dhk cityস্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) কেমিক্যাল পল্লী নির্মাণে দু’দফা প্রকল্পের বিস্তারিত পরিকল্পনা (ডিপিপি) তৈরি করেছে। আর গত ৮ বছরে কেমিক্যাল পল্লীর জন্য ঢাকার অদূরে কেরানিগঞ্জের দুটি স্থানে সম্ভাব্যতা যাচাই করে। কিন্তু নানা কারণে কেমিক্যাল পল্লী বাস্তবায়ন হচ্ছে না। মূলত ব্যবসায়ীদের অসম্মতিতে দীর্ঘায়িত হচ্ছে কেমিক্যাল পল্লী স্থাপন প্রকল্প। পাশাপাশি সরকারের উদাসীনতার কারণেও ঘনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকাকে রাসায়নিকের ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। ওসব রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম কবে নাগাদ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে সরানো হবে তাও কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারছে না। কেমিক্যাল ব্যবসায়ি ও শিল্প মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে রাজধানীর পুরান ঢাকায় দিনের পর দিন চলছে বিস্ফোরক রাসায়নিকের ব্যবসা। এর ফলে পুরান ঢাকায় কয়েক দফা অগ্নিকা-েরর ঘটনা ঘটেছে। আর দুর্ঘটনা হলেই রাসায়নিক কারখানা স্থানাস্তরের প্রসঙ্গটি সামনে আসে এবং কয়েক দিন পর তা থেমে যায়। সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল গোডাউন উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। এর প্রতিবাদে ব্যবসায়িরা অনির্দিষ্ট কালের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। পওে ডিএসসিসি উচ্ছেদ অভিযান সাময়িক স্থগিত করা হলে ব্যবসায়িরা আবারো দোকান চালু করে। তবে তাদের দাবি, কেমিক্যাল পল্লীর ব্যবস্থা না করে তাদের উচ্ছেদ করা যাবে না। অথচ রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরানোর জন্য কেমিক্যাল পল্লীর অবকাঠামো নির্মাণ এখনো শুরুই হয়নি। আর দীর্ঘদিন ধরেই এ অবস্থা চলছে। বিগত ২০১০ সালে নিমতলীতে রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকা-ে ব্যাপক প্রাণহানির পর ঝুঁকিপূর্ণ ওসব রাসায়নিক গুদাম সরাতে তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় ওই উদ্যোগ থেমে যায়।

সূত্র জানায়, বিগত ২০১১ সালে উদ্যোগ গ্রহণের পরও নানা কারণে কেমিক্যাল পল্লী তৈরির কাজ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। যদিও বিসিক ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি (ডিপিপি) করে। সে লক্ষ্যে কেরানিগঞ্জের সোনাকান্দা মৌজায় ২০ একর জমিতে কেমিক্যাল পল্লী নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। বিসিকের প্রথম ডিপিপি ছিল ১ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে। সাত তলাবিশিষ্ট ১৭টি সুপার স্ট্রাকচার ভবন তৈরি করে সেখানে কেমিক্যাল গুদাম ও দোকান সরানোর পরিকল্পনা ছিল। আর ওই প্রকল্পের ব্যয় ব্যবসায়িদের বহন করার কথা ছিল। সেজন্য গতবছরের মাঝামাঝি প্রকল্প নিয়ে ব্যবসায়িদের সাথে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা স্মারক সই হওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তাতে আপত্তি তোলে। কারণ তারা অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে রাজি নয়। বরং ব্যবসায়িরা প্লট দাবি করেন। সেই প্রেক্ষিতে বিসিকের ওই ডিপিপি বাতিল করে দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। পরে নতুন করে কেরানিগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগাঁও মৌজায় কেমিক্যাল পল্লী স্থাপনের সম্ভব্যতা যাচাই করা হয়। যা ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে। ঢাকা-দোহার সড়কের পাশে। এ প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করে চলতি মাসে শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন শিল্প মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই চূড়ান্ত করে শিগগিরই পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাবে। আর কমিশনের অনুমোদন হলে জমি অধিগ্রহণ শুরু হবে। নতুন এ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। যদিও প্রকল্পে আগের চেয়ে জমির পরিমাণ আড়াই গুণ বাড়িয়ে ৫০ একর করা হয়েছে। দক্ষিণ ব্রাহ্মণকির্তা এলাকার কেমিক্যাল পল্লীতে প্রায় ৩শ' প্লট বরাদ্দ দেয়া হবে। প্রতি প্লটের আয়তন হবে ৪ হাজার ৫শ' বর্গফুট ও ৬ হাজার বর্গফুট। বর্তমানে পরিকল্পনার কাজ সম্পন্ন করতে ব্যবসায়িদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। আর তথ্য পেলে যাচাই করে ব্যবসায়িদের সাথে সমঝোতা স্মারক সই করা হবে।

সূত্র আরো জানায়, কেমিক্যাল পল্লীর প্রথম ডিপিপির চার হাজার ইউনিটের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। তখন পুরান ঢাকা থেকে সব গুদাম ও দোকান সরানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এখন শুধুমাত্র গুদাম সরাতেই ৩শ' প্লট তৈরির পরিকল্পনা চলছে। বর্তমানে পুরান ঢাকায় এক হাজার ৭৯টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নিমতলী ট্র্যাজেডিতে হতাহতের ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র ও শিল্প মন্ত্রণালয় আবাসিক এলাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন ও কারখানা সরানোর নির্দেশ দেয়। তখনই বুড়িগঙ্গার ওপারে আলাদা কেমিক্যাল পল্লী স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১১ সালের জুনে বিসিক চেয়ারম্যানকে সভাপতি করে কেমিক্যাল পল্লীর জন্য জায়গা নির্ধারণে কমিটি করা হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিবকে সভাপতি করে টেকনিক্যাল কমিটিও গঠন করা হয়। অননুমোদিত কেমিক্যালের দোকান, গুদাম ও কারখানা অপসারণে কমিটির কার্যপরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি উচ্চ মাত্রার দাহ্য পদার্থ শনাক্ত করতে করা হয় ৩টি সাব-কমিটি। ২০১২ সালে জায়গা নির্ধারণ কমিটি চারটি জায়গার প্রস্তাব দিয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে। তারপর কয়েক বছর কেমিক্যাল পল্লী নির্মাণের বিষয়টি ঝুলে থাকে। এবার শিল্প মন্ত্রণালয় নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে।

এদিকে কেমিক্যাল ব্যবসায়িরা বলছেন, কেমিক্যাল পল্লী ছাড়া রাসায়নিক গুদাম স্থানাস্তর সম্ভব নয়। শুরুতে শিল্প মন্ত্রণালয় বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে বিস্ফোরক এ পদার্থ রাখার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তাতে আরো বেশি দুর্ঘটনার শিকারের আশঙ্কা থাকে। ওই কারণে আলাদা প্লট চাওয়া হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় প্লট তৈরি করে বরাদ্দ দিলে ব্যবসায়িরা দ্রুত অবকাঠামো নির্মাণ করে স্থাপনা স্থানান্তর করবে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না করেই সিটি করপোরেশন উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। কিন্তু ব্যবসায়িরা কোথায় যাবে। অথচ ব্যবসায়ীরা চায় দ্রুত গোডাউন স্থানাস্তর হোক। ইতিমধ্যে কিছু ব্যবসায়ি নিজ উদ্যোগে পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন বিভিন্ন স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন স্থানের চেয়ে নির্দিষ্ট একটি এলাকায় হলে ভালো হয়। সে রকম কোনো জায়গা এখনো তৈরি করতে পারেনি সরকার। তাছাড়া সব কেমিক্যাল ব্যবসায়িকে উচ্ছেদ করারও দরকার নেই। ক্ষতিকারক নির্ধারিত ২০টি কেমিক্যাল গুদাম ছাড়া অন্য সব কেমিক্যালের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরের তেমন প্রয়োজন নেই।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু জানান, কেমিক্যাল পল্লী স্থাপনে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আলোচনা করে কেমিক্যাল পল্লী স্থাপনের জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্রুতই কেমিক্যাল গুদাম ও কারখানা স্থানান্তর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হবে।

সাম্প্রতিক