সিডনিতে আজ বাবা দিবস। আজ এখানকার স্থানীয়রা মহাসমারোহে বাবা দিবস পালন করছে। গত সপ্তাহ থেকে শপিং সেন্টারগুলোতে বাবাদের জন্য বিশেষ মূল্য ছাড়ের পাশাপাশি ক্রেতা ছেলেমেয়েদের কেনা কাটার ধুম পড়ে যায়। আজ দুপুরে খাবারের দোকান ও রেস্টুরেন্টগুলোতে উপচে পড়া ভিড়।
আমি বছর দুই আগে থেকে দেশের টিভি চ্যানেলে রিপোটিং করছি। প্রথম দিকে কিভাবে ভিডিও ফুটেজ গুলো ছোট করে ফাইল হিসেবে চ্যানেলে পাঠাবো সেই বিষয়ে কোন স্পষ্ট ধারনা ছিল না। আমার ছেলে আরিক ওর ক্লাসে বন্ধুদের সাথে ভিডিও প্রেজেন্টেশান ও স্লাইড শো করে। আমার স্ত্রী পরামর্শ দিল আরিকের কাছ থেকে শিখতে। আমি প্রথমে গড়রাজী থাকলেও কাজের প্রয়োজনে ছেলের শরনাপন্ন হলাম।
আরিক আমার ল্যাপটপে অতি যত্ন সহকারে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ডাউনলোড করে দিলো। তারপর হাতে কলমে শিখালো কিভাবে ক্যামেরার এসডি কার্ড থেকে ভিডিও ফুটেজ এনে ওগুলোকে জোড়া লাগিয়ে একটি ছোট্ট ফাইলে পাঠাতে হয়।
তারপর আমার সমস্যা দেখা দিল কিভাবে ভিডিওতে লেগো বসাবো। কিন্তু আরিক এই কাজটাও অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে করলো। ওর নিজেরও এই বিষয়ে কোন ধারনা ছিলনা। আমাকে অভয় দিয়ে বললো,
বাবা, চিন্তা করো না। আমি ওয়েব সাইট সার্চ করে তোমাকে আপ্লিকেশন ডাউনলোড করে দিবো। তারপর সে ঠিকই আমাকে আপ্লিকেশন খুঁজে দিলো।
এবার শুরু হল আরিকের কাছ থেকে আমার হাতে কলমে শিক্ষা। আমি টেকনোলজি তে মোটেই ভালো না। আরিক তার এই ডাম্প ছাত্রকে অনেক ধৈর্য সহকারে শেখাতে লাগলো। সে প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ণনা করে ধাপে ধাপে দেখিয়ে দেয়। আমি ঠিক তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে অতি দ্রুত সব কিছু গুলিয়ে ফেলি। আরিক আবার শেখায় আমি একই প্রশ্ন তাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বারবার করি।
সে হয়তো ক্লাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ এসাইনমেণ্ট নিয়ে বসেছে ঠিক তখনি আমার ডাকাডাকি শুরু হয়ে গেল,
আরিক বাবা, সব কিছু ঠিক ছিল হঠাৎ করে ভিডিও ক্লিপ মুছে গেছে, লেগো বসাতে গিয়ে সেভ করা লেগোই মুছে ফেলেছি ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমার স্ত্রী এসাইনমেণ্ট করার সময় আরিককে বিরক্ত করার জন্য ভ্রু কুচকে থাকে। কিন্তু আমার কুছ পরোয়া নেহি ভাব। আমার কাজটাই যেন আগে।
আরিক মনে মনে বিরক্ত হলেও হয়তো ওর মার মতো বিরক্তি প্রকাশ করে না। হয়তো মনে মনে ভাবে, আমার বাবা যে এত ডাম্প তা এই কাজ শিখাতে না এলে আমার অজানাই থেকে যেত।
আজ বাবা দিবসে আরিক বাবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা, হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা আর অফুরন্ত দোয়া যাতে করে সে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে শ্রদ্ধা আর ভালবাসা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে।
নাইম আবদুল্লাহ
সিডনি প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক
< Prev | Next > |
---|