rampalস্টাফ রিপোর্টার: সুন্দরবনের কাছে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিরোধিতায় অনড় থাকার কথা জানিয়েছে বিএনপি।

শুক্রবার সকালে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কথা জানান। অন্যদিকে, জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে রামপাল বিরোধিতা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাছান মাহমুদ।

ইউনেস্কো সুন্দরবনের কাছে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে তাদের আপত্তি তুলে নিয়েছে বলে সরকারের তরফ থেকে বলা হলেও তাতে বিরোধীতার ব্যাপারে অনড় থাকার কথা জানিয়ে রিজভী বলেন, বাংলাদেশের পরিবেশবিদরা লিখছেন, বলছেন এবং এমনকি ভারতের অনেক পরিবেশবিদরা বলেছেন যে সুন্দরবনের কাছে কয়লা পুঁড়িয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করলে পরে সুন্দরবন নষ্ট হবে; পরিবেশ, প্রতিবেশ, গাছ-মাছ-পানি ও মানুষ বিপন্ন হবে। আমাদের যারা বিশেষজ্ঞ-বুদ্ধিজীবী আছেন তারা এই বিষয়ে হুঁশিয়ার করছেন, আন্দোলন করছেন।

বিএনপি সেই আন্দোলনে সমর্থন করেছে। এখন অন্য কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা বা অর্গানাইজেশন কে কী বলল, না বলল- এটা দেখার বিষয় নয়। আমরা আজো প্রতিবাদ করি- সুন্দরবনের কাছে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন অন্যায়, অবৈধ ও বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দেবার শামিল। এদিকে, হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম- যারা বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে তাদের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক। তাদের অনেকের উদ্দেশ্য শুধু রাজনৈতিকও নয়, ষড়যন্ত্রমূলক।

অনেকে আবেগপ্রবণ হয়ে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছে। কিন্তু যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক ও ষড়যন্ত্রমূলক। ইউনেস্কোর আপত্তি প্রত্যাহার করে নেওয়া প্রমাণ করে- রামপাল নিয়ে সরকারের বক্তব্য ও অবস্থান সঠিক। ইউনেস্কোর উদ্বেগ ও আপত্তি প্রত্যাহারের পর জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আন্দোলন থেকে বিরত থাকুন। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ইউনেস্কোকে ভুল তথ্য দিয়ে রামপাল বিষয়ে বিভ্রান্ত করার অভিযোগও করেন হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক। যারা আন্দোলনে আছেন তাদের অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়েই আন্দোলনে এসেছেন। যারা আবেগপ্রবণ হয়ে এসেছেন, তাদেরকে আমরা সম্মান জানাই। চিহ্নিত ব্যক্তিবর্গ যারা পদ্মা সেতুতে ষড়যন্ত্র করেছিলেন- তাদের নাম বলতে চাই না, দেশের মানুষ তাদের চেনে; ওখানে সফল না হয়ে তারা রামপালের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।

রামপাল নিয়ে উদ্বেগ নিরসনে সরকার যে তথ্য উপাত্ত দিয়েছে তা পরীক্ষা নিরিক্ষার পর ইউনেস্কো সে উদ্বেগ ও আপত্তি প্রত্যাহার করে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে অনুমোদন দিয়েছে বলে দাবি সাবেক এই পরিবেশ মন্ত্রীর। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে নিয়ম হচ্ছে কোনো বনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা যাবে না।

সুন্দরবনের যে অংশটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সেটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে, আর সুন্দরবনের প্রান্তসীমা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্ত ব্যবহার করা হচ্ছে জানিয়ে হাছান বলেন, যারা পদ্মা সেতুর ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হয়েছে তারা আজকে রামপালের পেছনে লেগেছে।

আন্দোলনে থাকা সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে লবিং করার অভিযোগও করেন সাবেক এ মন্ত্রী। পোল্যান্ডে চলমান ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪১তম অধিবেশনে রামপাল নিয়ে ইউনেস্কোর আপত্তি তুলে নেওয়া হয়েছে বলে গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়।

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে ঝুঁকিতে থাকা প্রাকৃতিক নিদর্শনের তালিকাভুক্ত করার পদক্ষেপ থেকেও ইউনেস্কো সরে এসেছে বলে মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের পাশে বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে আপত্তি জানিয়ে আসছে পরিবেশবাদীরা। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতাকারীরা বলছে, এটি হলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সঙ্কটে পড়বে সুন্দরবন। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সুন্দরবনের ক্ষতি না করেই এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে।

নিজেদের ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য নিয়ে এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যে ইউনেস্কোর পক্ষ থেকেও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে গত বছর চিঠি দেওয়া হয় সরকারকে।

সরকার সেই চিঠির জবাবও দেয়। পোল্যান্ডে হেরিটেজ কমিটির যে বৈঠকে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়, তাতে বাংলাদেশের সরকারি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ¦ালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী। তারা বৈঠকে সুন্দরবন ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন।

ইউনেস্কোর আপত্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, আমার বাড়িতে আগুন লেগেছে, এই আগুনের তীব্রতা কতটুকু সেটা আমরাই বুঝতে পারব। সেখানে আমি বালতিতে করে পানি ঢালব না দমকল বাহিনী নিয়ে এসে আগুল নেভাব- সেটা আমরা ঠিক করব।

আমার দেশের যারা বুদ্ধিজীবী, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ তারা কি লেখাপড়া করেননি; এরা কি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাননি, আনু মুহাম্মদ সাহেব থেকে শুরু করে আরো যারা লিখছেন। এমনকি ভারতেও অনেক পরিবেশবিদ বলছেন যে সুন্দরবনের কাছে কয়লা পুঁড়িয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে পরে আমাদের সুন্দরবন নষ্ট হবে।

ভারতের অংশেও সুন্দরবন থাকার প্রসঙ্গ টেনে রিজভী দাবি করেন, সেখানে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেখানে করেনি। হাসিনার মতো একজন দাসনি দাস, একটি গোলাম সরকারকে দিয়ে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসাচ্ছে।

কারণ তারা সুন্দরবন নষ্ট করবে, বাংলাদেশের মানুষকে বিপন্ন করবে, আমাদের গাছ মাছ পানিকে বিপন্ন করবে- এই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপিইর ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুকসহ কারাবন্দি নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে ওই মানববন্ধনের আয়োজন করে স্বাধীনতা ফোরাম। ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বক্তব্য রাখেন। এদিকে আওয়ামীলীগের সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে মধ্যে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল ইসলাম চৌধুরী নওফেল উপস্থিত ছিলেন।

সাম্প্রতিক