স্টাফ রিপোর্টার: সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জঙ্গিনেতা মুফতি আবদুল হান্নানের সহযোগী দেলোয়ার হোসেন রিপনের সঙ্গে শেষ দেখা করেছেন বাবা-মা ও স্বজনেরা। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত তিন জঙ্গির মধ্যে রিপনকে রাখা হয়েছে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে।
মঙ্গলবার দুপুরের পরে কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে সেখানে এসে সাক্ষাৎ করে যান তার বাবা আ. ইউসুফ, মা আজিজুন্নেছা, ভাই নাজমুল ইসলাম ও তার স্ত্রী। সাক্ষাৎকালে রিপন তার বাবা-মা ও ভাইকে জড়িয়ে কান্নাকাটি করেন বলে জানিয়েছে কারাসূত্র।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ছগির মিয়া জানান, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হয়েছে জেনে তারা শেষবারের মতো সাক্ষাৎ করে যান।
তিনি জানান, রাষ্ট্রপতির প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ সংক্রান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি গতকাল মঙ্গলবার সকালে কারাগারে পৌঁছে। এরপর তা রিপনকে পড়ে শোনানো হয়। এর মধ্য দিয়ে ফাঁসি কার্যকরের আগে সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর তার স্বজনেরা শেষ সাক্ষাৎ করে গেছেন। তবে ফাঁসি কখন বা কোনদিন কার্যকর হবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু না বলে জেল সুপার জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। এ ছাড়া ফাঁসি কার্যকরের জন্য জল্লাদকে অন্য কারাগার থেকে আনতে হবে না- এমনটিও ইঙ্গিত দেন তিনি। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ছগির মিয়া জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তারা রিপনের প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি নাকচ করার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি হাতে পান।
তিনি বলেন, চিঠি পাওয়ার পর আমরা আসামিকে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার খবর জানিয়েছি। দ- কার্যকরে আমরা প্রস্তুত আছি। উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত ও সব প্রক্রিয়া শেষ হলেই ফাঁসি কার্যকর করা হবে। ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তিনজনকে হত্যার মামলায় মৃত্যুদ-ের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ায় অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কৃপা প্রার্থনাই ছিল এই জঙ্গির প্রাণ বাঁচানোর শেষ সুযোগ।
এ মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত অপর দুই আসামি মুফতি আবদুল হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলের প্রাণভিক্ষার আবেদনও নাকচ হয়ে গেছে। গত সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাদের চিঠি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছানোর পর গতকাল মঙ্গলবার হান্নান ও বিপুলের পরিবারের সদস্যদের দেখা করতে ডেকেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
রিপনের প্রাণভিক্ষার আবেদনের সিদ্ধান্ত জানার আগেই গত রোববার রিপনের ১২ জন আত্মীয় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে দেখা করেন। নিয়ম অনুযায়ী, দ- কার্যকরের আগে আবারও স্বজনদের দেখা করতে দেওয়া হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত রোববার সাংবাদিকদের জানান, প্রাণভিক্ষার আবেদন নামঞ্জুর হওয়ায় তিন জঙ্গির ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। কারাবিধি অনুযায়ীই আদালতের রায় বাস্তবায়ন করা হবে।
সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজার প্রাঙ্গণে ২০০৪ সালের ২১ মে ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী গ্রেনেড হামলার মুখে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই পুলিশের এএসআই কামাল উদ্দিন নিহত হন। এছাড়া পুলিশ কনস্টেবল রুবেল আহমেদ ও হাবিল মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি মারা যান হাসপাতালে।
< Prev | Next > |
---|