স্টাফ রিপোর্টার: মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবার অনুপ্রবেশ যেন কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। এর প্রতিকার চেয়ে মিয়ানমারকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হলেও তাদেও পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
অতিসম্প্রতি কক্সবাজারের টেকনাফে পৃথক অভিযান চালিয়ে একই দিনে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে বিজিবি। এ সময় গুলিবিদ্ধ একজন সহ মিয়ানমারের ৩ ইয়াবা ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়।
এছাড়া গত বছরের ১৭ জুন মিয়ানমার থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আসা মাছ ধরার দুটি ট্রলার থেকে ২৭ লাখ ৫০ হাজার ইয়াবা জব্দ করে র্যাব। এটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ধরা পড়া ইয়াবার সবচেয়ে বড় চালান। সে সময় আলী আহম্মদ ও হামিদ উল্লাহ নামের দুই ইয়াবা ডিলার ধরা পড়েছিল। তবে এভাবে অভিযান চালিয়ে ইয়াবা উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করা হলেও ইয়াবা পাচার বন্ধ হচ্ছে না। মিয়ানমারের ইয়াবা ছড়িয়ে যাচ্ছে সারা দেশে। নেশার খপ্পরে পড়ছে দেশের সম্ভাবনাময় যুবসমাজ।
মাদক ও অপরাধ নির্মূলবিষয়ক জাতিসংঘ কার্যালয়ের (ইউএনওডিসি) ২০১৫ সালের প্রতিবেদনে মিয়ানমারের ইয়াবা কারখানাগুলোকে শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মাদকের অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় কমিটিকে (সিসিডিএসি) ইয়াবা কারখানার তালিকা দিয়ে প্রতিকার চেয়েছে বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। তবে কারখানা বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেয়নি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।
একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে একটি তালিকায় মিয়ানমারকে ৪৫টি ইয়াবা কারখানার ব্যাপারে তথ্য দেয় বাংলাদেশ। তবে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, এসব কারখানার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে, পুলিশের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের কারণে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা তাদের রুট পরিবর্তন করছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে গোয়েন্দা সূত্র ইয়াবা পাচারের প্রধান কেন্দ্রগুলো শনাক্ত করেছে।
মিয়ানমারের প্রধান তিনটি কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা ঢুকছে। ওই তিন কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা ঢোকার স্থানগুলোকে ১৫টি রুটে ভাগ করেছেন গোয়েন্দারা। আগে ইয়াবার চালানগুলো শুধু টেকনাফ, উখিয়াসহ কক্সবাজারে আসত। এখন নৌপথে চট্টগ্রাম, মেঘনা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন জেলা এমনকি ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, বরিশাল ও খুলনায়ও চলে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়কপথে ইয়াবা পাচারের জন্য খ-িত পথ বেছে নেয় কারবারিরা। তারা রাখাইন রাজ্যের মংডু থেকে বাওয়ালি বাজার-শবেকদরের বাজার-ঘুনধুম-কক্সবাজার রুট এবং মংডু-বাওয়ালি বাজার-শবেকদরের বাজার-পালেতোয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি-বান্দরবান রুট ব্যবহার করছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত। তাদের সঙ্গে মংডু, বুথিডং এলাকায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী, সেনা কর্মকর্তা, কাস্টমস কর্মকর্তা ও পুলিশ বাহিনীর যোগাযোগ থাকায় শান রাজ্য থেকে ইয়াবা আসার সময় কোনো সমস্যা হয় না। বিভিন্ন চেক পয়েন্টে পাস ও পরিচয় নিশ্চিত হলে চালান ছেড়ে দেওয়া হয়। ইয়াবা বহনকারীদের বেশির ভাগও শান রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের সক্রিয় সদস্য।
এদিকে, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী সে দেশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে ইয়াবা পাচার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একমত হয়েছে বলে এর আগে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, ভারত ক্রমান্বয়ে সীমান্ত এলাকায় থাকা ফেনসিডিলের কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছে। মিয়ানমারও রাজি হয়েছে ইয়াবা নিয়ন্ত্রণের জন্য। তিনি বলেন, আমরা কোনো মাদক তৈরি করি না। কিন্তু মাদকের ছোবল থেকে রেহাই পাচ্ছি না। মিয়ানমার ইয়াবা তৈরি করে। ভারত তৈরি করে ফেনসিডিল। দুই দেশকে আমরা অনুরোধ করেছি। মিয়ানমারের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং ভারতের সীমান্তরক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে মাদক পাচার রোধে আলোচনা হয়েছে।
< Prev | Next > |
---|