স্টাফ রিপোর্টার: বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু চিকিৎসা পণ্য বা মেডিকেল ডিভাইস অস্বাভাবিক চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে দীর্ঘদিন ধরে ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেট, ইউরিন ব্যাগ, স্কাল্প ভেইন সেট, ইনসুলিন সিরিঞ্জ, আইভি ক্যানোলা ও স্যালাইন ইনফিউশন সেটের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে পণ্যগুলো নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহ সঙ্কটের সুযোগ নিতে গিয়ে অনেকে চোরাই পথেও মেডিকেল ডিভাইস আমদানি করার অভিযোগ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসা খাতে ভোক্তাদের খরচও অনেক বেড়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে একটি দেশী প্রতিষ্ঠানকে বেশি সুবিধা দিতে গিয়ে বাজাওে সরবরাহ সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু উদাসীন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সূত্র মতে, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানির পর ৩৭ শতাংশ ট্যাক্স-ভ্যাট পরিশোধের পর একটি স্যালাইন সেটের দাম পড়ে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা। কিন্তু সরবরাহ সঙ্কটের কারণে বর্তমানে তার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১০-১১৫ টাকা। একইভাবে ৫ টাকা দামের একটি ইনসুলিন সিরিঞ্জ এখন বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকায়। ১৫ টাকার ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেটের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫-৮৫ টাকা। তাছাড়া ৮ টাকার আইভি ক্যানোলা ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমনকি ৩৫-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বিদেশী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন করা আইভি ক্যানোলা। বাজারে বর্তমানে আইভি ক্যানোলা, স্যালাইন সেট, ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেট ও ইউরিন ব্যাগের তীব্র সঙ্কট চলছে। এমন অবস্থায় দামের কোনো ঠিক নেই। যে যার মতো খুশি দামে ওসব পণ্য বিক্রি করছে।
সূত্র জানায়, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন নেয়ার পরও আইভি ক্যানোলা, ইনসুলিন সিরিঞ্জ, ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেট ও স্কাল্প ভেইন সেট আমদানিতে অনুমোদন মিলছে না। ফলে সরবরাহ সঙ্কটে চিকিৎসা পণ্যগুলোর দাম হয়ে উঠছে অস্বাভাবিক। অথচ ব্যবসায়িদের থেকে অগ্রিমম টাকা নেয়ার পরও আইভি ক্যানোলা সরবরাহ করছে না স্থানীয় মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জেএমআই সিরিঞ্জ অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইসেস লিমিটেড।
এদিকে চিকিৎসা পণ্যগুলোর অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির পেছনে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকেই দায়ি করছেন আমদানিকারকরা। তাদের বক্তব্য, স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে গিয়ে এ সরবরাহ সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় দাম চিকিৎসা পণ্যেও দাম বেড়েছে। অতীতে দেশে আইভি ক্যানোলা, ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেট, ইনসুলিন সিরিঞ্জ, স্কাল্প ভেইন সেট ও স্যালাইন সেট আমদানি করা হতো ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান, কোরিয়া ও চীন থেকে। বিগত ২০১৫ সালে মেডিকেল ডিভাইস রেজিস্ট্রেশন গাইডলাইন চালু করার পর থেকে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর পণ্যগুলোর আমদানি কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন নেয়ার পরও ওসব চিকিৎসা পণ্য আমদানিতে কোনো ছাড়পত্র দিচ্ছে না অধিদপ্তর। পাশাপাশি বাজারে প্রচলিত মেডিকেল ডিভাইসের গুণগত মান ও দাম দেখাশোনার দায়িত্বও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরেরই। কিন্তু সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে না। ফলে সরবরাহ সঙ্কটে বাজারে পণ্যগুলোর দাম বাড়ছে হুহু করে।
এ প্রসঙ্গে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক রুহুল আমিন জানান, মেডিকেল ডিভাইসের ক্ষেত্রে দেশী পণ্যগুলোর দাম ঠিক করে দেয়া রয়েছে। আর বিদেশী যেসব পণ্যের রেজিস্ট্রেশন রয়েছে সেগুলোর দাম ঠিক করে দেয়ার কথা। মেডিকেল ডিভাইস রেজিস্ট্রেশন গাইডলাইন তৈরির পর এখন পর্যন্ত ৪০০-৪৫০টি পণ্যের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের কারণে সেটিও বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
< Prev | Next > |
---|