housing authorityস্টাফ রিপোটার: জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিনেও গ্রাহকদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে পারেনি। অথচ গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভায় ইতিমধ্যে অস্বাভাবিক হারে ফ্ল্যাটের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভায় মোহাম্মদপুর এফ ব্লকের ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের দামের সাথে অতিরিক্ত ২৫ লাখ এবং ১ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটে ২৮ লাখ টাকা বাড়ানোর বিষয় অনুমোদিত হয়। আর ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট প্রায় ৫৫ লাখ এবং ১ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটের দাম পড়বে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা। দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাজার দরের অজুহাত দেখানো হয়েছে। বলা হয়- ভবন নির্মাণে সর্বশেষ বাজারদও অনুসরণ করার কারণেই ব্যয় বেড়েছে। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভায় ফ্ল্যার্টে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অনুমোদনের পর এখন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মোহাম্মদপুর এফ ব্লকের ফ্ল্যাটের দাম অতীতেও কয়েক দফা বাড়ানো হয়। কিন্তু এবার কর্তৃপক্ষের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তে গ্রাহকরা নারাজ। ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন তারা। অনেকেই বলছেন তারা ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয়ের পাশাপাশি আন্দোলনের পথ বেছে নেবেন। মূলত আদাবর থানার বিপরীতে ৭ একর জায়গা নিয়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের এফ ব্লক প্রকল্প এলাকা। ১৯৯৭ সালে সেখানে প্লট দেয়ার কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়। আর ২০০৯ সালে প্লটের বদলে ফ্ল্যাটের জন্য আবেদনপত্র নেয়া হয়। সেখানে মোট ১৫টি ১৬ তলা ভবন নির্মিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এক থেকে তিন নম্বর ভবনের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে।

সূত্র জানায়, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের এফ ব্লকে ৯০০ আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প ২০০৬ সালে অনুমোদন হয়। তখন ৮০০ বর্গফুটের (সব মিলিয়ে ১১৯০) ফ্ল্যাট প্রতি বর্গফুট ১ হাজার ৫৯৬ টাকা হিসাবে ১৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা ধার্য করা হয়। আর ১ হাজার বর্গফুটের (সব মিলিয়ে ১৩৯০) ফ্ল্যাটের দাম ধরা হয় ১৯ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। কিন্তু ২০০৯ সালে ৮০০ বর্গফুট ফ্ল্যাটের দাম বাড়িয়ে ২৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং ১০০০ বর্গফুটের দাম নির্ধারণ করা হয় ৩৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। গ্রাহকেরা ওই বছর পর্যন্ত সেই দরেই তিন-চারটি কিস্তির টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু সম্প্রতি এফ ব্লক প্রকল্পকারীদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হয় ৮০০ ও ১০০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের প্রতি বর্গফুটের দাম হবে ৪ হাজার ৬০০ টাকা। তার ফলে ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের দাম পড়বে ৫৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। আর ১০০০ বর্গফুটের মোট দাম হবে ৬৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। তার বাইরে গাড়ি পার্কিং বাবদ আরো ৪ লাখ টাকা দিতে হবে।

সূত্র আরো জানায়, প্রকল্প পিছিয়ে যাওয়ার জন্য ফ্ল্যাটের ক্রেতা বা গ্রাহকেরা কোনোভাবেই দায়ী নন। বরং প্রকল্পের জায়গা অবৈধ দখলে ছিল। আর দখলদারদের উচ্ছেদ করতেই কর্তৃপক্ষ বেশি সময় নেয়। জায়গা নিয়ে মামলাও হয়েছে। ফলে ২০১০ সালে পাইলিং শুরু হলে তা নিয়ে এলাকাবাসীর সাথে ঝামেলা হয়। ওই কারণেও দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকে।

এদিকে মোহাম্মদপুর এফ ব্লক ফ্ল্যাট মালিক কল্যাণ সমিতি নামে একটি সংগঠন সংশ্লিষ্ট মো. ফারুকুজ্জামান জানান, দীর্ঘ ২০ বছর ধরেই আমরা অপেক্ষা করছি। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ আমাদের প্লট বা ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে পারেনি। এখন দাম দ্বিগুণ বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে। যদি সত্যিই বাড়ানো হয় তাহলে আদালতে রিট আবেদন করা হবে। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করা হবে। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হবে।

অন্যদিকে এফ ব্লকের প্রকল্প পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, আগের বাজারদরের তুলনায় বর্তমান বাজারদর অনেক বেশি। ২০১৪ সালের শিডিউল অনুযায়ী ফ্ল্যাট নির্মাণ হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বহাল আছে। প্রথম চার কিস্তির টাকা বাড়তি দামেই গ্রাহকদের পরিশোধ করতে হবে। কারণ বাড়তি খরচ যোগাতে সরকারের ভর্তুকি দেয়ার সুযোগ নেই। বর্তমাে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যেই ৩০০ ফ্ল্যাটের দখল বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন জানান, ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুট ৪ হাজার ৫০০ টাকা হতে পারে। তবে মন্ত্রী নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সরকারি ফ্ল্যাটের দাম বাড়ানো হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে উত্তরায় রাজউকের নতুন ফ্ল্যাটের দাম বাড়ানো হচ্ছে না জানান।

সাম্প্রতিক