স্টাফ রিপোর্টার: বর্তমানে সকল সরকারি অফিসে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণি পদে প্রায় ৫ লাখ কর্মচারী রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তরের কমন ক্যাটাগরি পদের (নিম্নমান সহকারী, সাঁটলিপিকার, অফিস সহকারী, ডেসপাস রাইটার, দপ্তরি ও এমএলএসএস ইত্যাদি) জন্য আলাদা একাধিক নিয়োগ বিধিমালা রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কোনো সামঞ্জস্য নেই। বর্তমানে ওই সংক্রান্ত ৫টি বিধিমালা ছাড়াও রয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অফিস স্মারক-পরিপত্র। ওসব পদের নাম ও বেতন স্কেল একই হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়োগ পদ্ধতি ও শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিন্নতা রয়েছে। পদোন্নতির ক্ষেত্রেও ভিন্ন নিয়ম রয়েছে। তাতে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তির চাকরি স্থায়ী ও নিয়মিত হওয়া ছাড়াও পদোন্নতির ক্ষেত্রে নানা জটিলতা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য অভিন্ন নিয়োগ ও পদোন্নতির বিধিমালা প্রণয়ন করছে। অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা হলে সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে একই নিয়মে ওসব কর্মচারী নিয়োগের পাশাপাশি তাদের পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করছে সরকার। সেই লক্ষ্যে সরকার অভিন্ন বিধিমালার খসড়া তৈরি করেছে। আর পদোন্নতির সুযোগ তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) সংস্কারেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কমন পদের মধ্যে রয়েছে নিম্নমান সহকারী, প্লেইন পেপার কপিয়ার, ডুপ্লিকেটিং মেশিন অপারেটর, সাঁটলিপিকার, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক, অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক, মুদ্রাক্ষরিক কাম অফিস সহকারী, ডেসপাস রাইডার, দপ্তরি ও এমএলএসএস। সচিবালয়ে ওসব পদের জন্য বিশেষ নিয়োগ বিধিমালা-২০১০ অনুসরণ করা হয়। তাছাড়া সচিবালয়ের ভেতরের ক্যাডার-বহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা ও নন গেজেটেড কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা-২০১৪ অনুসরণ করা হয়। এক সংস্থার নিয়োগবিধির সাথে অন্য সংস্থার নিয়োগবিধির কোনো মিল নেই, বরং তা বিপরীতধর্মী। ফলে বিভিন্ন সংস্থায় একই সময়ে একই পদে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তির চাকরি স্থায়ীকরণ, নিয়মিতকরণ এবং পদোন্নতিতে কেউ এগিয়ে, কেউবা পিছিয়ে পড়ছেন। ব্রিটিশ আমলের বেশ কিছু পদের নাম ও পদবি পরিবর্তন হওয়ায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে জটিলতাও হচ্ছে। যেমন গত ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি এক পরিপত্রে এমএলএসএস এবং দপ্তরি উভয় পদকে 'অফিস সহায়ক' পদে পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু দপ্তরি পদের বেতন স্কেল উচ্চতর হওয়ায় প্রস্তাবিত নিয়োগ বিধিমালায় পদটিকে 'অফিস সহায়ক (উচ্চ স্কেল)' হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীন দপ্তর-অধিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে অধস্তন পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের পদোন্নতির সুযোগ কম। কারণ তার বেশিরভাগ পদে প্রশাসন ক্যাডার, শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগ দিয়ে পদোন্নতির সুযোগ বন্ধ করে রাখা হয়। যেমন শিক্ষা অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক, পরিচালক এবং সর্বোচ্চ মহাপরিচালকের পদে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগ করা হয়। খাদ্য অধিদপ্তরের সর্বোচ্চ মহাপরিচালকের পদ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক থেকে শুরু করে মহাপরিচালক পদ পর্যন্ত প্রশাসন ক্যাডারের বা শিক্ষা ক্যাডারের জন্য নির্ধারিত। এরকম সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতাধীন দপ্তর, অধিদপ্তর, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলোর ঊর্ধ্বতন পদগুলোতে প্রেষণে নিয়োগের সুযোগ থাকায় অধস্তনরা পদোন্নতি পায় না। মূলত ওসব দপ্তর, অধিদপ্তর, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান যখন সৃষ্টি করা হয়, তখন তার সাংগঠনিক কাঠামো ওইভাবেই তৈরি হয়। এতোদিন সিলেকশন গ্রেড বা টাইম স্কেলের সুযোগ থাকায় আর্থিক দিক থেকে তাদের কোনো ক্ষতি হতো না। এখন সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। তাই সরকার সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্গানোগ্রাম সংস্কার করে পদোন্নতির সুযোগ তৈরি করার উদ্যোগ নিচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, সম্প্রতি প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে 'মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও তার সংযুক্ত অধিদফতর, পরিদফতর, দফতর এবং সংবিধিবদ্ধ সংস্থা ও কর্পোরেশনের কমন পদের নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৭' নামের একটি অভিন্ন বিধিমালা সুপারিশের জন্য পাঠানো হয়। তবে সেটি আরো পর্যালোচনা করতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই বিধিমালাটি চূড়ান্ত সুপারিশের জন্য সচিব কমিটিতে পাঠানো হবে।
এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান জানান, সরকারি চাকরিতে একই ধরনের পদে নিয়োগের যোগ্যতা অভিন্ন করা হচ্ছে। বর্তমানে একই পদের নিয়োগে আলাদা আলাদা বিধিমালা থাকায় নানা ধরনের প্রশাসনিক জটিলতা হচ্ছে। ওসব জটিলতা দূর করতে অভিন্ন পদের জন্য অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করছে সরকার। তাছাড়া পদোন্নতির ক্ষেত্রে যেসব জটিলতার কথা তারা বলছেন, সেগুলোও পর্যালোচনা করে সমাধান করা হবে।
< Prev | Next > |
---|