স্টাফ রিপোর্টার: ঈদুল আযহা ঘিরে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে প্রতিদিনই ট্রলাইবোঝাই গরুর এদেশে আসছে। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে আমদানি হয়ে দেশে ঢুকছে ওসব গবাদিপশু। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের উত্তর অঞ্চলে বিভিন্ন বাজারে ওসব কোরবানি পশু সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এমন অবস্থায় আসন্ন কোরবানি ঈদে পশুর সঙ্কট হবে না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডোর দিয়ে, সপ্তাহখানেকের মধ্যে মিয়ানমার থেকে অন্তত ৫০ হাজার গবাদিপশু আমদানি হয়ে দেশে আসছে। প্রায় এক লাখ গরু-মহিষ আমদানির টার্গেট নিয়ে এবার ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারের বেপারিদের সাথে কথা পাকাপোক্ত করেছে। সে হিসেবে চাহিদা মোতাবেক ওই দেশের ব্যবসায়ীরা গরু-মহিষ পাঠাচ্ছে। আর সীমান্তে বিজিবির পাহারা থাকায় এবার চোরাচালানিরা সুবিধা করতে পারছে না। ফলে টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তে চোরাইপথে পশু আমদানি প্রায় বন্ধ বললেই চলে। যত বড়ই গরু-মহিষ হোক, মাত্র পাঁচশ’ টাকা রাজস্ব দিলে আনায়াসে মিয়ানমার থেকে করিডোরে আনা সম্ভব হচ্ছে। চোরাইপথে এনে অসাধু ব্যবসায়ীদের আম-ছালা দুটোই হারাচ্ছে।
সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে গবাদিপশু দেশে প্রবেশ রোধে ২০০৩ সালে শাহপরীর দ্বীপে করিডোর চালু করা হয়। প্রতিটি গরু-মহিষের জন্য মাত্র ৫শ’ টাকা ও ছাগলের জন্য ২শ’ টাকা হারে রাজস্ব আদায় করা হয়। গত জুলাই মাসে ওই করিডোর দিয়ে ৬ হাজার ৭৭০ গবাদিপশুর মধ্যে ৪ হাজার ৭৪০ গরু, ২ হাজার ২৯ মহিষ এবং ১টি ছাগল আমদানি করা হয়েছে। রাজস্ব আয় হয়েছে ৩৩ লাখ ৮৪ হাজার ৭শ’ টাকা। আর চলতি আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে ওই করিডোর দিয়ে প্রায় ২ হাজার গরু-মহিষ এসেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৬ হাজার ৯৩৬টি গবাদিপশু আমদানি হয়েছে। ওসবের মধ্যে ৫৪ হাজার ৪৯৬ গরু, ১২ হাজার ৩৯৫টি মহিষ ও ৪৫টি ছাগল ছিল। তাতে তিন কোটি ৩৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। যা গত অর্থবছরের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি।
সূত্র আরো জানায়, মিয়ানমার থেকে প্রতিদিনই ট্রলারবোঝাই করে গবাদিপশু শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে আনা হচ্ছে। পথিমধ্যে কোন ঝামেলাও নেই। নাফনদীতে টহলরত বিজিবি জওয়ানরা গবাদিপশু আমদানিতে সহযোগিতা দিচ্ছে। তবে ট্রলার প্রতি চাঁদা না দিলে মিয়ানমারের বর্ডারগার্ড পুলিশ (বিজিপি) মাঝে মধ্যে নাফনদী থেকে গবাদিপশু ভর্তি ট্রলার ধরে নিয়ে যায়। বর্তমানে পর্যাপ্ত পরিমাণ গবাদিপশু মজুদ আছে। আরও আমদানি হয়ে আসছে মিয়ানমার থেকে। তবে কোরবানির সময় ঘনিয়ে না আসায় বর্তমানে ঢালাওভাবে বিক্রি হচ্ছে না। সপ্তাহখানেক পরে সারিবদ্ধ ট্রাকে করে চট্টগ্রাম, ফেনী, সীতাকু-ু ও উত্তরবঙ্গে ওসব গবাদিপশু সরবরাহ করা হবে। শাহপরীর দ্বীপ-টেকনাফ সড়ক বিচ্ছিন্ন হওয়ায় করিডোর থেকে সরাসরি ট্রাকে করে পশুগুলো পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাতে পশু ব্যবসায়ীদের খরচ বেশি পড়ছে। তাছাড়া টেকনাফ করিডোরে পর্যাপ্ত গরু-মহিষ মজুদ থাকলেও গতবছরের তুলনায় দাম একটু বেশি। তবে বর্তমানে মিয়ানমার থেকে যেভাবে গবাদিপশু আমদানি হচ্ছে, তাতে এবারে কোরবানির পশু সঙ্কট হওয়ার কথা নয়। দেশে গৃহপালিত গরুর চেয়ে মিয়ানমারের গরুগুলো একটু সাইজে লম্বা। কিনতে দামেও সস্তা পাওয়া যায়। ক্রেতারা কোরবানির সময় মিয়ানমারের গরুর প্রতি ঝুঁকে বেশি।
এদিকে মিয়ানমার থেকে গরু আসা প্রসঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দরের কাস্টমস শুল্ক কর্মকর্তা এ কে এম মোশারফ হোসেন জানান, গত অর্থবছরে ৩ কোটি সাড়ে ৩৪ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পশু ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় প্রচুর পরিমাণ পশু আমদানিতেই তা সম্ভব হয়। করিডোর প্রতিষ্ঠার ১৪ বছরে এটি সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায়। তবে করিডোরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও যাতায়াতের সুব্যবস্থা হলে আরো বেশি রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে। পশু আমদানি বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মিয়ানমার থেকে প্রচুর পরিমাণ গবাদিপশু আমদানি হয়ে আসছে। পশুবাহী ট্রলার যাতে নিরাপদে করিডোরে আসতে পারে, সেজন্য বিজিবি সদস্যরা সহায়তা দিয়ে থাকে। নাফনদীতে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।
< Prev | Next > |
---|