food collectস্টাফ রিপোর্টার: সরকার প্রতি বছর প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য সংগ্রহ করে। তার মধ্যে ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল ও প্রায় ৭ লাখ মেট্রিক টন ধান রয়েছে। কিন্তু কৃষকদের উৎপাদিত খাদ্য শস্য নিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা নানা কারসাজি করে আসছে। তাতে চরমভাবে কৃষকরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকদের ন্যায্য পাওনা ও ভোগান্তি দূর করতে খাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা ডিজিটাইজেশন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। ওই পদ্ধতিতে মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য থাকবে না। কৃষকরা তাদের খাদ্যপণ্যের উপযুক্ত মূল্য পাবেন। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কৃষকদের পণ্যের উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আর্নস্ট এ- ইয়ংয়ের (ইওয়াই) কারগিরি সহযোগিতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট এ- গবর্নেন্স (এলআইসিটি) প্রকল্পের মাধ্যমে ওই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। ইতোমধ্যে খাদ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়ার ডিজিটাইজেশনের লক্ষ্যে এ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের উন্নয়ন করা হয়েছে। শেরপুর ও নাটোরে পাইলট কর্মসূচিটি প্রথম চালু করা হবে। খাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থার ডিজিটাইজেশন করা হলে কৃষক এবং মিল মালিকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ খাদ্য সংগ্রহের গোটা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আসবে। আর কৃষকরা সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন। তাদের খাদ্যশস্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে। কৃষকরা যাতে ক্ষতির শিকার না হন তার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের এই উদ্যোগকে খাদ্য মন্ত্রণালয় স্বাগত জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, খাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থার ডিজিটাইজেশনের লক্ষ্যে উন্নয়নকৃত এ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারটির মাধ্যমে উপজেলাভিত্তিক বরাদ্দকৃত খাদ্যের বিভাজন অনলাইনে সম্পাদন করা যাবে। তাছাড়া কৃষক ও চাল কল মালিকদের রেজিস্ট্রেশন ও আবেদনও নেয়া হবে অনলাইনে। মিল মালিকদের আগ্রহপত্র (ইওআই) অনলাইনে করা ও ওয়েবসাইটে তথ্য জানানোসহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিল মালিক এবং কৃষকের মোবাইলে ধান চালের চাহিদা, সরবরাহের তারিখ জানিয়ে খুদেবার্তা প্রেরণের ব্যবস্থা থাকবে। এমন পদ্ধতির মধ্যে তৃতীয় পক্ষের কোন হাত থাকবে না।

সূত্র আরো জানায়, খাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থার জন্য উন্নয়নকৃত সফটওয়্যারটির কার্যকারিতা দেখার জন্য শেরপুরের নালিতাবাড়ি ও নাটোরে খুব শিগগিরই ডিজিটাইজেশনের পাইলটিং হতে যাচ্ছে। পরবর্তীতে পাইলট প্রকল্পটি সফল হলে সারাদেশে ডিজিটাইজেশন পদ্ধতির মাধ্যমে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হবে। প্রচলিত পদ্ধতিতে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে গিয়ে কৃষকরা মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে খাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা ডিজিটাইজেশন জরুরি হয়ে পড়েছে। ডিজিটাইজেশন পদ্ধতির মাধ্যমে সারাদেশে বিভিন্ন বিভাগে যেভাবে টেন্ডার করা হয়- অনেকটা একই পদ্ধতিতে ধান চাল সংগ্রহ করা হবে।

এদিকে এ প্রসঙ্গে প্রকল্পের উপ-পরিচালক তারেক বরতউল্লাহ জানান, এলআইসিটি প্রকল্পের পক্ষ থেকে ন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার (এনইএ) প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে।

খাদ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়ার ডিজিটাইজেশন এনইএ‘র আইটি রোডম্যাপের অংশ। খাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থার ডিজিটাইজেশনের জন্য তথ্য সংগ্রহ ও ডাটা আপডেটে এলআইসিটি প্রকল্প ও খাদ্য অধিদফতর একযোগে কাছ করছে। খাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থার ডিজিটাইজেশন কৃষক ও চালকল মালিকদের কাছ থেকে খাদ্য সংগ্রহের গোটা প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।

অন্যদিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী জানান, খাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থার ডিজিটাইজেশন করার ফলে মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য থাকবে না। একজন কৃষকের রেজিস্ট্রেশন, ধান চালের মূল্য জানা, সরবরাহের পরিমাণ ও নির্ধারিত স্থান পৌঁছে দেয়ার তথ্যসমূহ অনলাইন এবং খুদেবার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা থাকছে। ফলে একজন কৃষক কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই সরাসরি তার উৎপাদিত ধান ও চাল সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারবে এবং কৃষক তার ন্যায্য মূল্য পাবে।

সাম্প্রতিক