fakrul-bnpস্টাফ রিপোর্টার: আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার হাওরাঞ্চলকে ‘দুর্গত এলাকা’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

মঙ্গলবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি জানান। বিএনপির চেয়াপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে ১৫ এপ্রিল সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরাঞ্চল সফরে যান বিএনপি মহাসচিব। সেই সফরের অভিজ্ঞতা এবং হাওরাঞ্চলের বন্যাপীড়িত মানুষের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।

সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সাধারণত বৈশাখ মাসের মাঝামাঝিতে হাওরাঞ্চলে বন্যা হয়, কিন্তু এবছর নির্দিষ্ট সময়ের আগে বন্যা হওয়ায় কৃষকরা তাদের জীবন-জীবিকার একমাত্র সম্বল ফসল হারিয়ে এখন দিশেহারা।

তিনি বলেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি ও অতিবৃষ্টিতে সংস্কারহীন বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার হাওরাঞ্চলে লাখ লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে, এসব এলাকায় সাড়ে ৩ লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। যাতে প্রায় ১০ লাখ টন চাল উৎপাদন হতো।

হাওর এলাকার লাখ লাখ লোক মানবিক বিপর্যয়ে সম্মুখীন হয়েছেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে কৃষকের ঘরে সারা বছর ১৫/২০ মণ ধান/চাল মজুদ থাকতো, সেই কৃষক এখন তিন/চার কেজি চালের জন্য লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। ছোট ছোট বাচ্চারা খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সব ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। সরকারের ত্রাণ তৎপরতা লোক দেখানো ও অপ্রতুল অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, খোলা বাজারে চাল ও আটা বিক্রির কথা বলা হলেও তা দৃশ্যমান নয়। এ নিয়ে অনেক দুর্নীতি হচ্ছে বলেও শোনা যাচ্ছে। বর্তমান সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয় বলেই হাওরাঞ্চলের মানুষের দুর্দশায় তারা নির্বিকার।

পুরাতন কৃষিঋণ মওকুফের দাবি জানিয়ে ফখরুল বলেন, সাধারণত ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিওসহ মহাজনী ঋণ নিয়ে হাওরাঞ্চলের কৃষকরা তাদের ফসল উৎপাদন করে। এবার ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ঋণের চাপে এবং পরিবার পরিজনের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ দু:চিন্তায় তাদের মাথায় আকাশে ভেঙে পড়েছে। এরইমধ্যে নেত্রকোণায় একজন আত্মহত্যা করেছেন, আরেকজন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। হাওরাঞ্চলের কৃষকদের জন্য বেশ কিছু দাবিও তুলে ধরেন সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা, ২. প্রশাসনের উদ্যোগে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে কমিটি গঠন করে আগামি ফসল ওঠার আগ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে ত্রাণ তৎপরতা চালানো ৩. পুরাতন কৃষি ঋণ মওকুফ, ৪. সুদবিহীন নুতন কৃষিঋণ বিতরণ, ৫. কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক, তেল ও কৃষি উপকরণ বিতরণ, ৬. ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো আগামি ফাল্গুন মাসের আগেই পুন:নির্মাণ, ৭. আগামি বোরো ফসল ওঠার আগেই নদীগুলো ড্রেজিং এবং ৮. ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি প্রবাহের জন্য ভারতের সঙ্গে ন্যায্য চুক্তি।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরাঞ্চল সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রাসঙ্গিক বিষয়ের বাইরে গিয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সম্প্রতি বিভিন্ন ইসলামিক দলসহ হেফাজতকে কাছে টানার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ-এ ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান কী? জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কথা এক রকম, কাজ এক রকম- যেটা আওয়ামী লীগ খুব সুন্দর করে পারছে আর কী। পিটিয়ে-পুটিয়ে শেষে বলে, আস তোমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করি, ভালোবাসা করি- এগুলোর মধ্যে আমরা সহজে যাই না। আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি। হেফাজত ইসলাম তখন যে দাবিগুলো করেছিলো, তার মধ্যে কিছুকিছু দাবি আমরা যুক্তিসম্মত মনে করেছিলাম, সেগুলোকে সমর্থন দিয়েছিলাম। যে কাজটা ওঁরা এখন করলেন ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, হেলিকপ্টার দিয়ে উড়িয়ে নিয়ে আসলেন, মাওলানা শফি ও অন্যান্য নেতাদের পাশে বসিয়ে, সুন্দর করে খাবার-দাবার তুলে খাওয়ালেন-ভালো কথা।

হসপিটালিটি আমাদের বাংলাদেশের ঐতিহ্য। কিন্তু কী করলেন, অতীতে যেটা হয়ে গেছে, সেটাই ওঁরা করলেন। আমাদের আমলে তো দাওরায় হাদিসকে মাস্টার্স’র মযার্দা দিয়ে গেজেট নোটিফিকেশন হয়ে গিয়েছিলো-বলেন ফখরুল। তিনি বলেন, আমরা সব সময় ন্যায়ের সঙ্গে আছি। ন্যায়সম্মত দাবির প্রতি আছি এবং আমরা মনে করি যে, মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনকি করা দরকার। বর্তমান পৃথিবীর উপযোগী, তাদের যেন চাহিদা অনুযায়ী কাজে লাগাতে পারি, তারা যেন ওয়ার্কিং ফোর্স হিসেবে কাজ করতে পারে-আমরা সেইভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে গড়ে তুলতে চাই।

হেফাজতের সঙ্গে এই সম্পর্ক তৈরির ঘটনা কী দ্রুত নির্বাচনের আভাস দিচ্ছে? এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তেমনটি আমরা মনে করি না। কারণ, ক্ষমতার যাওয়ার জন্য তাদের তো আর ভোটের প্রয়োজন হয় না। ভোট ছাড়াই তো তারা ক্ষমতায় যেতে পারে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনের জন্য সব সময় প্রস্তুত।

প্রয়োজন কেবল নির্বাচনকালী নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। এ দু’টি বিষয় হলেই আমরা নির্বাচনে অংশ নেব। মির্জা ফখরুল বলেন, বিরোধী পক্ষকে বন্দি রেখে সরকার খালি মাঠে খেলার ষড়যন্ত্র করছে। জনগণ এটা হতে দেবে না। তিনি বলেন, সরকার মামলা-মোকদ্দমা করে বিএনপিকে মোকাবিলা করছে। ফখরুল বলেন, আবারও নতুন করে তাঁদের দলের নেতাকর্মীদের ওপর নেমে আসছে মিথ্যা মামলার খড়্গ, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, ভোটের আগে ইসলামি দলগুলোকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া আওয়ামী লীগের নতুন নীতি নয়।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালি, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আযাদ, কৃষিবিদ ও বিএনপির সহ কৃষি বিষয়ক সম্পাদক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল ফারুক প্রমুখ।

সাম্প্রতিক