dudukস্টাফ রিপোর্টার: অর্থ পাচারকারীদের ধরতে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। খোঁজা হচ্ছে অর্থ পাচারে সহায়তাকারীদেরও। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের নামিদামি হোটেলগুলো নজরদারিতে আনা হচ্ছে। কারণ ওসব হোটেলে অবস্থান করেই ক্লায়েন্ট খুঁজে বেড়ায় বিদেশি ব্রোকার ও লবিস্টরা। এমন পরিস্থিতিতে দুদক চেয়ারম্যানের নির্দেশে অর্থ পাচারকারী ও তাদেও সহায়তাকারীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে ৭ সদস্যের একটি বিশেষ গোয়েন্দা টিম গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজধানীর যেসব হোটেলে অর্থ পাচার নিয়ে দেনদরবার চলে সেগুলো নজরদারির আওতায় আনা ছাড়াও মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে অর্থ পাচার এবং সহায়তাকারীদের ব্যাপারেও খোঁজ নিচ্ছে দুদক। দুদক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দুদকের কাছে বেশকিছু অভিযোগ এসেছে যে দেশের নামীদামি হোটেলে বসেই বিদেশী ব্যাংকের ব্রোকার ও এজেন্টরা এদেশ থেকে অর্থ পাচার সহায়তা করতে ব্যবসায়ি ও রাজনীতিবিদদেরও টার্গেট করছে। তাদেরকে দেয়া হয় বিদেশে ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। মূলত সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি নিয়ে সমালোচনার পরই দুদক এই পদক্ষেপ নিয়েছে। কারণ চলতি বছরের ২৯ জুন ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৬’ নামে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে তাতে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ তুলে ধরা হয়। ২০১৬ সালের শেষে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ বলা হয়েছে ৬৬ কোটি ৭৫ লাখ সুইস ফ্রাঁ। প্রতি ফ্রাঁ ৮৪ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় তার পরিমাণ ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। যেখানে ২০১৫ সালে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৮ শতাংশ। দুর্নীতির অর্থই পাচার হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে গত মে মাসে প্রকাশিত ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদনেও বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের ভয়াবহ তথ্য তুলে ধরা হয়। জিএফআইয়ের তথ্যমতে, ২০১৪ সালে এদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

সূত্র জানায়, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে ওভার ইনভয়েসিং এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমেই বেশিরভাগ অর্থ পাচার হচ্ছে। যাকে ট্রেড বেজড লন্ডারিং বলা হচ্ছে। তাছাড়া হুন্ডি এবং আকাশপথেও অর্থ পাচার হচ্ছে। দেশের বাইরে এভাবে অর্থ পাচার ঠেকানো ও পাচারকারীদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনতে দেশের কোনো তদন্ত সংস্থাই কার্যকর কিছু করতে পারছে না। এমনকি দুদকও আইনি অক্ষমতায় জোরালো কিছু করতে পারছে না। ২০১৫ সালে মানি লন্ডারিং আইন সংশোধন করে দুদককে শুধুমাত্র ঘুষ ও দুর্নীতির টাকা লন্ডারিংয়ের তদন্তের এখতিয়ার দেয়া হয়। আর ট্রেড বেজড অর্থ পাচারের তদন্তের এখতিয়ার দেয়া হয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর)। তাছাড়া সংশোধিত আইনে পুলিশের অপরাধ বিভাগ সিআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে তদন্তের এখতিয়ার দেয়া হয়। তবে ওসব সংস্থাকে তদন্তের ক্ষমতা দেয়া হলেও সুইচ ব্যাংকসহ দেশের বাইরে অর্থ পাচারের বড় কোনো ঘটনা বা বড় কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। অন্যদিকে দুদকেরও রয়েছে আইনি সীমাবদ্ধতায়।

সূত্র আরো জানায়, সম্প্রতি দুদক হাইকোর্ট থেকে একটি রায় পেয়েছে। তার আলোকে দুদক অর্থ পাচারের যে কোনো ঘটনা বা যে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারবে। দুদক মনে করে, কালো টাকাও দুর্নীতির টাকা। ফলে ওই বিষয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যক্রম চলমান রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ জানান, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে সুইচ ব্যাংকের কিছু লোক ঢাকায় এসে বড় বড় হোটেলে অবস্থান করে। তারা সুইচ ব্যাংকে অর্থ রাখার জন্য বাংলাদেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিসহ ক্লায়েন্ট খুঁজে বের করে। আমাদের গোয়েন্দা টিম তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ঘটনার সত্যতা নিরূপণ করে কমিশনে রিপোর্ট দেবে।’

সাম্প্রতিক