lgedস্টাফ রিপোর্টার: স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে শেষ না হয়ে দীর্ঘায়িত হচ্ছে। মূলত প্রক্রিয়াগত ত্রুটির জন্যেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ প্রতিটি প্রকল্পের ক্ষেত্রেই মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশন হয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) যেতে কয়েক দফা সময়ক্ষেপণ হয়। আর একনেকে অনুমোদনের পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নিয়োগ হয়ে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন পর্যায়ে যেতেই প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ওই পর্যায়ে অতিরিক্ত অর্থ সরবরাহের প্রক্রিয়াটিও হয় দীর্ঘমেয়াদি। এলজিইডি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এলজিইডির প্রকল্পগুলো একনেকে পাস হওয়ার পরও প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ, অফিস ভাড়া ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগেই লেগে যায় বছরখানেক সময়। আর প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় বিদ্যমান বাজারদর অনুযায়ী। অথচ প্রতি বছরই বাড়ে নির্মাণসামগ্রীর দাম। ওভাবে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পরবর্তীতে প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত অর্থ সরবরাহের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু ওই প্রক্রিয়াটিতেও দীর্ঘসময় লেগে যায়। প্রকল্প প্রণয়ন থেকে শুরু করে একনেকে উঠতে প্রায় দুই বছর সময় লাগে। তারপর প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হতে সময় লাগে আরো এক বছর। সেই সাথে যোগ হয় অর্থছাড়ে কালক্ষেপণ। মূলত প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে এমর প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণেই নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না এলজিইডির অধিকাংশ প্রকল্প।

সূত্র জানায়, বিগত ২০১৫ সালের শেষে নদী ও খালখনন শীর্ষক এলজিইডির একটি প্রকল্পের বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি হয়। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় হয়ে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। আর ২০১৭ সালের মাঝামাঝি এসেও একনেকে ওঠেনি প্রকল্পটি। একই অবস্থা আধুনিক হাটবাজার শীর্ষক প্রকল্পের। তাছাড়া সমতলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার ও জীবনমান উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্পের ডিপিপি এলজিইডি তৈরি করে ২০১৬ সালের শুরুতেই।

২৩০ কোটি টাকার ওই প্রকল্পও একনেকে শিগগিরই ওঠার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে। অথচ সমতলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের কল্যাণে প্রকল্পটি হাতে নিচ্ছে সরকার, যার সুবিধা পাবে এসব জনগোষ্ঠীভুক্ত ১৮ হাজার দরিদ্র মানুষ। প্রকল্পটি অর্থায়ন করবে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)। একইভাবে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অনগ্রসর উপজেলাগুলোর গ্রামীণ সড়ক, সেতু/কালভার্ট ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৪২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয় ২০১০ সালে।

২০১৩ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুধুমাত্র প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণেই এলজিইডি নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের অর্ধেক কাজও করতে পারেনি। পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়া জেলা ওই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক মাস আগে প্রকল্পটির সময় বাড়ানোর সাথে সাথে ব্যয় বাড়ানো হয় ৩২৫ কোটি টাকা। সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী বর্ধিত ব্যয়ের ওই পও্রকল্প ২০১৫ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এলজিইডি তা করতে সমর্থ হয়নি। ফলে আবারো প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এই সাথে সময়ও দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ব্যয় ৭৫ কোটি টাকা বাড়ানোর পাশাপাশি চলতি মাসের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে সেকেন্ড রুরাল ট্রান্সপোর্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (আরটিআইপি-২) শুরু হয় ২০১২ সালে, যা ২০১৭ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত ত্রুটিকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখছে এলজিইডি। তাছাড়া এলজিইডির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বৃহত্তর কুমিল্লা পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন। ২০১০-১১ অর্থবছরে শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১২-১৩ অর্থবছরে। তাতে ব্যর্থ হয়ে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়।

তাতেও প্রকল্পটির ব্যয় ১৭৮ কোটি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৮ কোটি টাকা। একই অবস্থা দেশের গুরুত্বপূর্ণ ১৯টি পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পেরও। ওই প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন হয় ২০১০ সালের ২৮ ডিসেম্বর। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়নি। উল্লিখিত পৌরসভার মধ্যে রয়েছে টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া, শিবচর, কালকিনী, হোসেনপুর, ভৈরব, বোয়ালমারী, ময়মনসিংহ, মাদারগঞ্জ, বেড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর, উল্লাপাড়া, নীলফামারী, কমলগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, সোনাইমুড়ি, নওয়াপাড়া ও চরফ্যাশন। পৌরসভাগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় ৪৫১ কোটি ৯৪ লাখ ৩১ হাজার টাকা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমানে ৫৩৭ কোটি ৬৯ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

এ প্রসঙ্গে এলজিইডির সহকারী প্রধান প্রকৌশলী মাহবুব ইমাম মোরশেদ জানান, এলজিইডি প্রকল্প তৈরি করে। কিন্তু মূল্যায়ন করে না। সরকারের যেসব জায়গায় প্রকল্পের মূল্যায়ন করা হয়, সেসব জায়গায় অবশ্যই দক্ষ ও উপযুক্ত লোকবল দরকার। তাতে সার্বিকভাবে প্রক্রিয়াটি সহজ হবে।

সাম্প্রতিক