নয়াদিল্লি : চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে তাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ‘বোয়িং ৭৭৭ আকাশ প্রদীপ’ পালাম বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছায়। সেখানে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর কথা থাকলেও প্রোটকল ভেঙ্গে স্বয়ং নরেন্দ্র মোদীই হাজির হন বিমানবন্দরে। যাকে বিরল সম্মাননা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই সফরে ঢাকা ও নয়াদিল্লির বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ ও আন্তরিক সম্পর্ক আরো বহুমাত্রিক রূপ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে শেখ হাসিনার সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৩০টির বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। বাণিজ্য, পরমাণু, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য, বিদ্যুত্, জ্বালানি, সংযোগ, বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসব চুক্তি সই হবে।
বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী যাবেন দেশটির রাষ্ট্রপতি ভবনে। তিনি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখাজির্র অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রপতি ভবনে অবস্থান করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর উপলক্ষে দিল্লি শহরকে সাজানো হয়েছে। শহরের বিভিন্ন সড়ক ও প্রান্তে উড়ছে দুই দেশের পতাকা।
প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি অনুযায়ী আজ সন্ধ্যায় বাংলাদেশ হাই কমিশনের এক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে সম্মাননাপ্রাপ্ত ভারতীয়রা এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া ভারতীয় সৈনিকদের পরিবারের সদস্যরা যোগ দেবেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক আলোচনা ও একান্ত বৈঠক হবে আগামীকাল শনিবার। নয়াদিল্লির অতিথি ভবন হায়দ্রাবাদ হাউসের ওই বৈঠকে সাত বছর ধরে ঝুলে থাকা অভিন্ন তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি সই হচ্ছে না বলে আগেই জানানো হয়েছে। তিস্তা চুক্তির ক্ষেত্রে মূল বাধা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতা। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মমতাকে রাজি করিয়ে সহসাই এই চুক্তি সম্পন্ন করার পথে অগ্রসর হবে মোদী সরকার।
দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ চুক্তি, বিদ্যুত্-জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, আন্তঃযোগাযোগ তথা কানেকটিভিটি, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, জনযোগাযোগ, গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, মাদক চোরাচালান ও মানব পাচাররোধ বেশি গুরুত্ব পাবে।
আলোচনার পর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ৩০টির বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পাশাপাশি দুই প্রধানমন্ত্রী বিরল-রাধিকাপুর রুটে মালামাল পরিবহনকারী রেল চলাচল, খুলনা-কলকাতা রুটে যাত্রীবাহী বাস ও রেল চলাচল এবং ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুত্ প্রকল্প থেকে বাংলাদেশে অতিরিক্ত ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ সরবরাহ উদ্বোধন করবেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ বাংলাদেশ সীমান্ত সংশ্লিষ্ট ভারতের রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীরা উপস্থিত থাকবেন।
দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর হিন্দী সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করবেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সেনা সদস্য শহীদ হয়েছেন তাদের মরণোত্তর মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা প্রদান করা হবে। নয়াদিল্লির মানেক শ সেন্টারে মুক্তিযুদ্ধে প্রাণোত্সর্গকারী ১৬৬১ জন ভারতীয় সেনা সদস্যের মধ্যে সাতজনের নিকটাত্মীয়ের হাতে প্রধানমন্ত্রী ‘মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা পদক’ ও সম্মাননাপত্র তুলে দিবেন। এই অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বক্তব্য রাখবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরে দ্বিপাক্ষিক সকল ইস্যুর মধ্যে নতুন সংযোজিত হয়েছে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা। দুই দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে পাঁচ বছর মেয়াদি একটি সমন্বিত পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা বিনিময় তথ্য বিনিময়, যৌথ মহড়া, দুর্যোগ মোকাবিলা, সক্ষমতা বৃদ্ধি, সরঞ্জাম সংগ্রহ, সামরিক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে চার থেকে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী রবিবার আজমির শরীফে যাবেন ও সেখানে মাজার জিয়ারত করবেন। এছাড়া ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্রধান সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। রবিবার রাতে রাষ্ট্রপতির দেওয়া রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অংশগ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার ব্যবসায়ীদের একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করবেন। এর আগে সকালে ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী এবং ওই বিকালে ঢাকায় ফিরে আসবেন।
< Prev | Next > |
---|