dmp-comস্টাফ রিপোর্টার: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে এবারের পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে ১১ হাজার পুলিশ পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া সাদা পোশাকেও টহল দেবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মঙ্গল শোভাযাত্রার সামনে পুলিশ ও পেছনে র‌্যাব এবং পুলিশের স্পেশাল ওয়েপন অ্যান্ড ট্যাকটিস (সোয়াট) বাহিনী থাকবে। পাশাপাশি শোভাযাত্রার দুই পাশে থাকবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বেষ্টনী। যে পথ দিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে যাওয়া হবে সেই পথে থাকবে ওয়াচ টাওয়ার।

মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে পহেলা বৈশাখের নিরাপত্তার বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

কমিশনার বলেন, কেউ মুখোশ পড়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না, এমনকি মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজক সংস্থা চারুকলা ইনস্টিটিউটের কোনো সদস্যও মুখোশ ব্যবহার করতে পারবে না। এ বিষয়ে আয়োজক সংস্থার সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে। মঙ্গল শোভাযাত্রার মাঝপথে কেউ ঢুকতে পারবে না, যারা শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে চায় তাদের সবাইকে চারুকলায় যেতে হবে বলেও জানানা তিনি। 

রমনা বটমূল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো এলাকা সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের জন্য সকল দর্শনার্থীকে নিরাপত্তার স্বার্থে তল্লাশির আওতায় আনা হবে। রমনা ও সোহরাওয়ার্দীতে প্রবেশের জন্য সবাইকে আর্চ ওয়ের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। সকল দর্শনার্থীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অনুগ্রহ করে কেউ অনুষ্ঠানস্থলে ব্যাগ নিয়ে আসবেন না। রমনার মূল অনুষ্ঠানে প্রবেশের সময় কোনো ধরনের ব্যাগ, ভ্যানিটি ব্যাগ, ব্যাকপ্যাক, ট্রলি ব্যাগ ও দিয়াশলাই না আনার অনুরোধ করেন তিনি। পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানসমূহে পকেটমার, ছিনতাই ও ইভটিজিং প্রতিরোধে পুলিশের আলাদা টিম কাজ করবে। তারা সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে বলেও জানান তিনি। ডিএমপি কমিশনার বলেন, ২০১৫ সালের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ও ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখে সকল উন্মুক্ত স্থানের বিকাল ৫টার মধ্যে সব অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ক্ষেত্রে এক ঘণ্টা বৃদ্ধি করে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করা হবে। তবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ইনডোরে অনুষ্ঠান করা যাবে। সন্ধ্যা ৬টার পর ঢাবি এলাকায় শিক্ষার্থী ও অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া কেউ ঢুকতে পারবে না বলেও জানান তিনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, নববর্ষ উদযাপনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের থ্রেট কিংবা হুমকি নেই। বর্তমানে বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়েও কোনো শংকা নেই। এদিকে, বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিতে চৈত্রের খরতাপককে উপেক্ষা করে কর্মব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। চারুকলা অনুষদের ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে চমৎকার সব শিল্পকর্ম। কেউ আঁকছেন ছবি, কেউ মুখোশ আবার কেউ ব্যস্তসময় পার করছেন হাঁড়ি-পাতিলের কারুকাজ নিয়ে। এসব তৈরি করা হচ্ছে মূলত বিক্রির জন্য। কারণ এসব বিক্রি করে উপার্জিত অর্থ দিয়েই করা হবে মঙ্গল শোভাযাত্রার কাজ। অনুষদের ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দিপা বলেন, প্রতিবছর চারুকলা ইনস্টিটিউট পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে থাকে। এ আয়োজন সফল ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য অনেক অর্থেরও প্রয়োজন হয়। এই অর্থ আমাদের অনুষদ ও শিক্ষার্থীদের থেকে আসে। বাইরের থেকে আমাদের জন্য কোনো অর্থ নেওয়া হয় না। তাই এসব চিত্র ও শিল্পকর্মাদি বিক্রি করে আমরা ফান্ড গঠন করি।

পহেলা বৈশাখের প্রথম প্রহরেই বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এই শোভাযাত্রা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো কর্তৃক 'বিশ্ব ঐতিহ্যর' স্বীকৃতি পেয়েছে। যে কারণে এবারের আয়োজনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন অনুষদের ১৮ ও ১৯তম ব্যাচের আয়োজক শিক্ষার্থীরা। তাদের আশা, এবারের আয়োজনে সর্বাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করবে। সরেজমিন চারুকলা অনুষদে গিয়ে দেখা যায়, শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে অর্ধশত শিক্ষার্থী ব্যস্ত আছেন বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম তৈরিতে। বিশালাকৃতির হাতি, পুতুল, কুমির, ঘোড়া, বিচিত্র মুখোশ, পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি ও নৌকা ইত্যাদি তৈরিতে করছেন শিক্ষার্থীরা। নির্দিষ্ট দিনের আগেই কাজ শেষ করতে দিন-রাত পরিশ্রম করছেন এসব শিক্ষার্থী। এবারের নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন কেমন তা দেখার জন্য পল্লবী থেকে পরিবারসহ ঘুরতে এসেছেন বেসরকারি কর্মকর্তা আবদুর রহিম। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে এবারেই প্রথম এখানে ঘুরতে আসা। এখানে এসে গ্রামের ছোট বেলার কথা মনে পড়ে। তা ছাড়া পরিবারকে নিয়ে ঘুরতে এসে সুন্দর এই আয়োজনকে দেখে খুবই ভালো লাগছে। আর নববর্ষের দিনও আসব বলে আশা করছি। শুধু আবদুর রহিম নন, বৈশাখী আয়োজন দেখার জন্য দেশ-বিদেশের অনেকেই সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন। বিদেশিরা ‘শুভ নববর্ষ’ বলে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর’ -স্লোগানকে সামনে রেখে উদযাপিত হবে এবারের বাংলা নববর্ষ। বৈশাখী উৎসবের প্রস্তুতি নিয়ে কথা হয় চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নিসার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতিবার চারুকলায় জাঁকজমকভাবে নববর্ষের আয়োজন করা হয়। এবারও তার বিকল্প নয়। ড. নিসার হোসেন জানান, ১৯৮৯ সালে চারুকলা অনুষদ থেকে প্রথম শোভাযাত্রা বের হয়। ২০১৬ সালে ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে। এজন্য এ বছরের আয়োজনকে তাঁরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। বাঙালি জাতির এই চেতনাকে ধারণ করে তরুণেরা জঙ্গিবাদ থেকে ফিরে আসবে বলে আশা করেন তিনি। এদিকে, নববর্ষ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় থাকবে বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান। তিনি বলেন, অনুষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাম্প্রতিক