fakrul-bnpস্টাফ রিপোর্টার: বৃষ্টিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে দুর্নীতিকে দায়ী করলেন বিএনপির মহসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এর মূল কারণ দুর্নীতি জাতীয়করণ করা হয়েছে। এমনভাবে দুর্নীতি হচ্ছে, প্রজেক্টের নাম করে টাকা নেওয়া হয়, ওইসব প্রজেক্টে কোনো কাজ করা হয় না।

আরেকটি কারণ হচ্ছে, সিটিগুলোতে যে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয় ভবিষ্যৎ চিন্তা করে, জলাবদ্ধতাকে দূর করার জন্য যে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা দরকার, সেই মাস্টারপ্ল্যান তাদের নেই। সেকারণে জলাবদ্ধতা দূর করতে পারছে না। তবে প্রধান কারণ হচ্ছে দুর্নীতি।

শনিবার দুপুরে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিজের দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি একথা বলেন। এসময় ভারতের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণেই সরকার সুন্দরবনবিনাশী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব রামপালের বিষয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রত্যেকটা অনুষ্ঠানে বলেন রামপালের বিদ্যুৎ প্রকল্প সুন্দরবনকে ধ্বংস করবে।

উনি বলেছেন দূরে কোথাও করলে আমাদের আপত্তি থাকবে না। সরকার রামপালে কেন এই প্রকল্প করতে চাচ্ছে? এখানে বিশেষ কোম্পানির প্রতি তাদের (সরকার) যে দায়বদ্ধতা যেটাকে ভারত থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। এই দায়বদ্ধতার কারণেই তারা এটার প্রতি জোর দিচ্ছে। জনগণের কাছে এই সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই বলেই তারা একটা পরিবেশবিনাশী ও বাংলাদেশের স্বার্থবিনাশী রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে। এখানে দেশের ক্ষতি করবে, না জনগণের ক্ষতি করবে তা চিন্তা করছে না। জরুরীভিত্তিতে হাওর অঞ্চলে মাছের মড়কের কারণ খুঁজে বের করারও তাগিদ দেন মির্জা ফখরুল।

হাওড় অঞ্চলে ব্যাপক বন্যার কারণে মাছের মড়ক কেন হচ্ছে, তা জরুরিভাবে মৎস্য মন্ত্রণালয়ের উচিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেওয়া। তা নাহলে সেটা মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হবে এবং জনস্বাস্থ্যের পক্ষেও ক্ষতিকর হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাওড় অঞ্চলের বন্যাকবলিত এলাকা আমি ঘুরে এসে আপনাদের বলেছি, ওই অঞ্চলটাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা প্রয়োজন। এই প্রয়োজনটা জনগণের জন্যই। যেহেতু আওয়ামী লীগের এখন জনগণ নেই, সেজন্য তারা এই বিষয়গুলোতে কখনই গুরুত্ব দেয় না। দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপিকে বাইরে রেখে একাদশ নির্বাচন করা ‘সহজ হবে না’ বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপিকে সর্ববৃহৎ দল হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, নিবন্ধন বাতিল নিয়ে উই আর নট কনসার্ন। বিএনপিকে বাদ দিয়ে যদি তারা নির্বাচন করতে চায় করুক না- এত সোজা না তো। বিএনপি ইজ দ্য লার্জেস্ট পলিটিক্যাল পার্টি ইন দিস কান্ট্রি এবং এই পলিটিক্যাল পার্টিকে বাদ দিয়ে একটা নির্বাচন তারা করেছে, যে নির্বাচনের কোনো লেজিটিমেসি তারা পায়নি।

প্রত্যেকে.. ভারতও পর্যন্ত বলে যে এটা লেজিটিমেট ইলেকশন হয়নি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বলতে চাই, আবারও যদি তারা বিএনপিকে বাদ দিয়ে সেই অবস্থা তৈরি করে, সরকার কখনই সারা বিশ্বের কেন, বাংলাদেশের মানুষের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, বিএনপি না থাকলেও নির্বাচন হবে। এর প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল ভয় না দেখিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তারা অন্তর্বর্তীকালীন সহায়ক সরকার চাইছে।

নির্বাচনে যাওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে ‘পরিবেশ তৈরির’ বিষয়টি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বরাবরই বলেছি, আমরা নির্বাচনমুখী দল, আমরা নির্বাচন করতে চাই। সেই নির্বাচন করার জন্য তো উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সচেতনভাবে সেই পদ্ধতিকে নষ্ট করেছে। তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করার জন্য ভিন্ন আঙ্গিকে আজকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। এখানে কখনই কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না।

নির্বাচন যখন হবে, ইট মাস্ট বি নিউট্রাল। এখানে সরকারকে নিউট্রাল হতে হবে, নির্বাচন কমিশনকেও নিউট্রাল রোল প্লে করতে হবে। প্রতিটি ভোটার যেন ভোট দিতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। একাদশ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে ‘সঠিক সময়ে’ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেওয়া হবে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

সহায়ক সরকারের রূপরেখা কি হবে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, মূল ফোকাস থাকবে কিভাবে একটি নির্বাচন করা যেতে পারে। নির্বাচনটা যেন দল নিরপেক্ষ হয়, সেই নির্বাচনে যেন জনগণ গিয়ে ভোট দিতে পারে, তার ভোট দেওয়ার অধিকারটা প্রয়োগ করতে পারে- এই বিষয়টা হবে প্রধান। সেটা নিঃসন্দেহে এদেশের জন্য, জনগনের জন্য ও তাদের অধিকার আদায়ের জন্য- সেই ধরনেরই একটা প্রস্তাব দেওয়া হবে।

সাম্প্রতিক