স্টাফ রিপোর্টার: অর্থবছরের শেষ পর্যায়ে এসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত (এডিপি) বিদ্যুতের ১৫ প্রকল্পের বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে ওই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্টও রয়েছে। তবে অর্থবছরের শেষ হওয়ার দু’মাস আগে প্রকল্পের বরাদ্দ কমানোর উদ্যোগে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কারণ প্রায় দেড় মাস আগেই এডিপি সংশোধন করা হয়েছে। মূলত কৌশলে প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি বেশি দেখানোর লক্ষ্যেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যদিও বরাদ্দ কমিয়ে কাজের অগ্রগতি বেশি দেখানোর পরিকল্পনায় সামগ্রিকভাবে প্রকল্পের ক্ষতি হবে। কারণ নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে তার মেয়াদ বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রকল্প ব্যয়ও বেড়ে যাবে। পরিকল্পনা কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিদ্যুৎ খাতের ওই ১৫টি প্রকল্পের অনুকূলে সংশোধিত বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ১০৭ কোটি টাকা। সেখান থেকে ছেঁটে ফেলা হচ্ছে প্রায় ৭৪০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। তার মধ্যে কনস্ট্রাকশন অব শাহজীবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৩ সালে শুরু হয়ে আগামী জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। চলতি অর্থবছরের আরএডিপিতে বরাদ্দ দেয়া হয় ৮২৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। এখন ২০০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা কমিয়ে নতুন করে বরাদ্দ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে ৬২২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। তাছাড়া মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্টটি ২০১৪ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। ওই প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৫২৫ কোটি টাকা। কিন্তু সেখান থেকে ৫৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা কমিয়ে নতুন করে ৪৬৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর ল্যান্ড রিকুইজিশন অ্যান্ড ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফর ইমপ্লিমেনটেশন অব গজারিয়া ৩৫০ মেগাওয়াট কোল ফায়ার্ড থারমাল পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্পটি গত বছরের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা। কিন্তু অর্থবছরের শেষ দিকে এসে ১৭০ কোটি ৪৯ লাখ টাকার প্রায় পুরোটাই অর্থাৎ ১৭০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ছেঁটে ফেলার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পটি গতবছরের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার পর তার কার্যক্রম পিছিয়ে যায়। ওই কারণে টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে। কারণ গতবছরের ২৪ জুলাই ওই প্রকল্পের দরপত্র জমা দেয়ার সময় ছিল। কিন্তু জঙ্গি হামলার পর তা বাড়িয়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত করা হয়। সেখানেই প্রায় ৬ মাস কাজ হয়নি। তবে আগামী জুলাই মাসে হয়তো ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করা সম্ভব হবে। আর হলি আর্টিজানের মতো আর কোনো ঘটনা না ঘটলে প্রকল্পের অগ্রগতি নতুন করে বাধাগ্রস্ত নাও হতে পারে। তবে সঠিক সময়েই যে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হবে এমন গ্যারান্টি কেউ দিতে পারছে না। তাছাড়া কনস্ট্রাকশন অব শাহজীবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট প্রকল্পে সংশোধিত এডিপিতে টাকা বেশি ধরা হয়েছিল। পরে পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করে দেখা যায়, বাড়তি টাকা প্রয়োজন হবে না। তাই ফেরত দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন প্রায় শেষ হয়েছে। ফলে টাকা ফেরত দেয়া হলেও প্রকল্পের কোনো ক্ষতি হবে না।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস জানান, অনেক প্রকল্পের কাজ শুরু করতে দেরি হয়ে যায়। তাছাড়া কাজের দরপত্র হয়নি এরকম নানা কারণে বরাদ্দ ব্যয় করতে পারে না। সেজন্য এক প্রকল্পের টাকা কেটে বেশি বাস্তবায়ন করা প্রকল্পে দেয়া হয়েছে। সার্বিক বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্যই তা করা হয়েছে। তাতে মন্ত্রণালয়ের মোট বরাদ্দ তো কমছে না। তবে টাকা খরচ করতে না পারার কারণ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রতি মাসেই রিভিউ মিটিং করা হচ্ছে।
অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল জানান, যারা অর্থ বরাদ্দ নেয়, তারা খুবই জোরপূর্বক নেয়। বলা চলে চাপ সৃষ্টি করে টাকা নেয়। কিন্তু শেষ সময়ে এসে ব্যয় করতে পারে না। যা পরিকল্পনা শৃঙ্খলার পরিপন্থী কাজ। তাছাড়া এরকম ঘটনা প্রকল্প দীর্ঘায়িত হওয়ারও কারণ হতে পারে। আর সময় বাড়লে তো ব্যয়ও বেড়ে যেতে পারে। বিষয়গুলো সবার খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
< Prev | Next > |
---|