ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পেয়েছিলাম। তখন খুব পড়তাম। ক্লাস সিক্সে নতুন স্কুল। কিছু বোঝার আগেই প্রথম সাময়িক পরিক্ষা হয়ে গেল। যে সেকেন্ড হল, তার চেয়ে অনেক বেশি নম্বর আমি পেয়ে ফার্স্ট হলাম। আমাকে ক্লাস ক্যাপ্টেন বানানো হল।
বাংলা আমি কখনো পড়তাম না, ক্লাসে শুনেই মনে রাখতে পারতাম। মা থাকে রাঙ্গামাটি। আমি বাবার সাথে থাকি চিটাগাং।
প্রথম ক্লাসটা ছিল বাংলা, ম্যাডাম অনেক রাগি ছিলেন।আমি মাকে খুব মিস করতাম। তাই ম্যাডামকেই আমার মায়ের মত লাগতো। কোন এক কারনে একদিন ক্লাসে কেউ পড়া শিখে আসেনি। আমি নিজেও না। ম্যাডাম আসলে ভুলে গেছেন। তিনি পড়া দেননি। কিন্তু ভেবেছেন দিয়েছেন।
প্রথমে আমাকে জিজ্ঞেশ করলেন, আমি দাঁড়িয়ে বানিয়ে বানিয়ে বলে দিলাম। এর পরে আর কেউ পারেনি, আসলে ভয়েই কেউ পড়া বলতে পারতো না।
ম্যাডাম বললেন, " তোমরা একে একে সামনে আসো, সবাইকে বেত দিয়ে ২ টা করে বাড়ি দেয়া হবে"।
আমি কি মনে করে বললাম, " আজকে প্লিজ কাউকে মারবেন না"।
ম্যাডাম রেগে বললেন, " সবার পিটুনি তুমি খাবে ? "
আমার একটুও ভয় লাগলো না," আমি বললাম খাব "।
আমি ভেবেছিলাম ম্যাডাম আমাকে মারবে না আর সবাইকে ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু ম্যাডাম ব্যাদবি একদম সহ্য করেন না।
আমাকে সামনে নিয়ে গিয়ে জোড়া বেত দিয়ে পিটিয়ে আমার হাত ফাটিয়ে ফেললেন। থামেনই না।
আগে আমি কখনো ক্লাসে মার খাইনি। ক্লাসের সবাই চুপ, আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, তবুও হাত নামাই না। আমার মনে হচ্ছিল আমার মা আমাকে অকারনে মারছে। তবুও বন্ধুদের জন্য আমি মার খেতেই পারি।
সেদিন ক্লাসে ৪৮ জন ছিল। ম্যাডাম গুনে গুনে ২৫-২৬ বার আমার হাতে মেরে থেমে গেলেন। আমি বলেছিলাম, " আরও ৭০ বার মারেন ম্যাডাম "। আমার হাত ততক্ষনে ফেটে গেছে।
ক্লাস থেকে তিনি বেড়িয়ে গিয়েছিলেন, একটু পর আমাকে ডাকা হল টিচার্স রুমে, আমি ভাবলাম, আমার বুঝি টিসি হয়ে গেল।
সব টিচারেরা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলেন। ম্যাডাম আমাকে কাছে ডেকে বুকে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন "এমনি থাকিস সারা জীবন। মায়ের সাথে ব্যাদবি করবি না। অনেক দোয়া করি। আর আমার সাথে রাগ করিস না "।
(আমার ছোট্ট জীবনের সেরা কিছু মুহূর্তের মধ্যে আমার বাংলা ম্যাডাম ঢুকে গেলেন )
গতকাল ছিল বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এই জীবনে যার কাছে একটি বর্ণও শিখেছি, সকল শিক্ষকদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আর ভালবাসা রইলো, রবে আজীবন।
এস এম আমিনুল রুবেল
সিডনি
< Prev | Next > |
---|