স্টাফ রিপোর্টার: পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির ১৩২ কেভির (কিলোভোল্ট) দুইটি সঞ্চালন লাইন এবং ১৬টি ওভারলোডেড গ্রিড উপকেন্দ্রের কারণে গ্রামীণ অনেক এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো লোডশেডিং কমাতে পারছে না। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) গ্রামীণ এলাকায় আবাসিক গ্রাহকদের অপেক্ষাকৃত বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহের চেষ্টা থাকলেও সফল হতে পারছে না। কারণ সংস্থাটির প্রায় ১৫ হাজার ট্রান্সফরমার ওভারলোডেড থাকায় বাধ্য হয়েই নিয়ন্ত্রিতভাবেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে। বর্তমানে শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত ভালো থাকলেও গ্রামের প্রকৃত পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। যদিও সরকার গ্রামে লোডশেডিং কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে একই উৎপাদন বজায় রেখে গ্রামে লোডশেডিং কমানোর বড় সুযোগ হচ্ছে ঈদের ছুটির সময়। কিন্তু বিদ্যুৎ বিতরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ওভারলোডেড উপকেন্দ্রগুলো। কিন্তু বারবার তাগাদা দেয়ার পরও ওই উপকেন্দ্রগুলো হালনাগাদ (আপগ্রেড) করা হচ্ছে না। আর দ্রুত সেগুলোর আপগ্রেডেশন না হলে গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানো তো দূরের কথা, কয়েকদিন পর চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমেই বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোই অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ময়মনসিংহ অঞ্চলের জয়দেবপুর ও কিশোরগঞ্জ উপকেন্দ্র দুটি ওভারলোডেড। জয়দেবপুর উপকেন্দ্রের জিটি-২ ট্রান্সফরমারের ইনকামিং ব্রেকারের ক্ষমতা দুই হাজার অ্যাম্পিয়ার থেকে আড়াই হাজার অ্যাম্পিয়ারে উন্নীত করা হলেও অতিরিক্ত মাত্র ১৫ মেগাওয়াট লোড নেওয়া সম্ভব। চট্টগ্রামের বারো আউলিয়া উপকেন্দ্রের ট্রান্সফরমারটি পরিবর্তন করতে হবে। ঢাকা জোনের পলাশ উপকেন্দ্রটি দ্রুত আপগ্রেড করা হলে পার্শ্ববর্তী এ কে খান অর্থনৈতিক অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব। ঢাকার অন্য ৩টি ওভারলোডেড উপকেন্দ্র হলো- সাভার, ভুলতা ও কবিরপুর। কবিরপুরে একটি নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হলেও সংশ্লিষ্ট অন্য যন্ত্রাংশের সক্ষমতা বৃদ্ধি না করায় প্রয়োজনীয় লোড নেয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া ওই উপকেন্দ্রের অন্য দুইটি ট্রান্সফরমারও পরিবর্তন করা জরুরি। যশোর জোনের ফরিদপুর, চুয়াডাঙ্গা ও সাতক্ষীরা উপকেন্দ্র ওভারলোডেড। খুলনা জোনের বাগেরহাট, রাজশাহী জোনের সিরাজগঞ্জ ও রংপুর জোনের পূর্ব সাদিপুর উপকেন্দ্র আপগ্রেড করতে হবে। পূর্ব সাদিপুর উপকেন্দ্রের ২০ এমভিএর ট্রান্সফরমারটি অনেক পুরনো। ওই ট্রান্সফরমার থেকে ১২ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায় না। সিলেট জোনের আশুগঞ্জ উপকেন্দ্রে দুইটি ৫০-৭৫ এমভিএ পাওয়ার ট্রান্সফরমার চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যে স্থাপন করার কথা থাকলেও এখনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। তাছাড়া সিলেট অঞ্চলের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমারগাঁও উপকেন্দ্রের সক্ষমতাও পর্যাপ্ত নয়।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি আরইবি বিদ্যুৎ বিভাগে ওভারলোডেড উপকেন্দ্রগুলো বিষয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। তাতে দেখা যায়, ঢাকা জোনে ৪টি, যশোর ও সিলেটে ৩টি, ময়মনসিংহ অঞ্চলে ২টি এবং চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুরে একটি করে ওভারলোডেড উপকেন্দ্র রয়েছে। অন্যদিকে পিজিসিবির ১৩২ কেভির ওভারলোডেড লাইন দুইটি হলো- আশুগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ এবং ভেড়ামারা-যশোর-নোয়াপাড়া-খুলনা লাইন।
সূত্র জানায়, বর্তমানে আরইবির সর্বোচ্চ চাহিদা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট। সংস্থাটি গড়ে সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বরাদ্দ পায়। ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে প্রায় দুই কোটি গ্রাহকের কাছে ওই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। সমিতিগুলো পিজিসিবির ৮১টি গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ গ্রহণ করে। তার মধ্যে ১৬টি উপকেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে ওভারলোডেড। ফলে ওসব উপকেন্দ্র দিয়ে চাহিদা অনুসারে লোড নেয়া সম্ভব হয় না।
সূত্র আরো জানায়, সারাদেশে গত এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ হাজার ৮৭১টি ট্রান্সফরমার ওভারলোডেড অবস্থায় ছিলো। তার মধ্যে আরইবির আওতাধীন এলাকাগুলোতেই ছিল ১৪ হাজার ৭০৫টি। ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিতরণ করায় ও রক্ষণাবেক্ষণ ত্রুটির কারণে ওই ট্রান্সফরমারগুলো ওভারলোডেড অবস্থায় রয়েছে। সেগুলো পুড়ে যাওয়া বা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। আর গ্রামীণ এলাকায় একেকটি ট্রান্সফরমার নষ্ট হলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ফের বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হতে ১২ ঘণ্টা থেকে ৩ দিনেরও বেশি সময়ও লাগে।
এ প্রসঙ্গে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম আল-বেরুনী জানান, সঞ্চালন লাইন ও উপকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চলছে। আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
< Prev | Next > |
---|