bbbস্টাফ রিপোর্টার: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবনের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নতুন প্রজন্ম যেন মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলে না যায়।

রাজধানীর সেগুনবাগিচার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রজ¦লিত ‘শিখা চির-অম্লান’ গত শনিবার আগারগাঁওয়ে দশমকি ৯ একর জায়গার ওপর নির্মিত নতুন ভবনে স্থানান্তরের পর গতকাল রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী তা প্রজ¦লন করেন এবং ভবনের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন। ২০১১ সালের ৪ মে এই ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা স্মরণ করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, আমি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। আজ আমাকে উদ্বোধন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে আমি গর্বিত। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে এই জাদুঘরের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন জানতে পারে, কত বড় ত্যাগের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। সেই স্মৃতিচিহ্নগুলো তারা দেখবে, সেই স্মৃতিচিহ্নগুলো তারা উপলব্ধি করবে, অন্তরে ধারণ করবেৃ সেভাবে তাদের চরিত্র গঠন করবে। দেশপ্রেমে তারা উদ্বুদ্ধ হবে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আট ট্রাস্ট্রি সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, অভিনেতা আলী যাকের, স্থপতি ও কবি রবিউল হুসাইন, লেখক মফিদুল হক, অভিনেত্রী সারা যাকের, প্রকৌশলী জিয়াউদ্দিন তারিক আলী, বিএমএ’র সাবেক মহাসচিব ডা. সারওয়ার আলী এবং আক্কু চৌধুরী ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।


মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, তিন বাহিনীর প্রধান, কূটনীতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন এ অনুষ্ঠানে।

তাদের সবার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, এই স্মৃতিগুলো ধরে রাখা জাতীয় প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেন ভুলে না যায়। ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ সেগুনবাগিচায় একটি দোতলা ভবনে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর করার সময়ই আলোচনা হয়। ছোট্ট একটা বাড়ি কতটুকু আর স্মৃতি ধারণ করতে পারব? একটা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হওয়া দরকার; এই প্রস্তাবটা আমিই দিই। আমি বলি, একটা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর করেন। যেন অন্তত ইতিহাসটা মানুষ জানতে পারে। এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হওয়ার কথাও শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। এই ধরনের একটা প্রতিষ্ঠান করতে হলে অর্থের প্রয়োজনৃ সংগ্রহ করতে হবে অনেক জিনিস। সেই সময় মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে গেলেই বাধা আসে, মার খেতে হয়, অত্যাচারিত হতে হয়; এইরকম একটা অবস্থা। ওই পরিস্থিতিতেও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে নেওয়ায় ট্রাস্ট্রিদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমি বলেছিলাম, আমার সব রকমের সহযোগিতা আপনারা পাবেন। সেইভাবে ছোট্ট পরিসরে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে শেরেবাংলা নগরে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্য দুই একর জমি দেয়। সেখানেই গড়ে তোলা হয়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের নতুন এই জাদুঘর। এই জাদুঘরে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহার করা বিভিন্ন সামগ্রী, মুক্তিযুদ্ধের দলিল ও চিঠি মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার স্মৃতিস্মারক রয়েছে। চারটি গ্যালারিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মূল্যবোধের নানা দিক।

এ জাদুঘরের সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা রক্ষণাবেক্ষণ, সংরক্ষণ এবং পরিচালনা করাৃ এটা এমনি এমনি হবে না। এর জন্য যথেষ্ট অর্থের প্রয়োজন এবং যথেষ্ট সময়েরও প্রয়োজন।

এ কাজে বিত্তবান মুক্তিযোদ্ধাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক মুক্তিযোদ্ধা তো ব্যবসা-বাণিজ্য করে যথেষ্ট ধন সম্পদের মালিক হয়েছেন। প্রত্যেকে যদি একটু এগিয়ে আসেন, অনুদান দেন, ভালো একটা অ্যামাউন্ট ওখানে রেখে দেওয়া যায় ফিক্সড ডিপোজিট করে।
তিনি জাদুঘরের ব্যয় নির্বাহের জন্য নিজস্ব আয়ের পথ তৈরির ওপর জোর দেন এবং যখন যে সহযোগিতা প্রয়োজন তা করার প্রতিশ্রুতি দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের যে অবদান; তা ওই ক্ষুদ্র টাকার অঙ্ক দিয়ে বিচার হয় না। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে ছায়ানটের শিল্পীরা জাতীয় সংগীত গান। এরপর চার ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী জাদুঘর পরিদর্শন করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জিয়াউদ্দিন তারিক আলী, শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আ ক ম মোজাম্মেল হক। আসাদুজ্জামান নূর ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

সাম্প্রতিক