স্টাফ রিপোর্টার: সরকারের বিভিন্ন দফতরে পদ সৃজন করে তা পূরণে দীর্ঘসময় লাগায় প্রশাসনের ৩ লক্ষাধিক পদ শূন্য রয়েছে। মূলত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতার করণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আর বিপুল সংখ্যক পদ খালি থাকায় ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে সরকারের প্রশাসনিক কার্যক্রম। একই সাথে কমে যাচ্ছে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের গতিও। ফলে কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় দ্রুত সরকারি প্রশাসনের পদ পূরণে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। তবে সম্প্রতি সরকারি শূন্য পদ দ্রুত পূরণে সচিব সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের চিঠি দেয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রশাসনে জনপ্রশাসনের মোট অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১৭ লাখ ১০ হাজার ৭০৪টি। তার বিপরীতে কর্মরত আছেন ১৩ লাখ ৮২ হাজার ৩৯৩ জন। বাকি ৩ লাখ ২৮ হাজার ৩১১টি পদই খালি পড়ে রয়েছে। শূন পদগুলোর মধ্যে ৪৪ হাজার ৫৪৪টিই প্রথম শ্রেণীর, ৫৩ হাজার ১৮০টি দ্বিতীয় শ্রেণীর, ১ লাখ ৬০ হাজার ৫৩৯টি তৃতীয় শ্রেণীর এবং চতুর্থ শ্রেণীর পদ রয়েছে ৭০ হাজার ৪৮টি। আর বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ২২ লাখ ১৭ হাজার ৫৬৯ জন। সরকারের ৮টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগেই মোট ১ লাখ ৯৩ হাজারের বেশি পদ শূন্য রয়েছে। তার মধ্যে শূন্য পদের শীর্ষে অবস্থান রয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর অধীন বিভিন্ন দফতরের ৬৪ হাজার ১১০টি পদ শূন্য। তারপরই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ৩৭ হাজার ৮৫৫টি পদ শূন্য। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ২৬ হাজার ১১টি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১৬ হাজার একটি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে ১৩ হাজার ৪০২টি, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ১২ হাজার ৫৩৪টি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ১২ হাজার ৫২৪টি এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে ১০ হাজার ৮৪৮টি পদ শূন্য রয়েছে। বাকি ৪৮ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীন বিভিন্ন দফতর-অধিদফতরে পদ শূন্য আছে ১ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি।
সূত্র জানায়, প্রশাসনের কিছু পদ সব সময় খালি রাখা হয়। তাতেও বিপুলসংখ্যক পদ খালি থাকে। ফলে প্রশাসনিক কার্যক্রম নানাভাবে ব্যাহত হয়। বিশেষ করে মাঠপ্রশাসনের পদ শূন্য থাকায় সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে থাকে। সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি শূন্য পদ পূরণ না করায় শিক্ষিত বেকারদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের শূন্য পদগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে পূরণ করা জরুরি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতার জন্যই বেশিরভাগ পদ ফাঁকা পড়ে আছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদগুলোয় নিয়োগ দেয় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আর তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে মন্ত্রণালয় সরাসরি নিয়োগ দেয়। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন কোটায় নিয়োগ দেয়া হয় ৫৫ শতাংশ। আর মেধায় নিয়োগ দেয়া হয় মাত্র ৪৫ শতাংশ। তার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য (ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাতনি) ৩০, মহিলা ১০, জেলা ১০ ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী (উপজাতি) ৫। তাছাড়া ওসব কোটা পূরণ না হলে প্রতিবন্ধীর জন্য সেখানে ১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট চাকরির ক্ষেত্রে যদি ওসব প্রাধিকার কোটা পূরণ হয়ে যায় তাহলে মেধা তালিকা থেকেই প্রতিবন্ধীর কোটা পূরণ করা হয়। নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও একই কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মেধা তালিকা থেকে ৩০ শতাংশ এবং বাকি ৭০ শতাংশ পূরণ করা হয় কোটা থেকে। ওই কোটার মধ্যে শতাংশ হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা ৩০, মহিলা ১৫, আনসার ও ভিডিপি ১০, অনাথ ও প্রতিবন্ধী ১০ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫। মেধার চেয়ে কোটায় বেশি নিয়োগ দেয়ায় নানা ধরনের সমস্যা হয়। কারণ কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না যাওয়া পদগুলো শূন্য রাখতে হয়।
সূত্র আরো জানায়, কোটার কারণে প্রশাসনের হাজার হাজার পদ খালি রয়েছে। ২৮ থেকে ৩২তম ৫টি বিসিএসের ফল পর্যালোচনা করে দেখা যায় যোগ্য প্রার্থী না থাকায় বিভিন্ন কোটায় ৪ হাজার ২৮৭টি পদ শূন্য রাখতে হয়েছে। তার মধ্যে ২৮তম বিসিএসে ৮১৩টি, ২৯তম বিসিএসে ৭৯২টি, ৩০তম বিসিএসে ৭৮৪টি, ৩১তম বিসিএসে ৭৭৩টি পদ শূন্য ছিল। কোটার শূন্য পদগুলো পূরণ করতে মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ও মহিলাদের জন্য ৩২তম বিশেষ বিসিএস নেয়া হয়। কোটা ব্যবস্থার কারণে ওই বিসিএসে ১ হাজার ১২৫টি পদ শূন্য রয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ৩৩তম বিসিএসের মাধ্যমে তা পূরণের সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে বিগত ২০১২ সালে সরকারি দফতরে পদ সৃজন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত নিয়োগ পর্যন্ত দীর্ঘসময় লাগার কারণ অনুসন্ধানে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন। সেজন্য তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে একটি সচিব কমিটিও গঠন করা হয়। ওই সচিব কমিটির অনুসন্ধানে জানতে পারে প্রশাসনে পদ সৃজন থেকে পূরণ পর্যন্ত ৭ বছরের বেশি সময় লাগে। ওই সময় কমিয়ে আনতে সচিব কমিটি ১১ দফা সুপারিশ করেছিল। আর কমিটির দেয়া প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। কিন্তু পর্যন্ত ওই সুপারিশ আলোর মুখ না দেখে ফাইলবন্দি হয়েই মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে।
অন্যদিকে শূন্য পদের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান জানান, প্রশাসনের শূন্য পদ পূরণে শিগগিরই ৩৮তম বিসিএসের সার্কুলার দেয়া হবে। দুই হাজারের বেশি পদে এবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। পর্যায়ক্রমে বাকি পদও পূরণ করা হবে।
< Prev | Next > |
---|