ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৯ সাল পর্যন্ত চলবে। বর্তমানে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় মোট ৮ লাখ ৭২ হাজার ৬৫৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ২ লাখ ৮ হাজার ৮৭০। জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে যে সুপারিশ, তাতে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর ‘ক্যারিয়ার অ্যাডভাইস ডেস্ক’ স্থাপন করা প্রয়োজন। এ ডেস্কের মাধ্যমে নারী শিক্ষার্থীরা কর্মসংস্থানের সুযোগ ও সম্ভাবনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। এতাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের জেন্ডার বাজেট রিপোর্টে বলেছে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ নারী। বিবেচনা করতে হবে যে, জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম শর্ত নারীর উন্নয়ন। সর্বক্ষেত্রে নারীর প্রতি সমতা নিশ্চিত ও বৈষম্য দূর করতে না পারলে কোনোভাবেই দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।
এদিকে পরিসংখ্যানগতভাবে কারিগরি শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিন দিন দক্ষ মানবসম্পদের চাহিদা বাড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে

কারিগরি শিক্ষা দেশের জনগোষ্ঠীকে মানবসম্পদে রূপান্তর করার সবচেয়ে সহজ উপায়। এ শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের নিচের দিকের মানুষগুলোকে ওপরে উঠিয়ে আনা হয়। কারিগরি শিক্ষা দারিদ্র্য হ্রাসেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারপরও এ শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণের হার কমতে থাকা মানে হলো অগ্রগতির ধারায় ছেদ পড়া। যদিও কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষায় মেয়েরা পিছিয়ে থাকার কারণ প্রথাগত শিক্ষা। এ ধারায় মেয়েদের অংশগ্রহণ কমার পেছনে আবাসন ও যাতায়াত সমস্যা একটি কারণ। সেজন্য শুধু শহরে নয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা। কেননা সক্ষমতার শিক্ষায় মেয়েদের এগিয়ে না আনলে তা টেকসই উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গেকারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অশোক কুমার বিশ্বাস জানান, সার্বিকভাবেই কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। বর্তমানে মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৩ শতাংশ কারিগরিতে পড়ছে। সরকারের লক্ষ্য হলো ২০২০ সালের মধ্যে দেশের মোট শিক্ষার্থীর ২০ শতাংশকে কারিগরি শিক্ষায় নিয়ে আসা। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সব মিলে আশা করা যায় ২০২০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী কারিগরিতে পড়বে। একই সাথে মেয়েদের সংখ্যাও বাড়বে।

সাম্প্রতিক