sgdfdfd1স্টাফ রিপোর্টার : ধানের জেলা শেরপুর। ধানকে কেন্দ্র করে শেরপুর জেলা চাতাল শিল্পের জন্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। জেলায় সহাস্রাধিক চাতাল রয়েছে।

সম্প্রতি জেলায় আরও ২২টি অটো ধানের মিল গড়ে উঠেছে।ধান চালের ব্যবসা হিসেবে চাতাল ব্যবসায়িদের কাছে বৈশাখ মাস হলো ঈদের মত। পুরো মাস জুড়ে ব্যবসায়ি মজুর আর কৃষকের আনা গোনায় চাতালগুলো থাকে মুখরিত। দেনা পাওনা মিটাতে জেলার ধান চালের সেন্টারগুলো ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত থাকে কৃষক ফরিয়া চাতাল ব্যবসায়িদের হাট। ব্যাংকগুলোতেও লেনদেন থাকে চোখে পড়ার মত। কিন্তু অকাল বন্যা ও ব্লাষ্ট রোগে কম ফলনে চলছে ধানের আকাল। ধানের জন্য জেলার চাতালগুলোতে চলছে হাহাকার। চাতাল না চলায় বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার শ্রমিক।

জানা গেছে চৈত্রের শেষ দিকে ব্যাপক আগাম বোর ধান পাওয়া যায় সিলেট ও হাওড় অঞ্চলে।এখানের চাতাল ব্যবসায়িরা শুরুতেই ওসব অঞ্চল থেকে ধান সংগ্রহ করে চৈত্র মাসেই চাল উৎপাদন শুরু করে দেয়। শেরপুরের দীর্ঘদিনের চাতাল ব্যবসায়ি আব্বাস আলী জানান অন্যবছর এ সময়ে অন্তত ৩ বার চাল উৎপাদন শেষ হয়।এবার একমণ ধানও কিনতে পারিনি। বাজারে ধান নেই। যতটুকু ধান পাওয়া যায় দাম অত্যন্ত বেশী।ধানের সাথে চাল উৎপাদনের কোন পরতা নেই। চাতাল ব্যবসায়ি হারেজ আলী জানান গত ৩/৪ বছর ধরে চাতাল ব্যবসা একেবারেই মন্দা। অনেক ব্যবসায়ি লোকসান গুনতে গুনতে এখন পথের ফকির।এবার ধান পাকা দেখে আশায় বুক বেধে ছিলাম ব্যবসা হবে। ধান কাটার ঠিক আগে আগে অকাল বন্যায় সবশেষ করে দিয়েছে।চাতাল মালিক রেজাউল করিম হরিা জানিয়েছে ধানের এই ভরা মৌসুমে চাতাল বন্ধ। গুনতে হচ্ছে ব্যাংক সুদ। যতটুকু ধান পাওয়া যায় দাম বেশী। ইরি ২৮ চাল করলে প্রতিকেজি ৪৮ টাকা পড়তা পড়ে আর বাজারে বিক্রি করতে হয় ৪৬ টাকা।মোট চাল প্রতি কেজি পড়ে যায় ৪০টাকা বাজারে এর দাম ৩৮ টাকা।এত লোকসান দিয়ে কেউ ধান কিনতে সাহস পাচ্ছে না।অপর একটি সূত্র জানিয়েছে বাজারে যে পরিমান ধান পাওয়া যায় তা বড় মূলধনের মালিকরা বেশী দামেই কিনে নিচ্ছে। জেলার অটো মিল মালিকদের মধ্যে কেউ কেউ কোন রকম মিল চালু রাখতে কিছু কিছু ধান কিনে আগামি দিনে লাভের আশায় ষ্টক করছে।তবে মধ্যম শ্রেনীর ব্যবসায়িরা পড়ছেন বিপদে।একদিকে ব্যাংকের সুদ বাড়ছে অন্যদিকে লোকসান দিয়ে ধান কিনতে পাচ্ছেন না ফলে ব্যবসা বন্ধ।

কৃষক আমর আলী জানান হঠাৎ বন্যায় জেলার কোথাও কোথাও ধান একেবারেই হয়নি।যেখানে বন্যা হয়নি সেখানে ব্লাষ্ট রোগ ধরেছে। আর যেখানে ধান স্বাভাবিক হয়েছে সেখানে ধানের ফলন হয়েছে অর্ধেকেরও কম। তিনি আরও জানান আমি যেখানে ৫০ মণ ধান পাই সেখানে পেয়েছি মাত্র ২২মণ। কৃষক সূত্রে আরও জানা গেছে তারা এখন সব ধান বিক্রি করতে চাইছে না। নিতান্ত অভাব মিটানোর জন্য কিছু কিছু ধান তারা বাজারে ছাড়ছে। ধান যেহেতু কম হয়েছে দেশে অভাব পড়তে পারে এবং নিজের খাওয়ার নিরাপত্তার জন্য ও আগামিদিনে ধানের মূল্য আরও বাড়বে এমন চিন্তা করে কৃষকরা যতটুকু ধান পেয়েছে তা গোলায় উঠাচ্ছে। সবমিলে ধানের জেলায় চলছে ধানের হাহাকার।এর প্রভাব ব্যাংকগুলোতেও পড়েছে।

বাণিজ্যিক ব্যাংক গুলোতে চাতাল সংশ্লিষ্ট লেনদেন কমেছে আশংকা জনক হারে এমন আভাস মিলেছে ব্যাংক ঘুরে।ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে এসময় ব্যাংকে চাতাল মালিকদের প্রচন্ড ভীড় থাকে। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন। শেরপুরের অন্যতম বাণিজ্যিক ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মো. হামিদ মাহমুদ জানান ব্যাংকে চাতাল সংশ্লিষ্ট লেনদেন তেমন একটা নেই। এই অঞ্চলের অর্থনীতি অনেকটা চাতাল নির্ভর। অন্যবছর এ সময় ব্যাংকে চাতাল সংশ্লিষ্ট লেনদেনের লাইন থাকে কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। তিনি আরও জানান অনেক চাতাল মালিক তাকে জানিয়েছেন বাজারে ধানের সংকট চলছে। শেরপুর জেলা চাতাল মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক আছাদুজ্জামান রৌশন জানান হাওড় ও সারাদেশে প্রাকৃতিক দূর্যোগ জন্য শেরপুরে ধানের হাহাকার চলছে। ভরা মৌসুমে চাতাল বন্ধ। নানা সংকটে শেরপুরের চাতাল ব্যবসায়িরা এবার সর্বশান্ত হবে। তিনি চাতাল শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সাম্প্রতিক