nbr-dhaস্টাফ রিপোর্টার: আগামী অর্থবছরের শুরু থেকেই কার্যকর হতে যাচ্ছে নতুন ভ্যাট আইন। আর তা কার্যকরে নতুন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে প্রণীত বিধিমালা সংশোধন করে ভ্যাট কর্মকর্তাদের যে কোনো ব্যক্তির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি, যানবাহনসহ যে কোনো স্থানে প্রবেশ ও তল্লাশির দেয়ার প্রস্তাব রাখা হচ্ছে। যদিও যখন তখন ভ্যাট কর্মকর্তাদের তল্লাশি চালানোসহ হয়রানিমূলক বিভিন্ন ক্ষমতা কমানোর প্রস্তাব দিয়েছিল ব্যবসায়িরা। কিন্তু ভ্যাট কর্মকর্তাদের ক্ষমতা দিতে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা-২০১৬-এর ৬০ ধারা সংশোধনের প্রস্তাব থাকছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রাজস্ব ফাঁকি দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করাসহ তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি, যানবাহনসহ বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালাতে পারবেন কর্মকর্তারা। তবে সেক্ষেত্রে ভ্যাট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে সহকারী কমিশনার বা সহকারী পরিচালক বা তার ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি ও প্রবেশের অনুরোধ থাকতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এনবিআর বিধিমালার ৫৭(ক) নামে নতুন একটি বিধি সংযোজনের উদ্যোগ নিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তাতে বলা হচ্ছে, কোনো নিবন্ধিত বা তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আইনের ৬৪ ধারা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভ্যাট দাখিলপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হলে কমিশনার তাকে নোটিশ দেবেন। তার ২১ দিনের মধ্যেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দাখিলপত্র পেশ না করলে কমিশনার তাকে ২১ দিনের সময় দিয়ে আরেকটি নোটিশ দেবেন। দ্বিতীয় দফায় দেয়া ২১ দিনের মধ্যে দাখিলপত্র জমা দেয়া না হলে এনবিআর ভ্যাট অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আমদানি-রফতানি, উৎসে কর্তনযোগ্য কোনো পণ্য বা সেবা সরবরাহ সাময়িকভাবে স্থগিত করার জন্য বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর (বিআইএন) অকার্যকর (লক্ড) করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দাখিলপত্র পেশ করার ২ দিনের মধ্যে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর (আনলক্ড) হবে। তাছাড়া নতুন ভ্যাট আইনে এনবিআর কর্মকর্তাদের জন্য দায়মুক্তির কোনো ব্যবস্থা নেই। অর্থাৎ কোনো ভ্যাট কর্মকর্তা কোথাও অনিয়ম বা ভুলত্রুটি করলে সরল বিশ্বাসে করার কারণে দায় থেকে অব্যাহতি পেতেন না। এখন আইন সংশোধন করে কর্মকর্তাদের দায়মুক্তির ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। সেজন্য আইনে ১২৯ক ধারা নতুন করে সংযোজন করা হচ্ছে। তার পক্ষে এনবিআরের যুক্তি হলো, আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের জন্য অধিকাংশ সিভিল আইনে ‘সরল বিশ্বাসে কৃত কাজকর্ম রক্ষণ’মূলক একটি ধারা থাকে। মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২ বা মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা-২০১৬-এর অধীন সরল বিশ্বাসে কৃতকার্যের ফলে কোনো ব্যক্তির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সেজন্য সরকারি কর্মকর্তার কৃতকার্যের রক্ষণ-সংক্রান্ত বিধান থাকা যুক্তিযুক্ত। ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনেও এ ব্যবস্থা ছিলো।

সূত্র জানায়, ভ্যাট কর্মকর্তাদের দায়মুক্তি দিতে তৈরি খসড়া ১২৯ক-তে বলা হয়েছে, ‘এই আইন বা কোনো বিধির অধীনে সরল বিশ্বাসে কৃত কোনো কার্যের ফলে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকিলে তজ্জন্য সরকার বা উহার কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা বা অন্য কোনো আইনগত কার্যধারা দায়ের বা রুজু করা যাইবে না।’ নতুন ভ্যাট আইনে বকেয়া আদায়ের দায়িত্ব কমিশনারদের দেয়া হয়েছে। কিন্তু এনবিআর বলছে, শুধু কমিশনারদের পক্ষে বকেয়া আদায় করা সম্ভব নয়। ওই কারণে নতুন ভ্যাট আইনের ৯৫(১) ধারার পর (১ক) নামে নতুন একটি উপধারা সংযোজন করা হচ্ছে। তাতে বকেয়া আদায়ের জন্য ‘বকেয়া আদায় কর্মকর্তা’ নিয়োগ দেয়ারও সুযোগ রাখছে এনবিআর। এনবিআরের যুক্তি হলো, বর্তমানে বকেয়া কর আদায় ভ্যাট কর্মকর্তাদের একটি দৈনন্দিন ও গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। বকেয়া করের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে কারণে শুধু কমিশনার বকেয়া আদায়ের কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন তা বাস্তবসম্মত নয়। বকেয়া আদায় কার্যক্রম গতিশীল করতে প্রতিটি কমিশনারেটে কমিশনাররা ন্যূনতম ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদায় একজনকে বকেয়া আদায় কর্মকর্তা (ডেব্ট রিকভারি অফিসার-ডিআরও) হিসেবে নিয়োগ প্রদান করতে পারেন। তাছাড়া ভ্যাট আইন সংশোধনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বকেয়া আদায় কর্মকর্তার পদায়নের বিষয়টি খসড়া মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা-২০১৬-তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি আইনে অন্তর্ভুক্ত করাও জরুরি।

সূত্র আরো জানায়, ভ্যাট কর্মকর্তাদের মূল দায়িত্ব ভ্যাট আদায় হলেও ওই কাজের জন্য তাদের মোটা অঙ্কের অর্থ পুরস্কার ও প্রণোদনা দেয়ার বিধান যুক্ত হচ্ছে নতুন আইনে। তার জন্য ১২৬ক এবং ১২৬খ নামে নতুন ধারা যুক্ত করা হচ্ছে। কর্মকর্তাদের পুরস্কার ও প্রণোদনা দেয়ার বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে এনবিআর বলেছে, কর ফাঁকি, আইন লঙ্ঘন ইত্যাদি উদ্ঘাটনের জন্য প্রণোদনা প্রদান করা হলে তা রাজস্ব বিভাগের কর্মচারীদের উৎসাহিত করবে। কর ফাঁকি উদ্ঘাটন কার্যক্রম টেকসই করা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাসনিকভাবে চাঙ্গা রাখার জন্য এ বিষয়ে বিধান প্রণয়ন যুক্তিযুক্ত। চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তাবের ১২৬ক-তে পুরস্কার ও কর্মদক্ষতা প্রণোদনা প্রদান বিষয়ে বলা হয়েছে- এ ধারায় ভ্যাট কর্মকর্তা ও ভ্যাট দফতরে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘কর্মদক্ষতা প্রণোদনা’ দিতে পারবে এনবিআর। আর কর্মকর্তাদের আর্থিক প্রণোদনা ও পুরস্কার দেয়ার জন্য আগামী বাজেটে একটি তহবিল গঠন করারও প্রস্তাব থাকছে। ‘পুরস্কার ও কর্মদক্ষতা প্রণোদনা তহবিল’ নামের ওই তহবিলে অর্থ বরাদ্দ থাকবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য মোট কর রাজস্বের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ (১ শতাংশের অর্ধেক) পরিমাণ অর্থ প্রদানযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ ১০০ টাকার রাজস্ব আদায় করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রণোদনা হিসেবে পাবে ৫০ পয়সা। আর আগামী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা হিসাবে তার পরিমাণ দাঁড়াবে ১৪০০ কোটি টাকা।

সাম্প্রতিক