Mujib-File-pic॥ আতাউর রহমান ॥

ঢাকা, ১৪ আগস্ট, ২০১৭ (বাসস) : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি গড়ার লক্ষ্যে সীমিত সময়কালেও সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার মান সংরক্ষণ ও উন্নয়নে গণমাধ্যম কর্মীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুরক্ষা ও কল্যাণে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সল, প্রেস ইনস্টিটিউট, চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা, বেতার, টেলিভিশন এবং জাতীয় সংবাদ সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থা স্থাপনে আইন প্রণয়নসহ বহু উন্নয়ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের বেতার ও টেলিভিশন নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে বঙ্গবন্ধু কাজ শুরু করেন এবং বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। এই ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের মাধ্যমেই সারা পৃথিবীর সঙ্গে বাংলাদেশের টেলি ও স্যাটেলাইট যোগাযোগ সূত্রপাত হয়।

প্রবীণ সাংবাদিক ও প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার বাসসকে বলেন, বঙ্গবন্ধু সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার মান সংরক্ষণ ও উন্নয়নে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষে ১৯৭৪ সালের প্রেস কাউন্সিল আইন (১৯৭৪ সালের ২৫ নং আইন) দ্বারা বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল গঠন করেছিলেন। তাঁর হাত দিয়েই ১৯৭৪ সালে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে মূলত সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম ও উন্নয়ন যোগাযোগ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও প্রকাশনা নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি)-র জন্ম। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সরকারের এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ১৯৭৪ সালের ২৪ মে দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত হয়।
১৯৭২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান আমলের ফিল্ড পাবলিসিটি (মাঠ প্রচার), বাংলাদেশ পরিষদ, জাতীয় পুনর্গঠন সংস্থা (বিএনআর) এবং মহিলা শাখাকে একত্রিত করে ১৯৭২ সালে ২রা অক্টোবর গণযোগাযোগ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু।
১৯৫৭ সালে তিনি যখন শিল্প, বাণিজ্য ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তখন চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে একটি আইন পাস করার উদ্যোগ নেন। ১৯৫৭ সালের ১৯ জুন চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা গঠন করা হয় যা বর্তমানে বাংলাদেশ উন্নয়ন কর্পোরেশন-এফডিসি নামে পরিচিত। এছাড়া বাংলাদেশ প্রেস ইন্টারন্যাশনাল ও এসোসিয়েট প্রেস অব পাকিস্তান ঢাকা এই দুটি সংবাদ সংস্থাকে একত্রে যুক্ত করে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) গঠন করেন বঙ্গবন্ধু।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও প্রবীণ সাংবাদিক কামাল লোহনী বাসসকে বলেন, বঙ্গবন্ধুই প্রথম সাংবাদিকদের জন্য এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তার অংশ হিসেবে সংবাদপত্র সেবীদের জন্য বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে বেতন বোর্ড রোয়েদাদ গঠনসহ সাংবাদিকদের মর্যাদা ও কল্যাণকর আইনও করে ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকতাও করেছেন। তিনি সাংবাদিক ছিলেন। ব্যক্তিজীবনে তাঁর পোশাকও ছিল অনেকটা তখনকার কবি, লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিকদের মতোই। চোখে মোটা ফ্রেমের কালো চশমা, মুজিব কোটের ওপর কাঁঠালচাপা রঙের চাদর জড়ানো, মুখে পুরনো পাইপ।
প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি হয়েও ব্যক্তি জীবনের পোশাক-আশাকের সাধারণ সাজের কোনো পরিবর্তন হয়নি সাংবাদিকতা, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি প্রেমী রাষ্ট্রনায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের। বিশিষ্ট লেখক হাসান শান্তুনু রচিত ‘সাংবাদিক বঙ্গবন্ধু’ বইটিতে এমনই কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বইটিতে আরো বলা হয়, একজন রাজনীতিবিদ, ভৌগোলিক সীমারেখার ¯্রষ্টা তো বটেই, বঙ্গবন্ধু নিপীড়িত-শোষিতদের অধিকার আদায়, পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অর্জন বা সবশেষে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত নানাভাবে পত্রিকা প্রকাশ এবং সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কখনও মালিক, কখনও সাংবাদিক, কখনও পূর্ব পাকিস্তান প্রতিনিধি, কখনও পরিবেশক, কখনও উৎসাহদাতা, সাহসের বাতিঘর, উদ্যোক্তা, প্রেরণা, আদর্শ ও অভিভাবক ছিলেন তিনি।

দৈনিক ইত্তেহাদ, মিল্লাত, ইত্তেফাক, নতুন দিন, স্বদেশ ইত্যাদি পত্রিকা বঙ্গবন্ধুর গণমাধ্যম প্রেম বা উজ্জ্বল সাংবাদিক জীবনের নানা ঘটনার সাক্ষী, যা মুজিবের বর্ণময় জীবনের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক ও বাঙালির ইতিহাসের বিশেষ অধ্যায়। গণমাধ্যমের ইতিহাসের জন্যও যা গৌরবদীপ্ত বলে উল্লেখ করা হয়। বইটিতে ‘নতুন দিনের সাংবাদিক শেখ মুজিব’, ‘ইত্তেহাদের ‘পূর্ব পাকিস্তান প্রতিনিধি’ মুজিব’, ‘রাষ্ট্রপিতা মুজিব মিল্লাত পত্রিকার বিক্রেতা’, ‘ইত্তেফাক ও বঙ্গবন্ধু’ এবং ‘বঙ্গবন্ধুর প্রেরণায় সাহিত্য পত্রিকা স্বদেশ’ শিরোনামে আছে পাঁচটি অধ্যায়সহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন কোলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে। তিনি অনেক সময় সংবাদপত্রে কলামও লিখেছেন নিজের নামে। বঙ্গবন্ধু ১৯৬৯ সালের ১ জুন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের রূপকার নির্ভীক সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার মৃত্যুর পর একটি প্রবন্ধ লিখে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন।
১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ্যে যে অমর বাণী দিয়েছিলেন তা যুগে যুগে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ ভাষণে বঙ্গবন্ধু সংবাদপত্রের পূর্ণ স্বাধীনতার কথা বলেন। দেশ ও জাতির কল্যাণে কোন কোন সময় কলম নিরপেক্ষ থাকতে পারে না। অনেক সময় রাষ্ট্রের কল্যাণে রাষ্ট্রের পক্ষে কলম ধরতে হয়। সাংবাদিকতার আদর্শ, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সংবাদপত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা, দালাল সাংবাদিকতা এবং মিথ্যা ভারতীয় চক্রান্তের কথাও বঙ্গবন্ধু তুলে ধরেন। বন্ধবন্ধু তখন আরো বলেছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদ না থাকলে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। ওই সময়ে বস্তুনিষ্ঠতা ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার জন্য আহবান জানান বঙ্গবন্ধু।

-সৌজন্যে -বাসস

সাম্প্রতিক