স্টাফ রিপোর্টার: দেশের বিমানবন্দরগুলোতে বেসরকারি এয়ারলাইন প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের যন্ত্রপাতি ব্যবহারে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএটিএ) মানদ- অনুসরণ করছে না। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে ২৬৬টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। আর ওসব ফ্লাইট ওঠানামার কার্যক্রম পরিচালনা করে ২৭টি বিদেশী ও ৪টি দেশী এয়ারলাইন। তার মধ্যে নিজস্ব ও বিদেশী সব এয়ারলাইনসেরই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের। তবে দেশের বেসরকারি এয়ারলাইনগুলো নিজ উদ্যোগেই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। কিন্তু ওসব প্রতিষ্ঠান শাহজালাল বিমানবন্দরে রানওয়েতে উড়োজাহাজ টেনে নেয়ার জন্য যেসব পুশ কার্ট ব্যবহার করে, সেগুলো আসলে কৃষিকাজে ব্যবহৃত সাধারণ ট্রাক্টরের রূপান্তরিত সংস্করণ। সোনালিকা ও মাহিন্দ্র ব্র্যান্ডের ট্রাক্টরগুলোয় একটু অদল-বদল এনে বানানো হয়েছে ওসব পুশ কার্ট। একইভাবে যাত্রীদের উড়োজাহাজে ওঠানামায় ব্যবহৃত সিঁড়িগুলোও স্থানীয়ভাবে তৈরি, যা আইএটিএ অনুমোদিত নয়। ওসব যন্ত্রপাতির কারণে উড়োজাহাজের কোনো ধরনের ক্ষতি হলে এয়ারলাইনগুলোর বীমাদাবি আদায় নিয়েও জটিলতার আশঙ্কা রয়েছে। বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিমানবন্দওে বিমান অবতরণের পর রানওয়ে থেকে অ্যাপ্রোন এরিয়া ও বোর্ডিং ব্রিজের কাছাকাছি এলে উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ করে রাখা হয়। ওই সময় সাধারণত পুশ কার্টে মাধ্যমে টেনে উড়োজাহাজ বোর্ডিং ব্রিজর কাছে নিয়ে আসা হয়। একইভাবে যাত্রীদের বোর্ডিং শেষে পুশ কার্টের মাধ্যমেই উড়োজাহাজটিকে বোর্ডিং ব্রিজ থেকে অ্যাপ্রোন এরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে ইঞ্জিন চালু করে উড়োজাহাজ সচল হয়। আবার উড়োজাহাজ থেকে যাত্রীদের মালামাল নামিয়ে টার্মিনালে আনা ও বহির্গমনের ক্ষেত্রে সেখান থেকে উড়োজাহাজের কাছে নিয়ে যেতেও ব্যবহার করা হয় টো ট্রাক। পাশাপাশি পয়োনিষ্কাশনের জন্য ওয়েস্ট কার্ট, বিদ্যুতের জন্য পাওয়ার কার্ট ইত্যাদিও ব্যবহার করা হয়। বিমানবন্দরে ব্যবহৃত ওই ধরনের প্রতিটি যন্ত্রের জন্যই আইএটিএর মানদ- ঠিক করা রয়েছে, যা এয়ারলাইন কমপ্লায়েন্সের জন্যও অত্যাবশ্যকীয়।
সূত্র জানায়, ১৯৮৩ সাল থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজে নিযুক্ত রয়েছে। ওই নিযুক্তি কোনো নির্দিষ্ট বিধিমালার আলোকে ঘটেনি। পাশাপাশি দেশী কয়েকটি বেসরকারি এয়ারলাইন বিমানবন্দরে নিজেদের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে এমন অনেক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছে, যা আইএটিএ নির্দেশনার পরিপন্থী। ওই কারণে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্বটি বেবিচকের হাতে দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। যদিও দেশের বিমানবন্দরগুলোতে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়লেও তার আনুপাতিক হারে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অবকাঠামোগত বিস্তার ও জনবল বাড়ানো হয়নি। তারপরও বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কার্যক্রমের দায়িত্ব বিমানের কাছ থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে হস্তাস্তরের সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি অ্যাপ্রোন এলাকায় রক্ষিত সব পরিত্যক্ত যন্ত্র ও সরঞ্জাম অপসারণ করাও জরুরি বলে তাগিদ দেয়া হয়েছে। কারণ তার মাধ্যমে ফরেন অবজেক্ট ডেবরিজ (এফওডি) থেকে রক্ষা পেতে পারে উড়োজাহাজ।
এদিকে বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ে মানসম্মত যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করা প্রসঙ্গে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফ জানান, পুশ কার্টের ক্ষেত্রে আইএটিএ যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছে, সেগুলো অনেক ব্যয়বহুল। বেসরকারি এয়ারলাইনগুলো ওই ধরনের যন্ত্র কিনতেও আগ্রহী। কিন্তু বেবিচকের কাছে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের যন্ত্রপাতি রাখার জায়গা চেয়েও পাওয়া যায় না। অতিরিক্ত দামের ওসব যন্ত্র কিনে খোলা আকাশের নিচে মাসের পর মাস অরক্ষিত রেখে নষ্ট করা একটি বেসরকারি এয়ারলাইনের পক্ষে সম্ভব নয়। মূরত ওই কারণে বাধ্য হয়েই এয়ারলাইনগুলো সাধারণ ট্রাক্টরকে পুশ কার্টে রূপান্তর করে ব্যবহার করছে। যাতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তা নষ্ট হয়ে গেলেও আর্থিক ক্ষতি কম হয়।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বেবিচকের সদস্য (অপারেশন অ্যান্ড প্ল্যানিং) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জিএসই ব্যবহারে আইএটিএর নির্দেশনা অনুসরণ নিয়ে কার্যক্রম চালু রয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে অগ্রগতি দেখা যাবে।
Â
< Prev | Next > |
---|