স্পোর্টস ডেস্ক : তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৯০ রানের বিশাল ব্যবধানে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ। টাইগারদের ৩২৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২৩৪ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। এতে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে গেল মাশরাফি বাহিনী।
মুস্তাফিজ তিনটি এবং মাশরাফি ও মিরাজ পান দুটি করে উইকেট। এ ছাড়া সাকিব ও তাসকিন তুলে নেন একটি করে উইকেট।
শূন্য রানেই প্রথম উইকেট হারায় স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। ফিল্ডিংয়ে নেমে বাংলাদেশের পক্ষে বোলিং শুরু করেন অধিনায়ক মাশরাফি। লঙ্কানদের হয়ে ইনিংস শুরু করেন দাসুনকা গুনাথিলাকা ও উপুল থারাঙ্গা। ইনিংসের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই গুনাথিলাকাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন ম্যাশ। রিভিউ নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি তার।
ইনিংসের পঞ্চম ওভারে কুশল মেন্ডিসকে (৪) বিদায় করেন অভিষিক্ত মিরাজ। দলীয় ১৫ রানে শুভাগতর তালুবন্দি হন মেন্ডিস।
ইনিংসের ১১তম ওভারে তাসকিনের শেষ বলে মাশরাফির তালুবন্দি হয়ে ফেরেন ওপেনার উপুল থারাঙ্গা (১৯)। দলীয় ৩১ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
এরপর চান্দিমাল ও গুণারত্নে গড়েন ৫৬ রানের জুটি। ইনিংসের ২৪তম ওভারে সাকিবের ঘূর্ণিতে মোসাদ্দেকের দারুণ এক ক্যাচে ফেরেন ২৪ রান করা গুনারত্নে। দলীয় ৮৭ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
এরপর আবারও আঘাত হানেন মিরাজ। এবার সৌম্যের হাতে ধরা পড়েন চান্দিমাল (৫৯)। দলীয় ১২১ রানে পঞ্চম উইকেট হারানোর পর ১৫৩ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। মুস্তাফিজের বল তুলে মারতে গিয়ে শুভাগত হোমের তালুবন্দি হন মিলিন্দা সিরিবর্ধানে (২২)।
ইনিংসের ৩৮তম ওভারে আবারও বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন মাশরাফি। ৩১ রানে রিয়াদের হাতে ক্যাচে তুলে বিদায় নেন সাচিথ পাথিরানা। দলীয় ১৭১ রানের মাথায় সপ্তম উইকেট হারায় লঙ্কানরা।
এরপর ৪১তম ওভারে দলীয় ২০৮ রানের মাথায় সুরাঙ্গা লাকমলকে ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজ। ব্যক্তিগত ৮ রানে সাব্বিরের হাতে ধরা পড়েন লাকমল।
রনগিরি ডাম্বুলা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডেতে বেলা ৩টায় মুখোমুখি হয় শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন লঙ্কান দলপতি উপুল থারাঙ্গা।
তামিমের শতকে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩২৪ রান তোলে সফরকারীরা। টাইগার ওপেনার তামিমের সেঞ্চুরির সঙ্গে ছিল সাকিব ও সাব্বিরের দুর্দান্ত অর্ধশত রানের ইনিংস।
টাইগারদের হয়ে ইনিংস শুরু করতে নামেন বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ১০ রানে বিদায় নেন সৌম্য। লাকমলের করা চতুর্থ বলে ফ্লিক করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে দিনেশ চান্দিমালের গ্লাভসবন্দি হন তিনি। দলীয় ২৯ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
১৯তম ওভারে টাইগারদের শত রান পূর্ণ হয়। ২০তম ওভারে ওয়ানডেতে ক্যারিয়ারের চতুর্থ অর্ধশতকের দেখা পান সাব্বির। ৪৮ বলে ৯টি চারের সাহায্যে ৫০ করেন সাব্বির। এরপর ২২তম ওভারে গুণারত্নের বলে থারাঙ্গার তালুবন্দি হন তিনি। ৫৬ বলে ৫৪ রানের ইনিংসে ১০টি চার হাঁকান সাব্বির।
দলীয় ১১৯ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর তামিম-সাব্বির জুটি যোগ করে ৯০ রান। সাব্বিরের বিদায়ে মাঠে আসেন মুশফিক। সান্দাকানের করা ২৩তম ওভারে বোলারের হাতেই ক্যাচ দিয়ে ১ রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
সাময়িক বিপর্যয় কাটিয়ে সাকিব-তামিমের ব্যাটে এগুতে থাকে টাইগাররা। এরপর ২৬তম ওভারে ওয়ানডেতে ৩৫তম অর্ধশতকের দেখা পান তামিম। ৭৫ বলে তার অর্ধশত রানের ইনিংসে ছিল ছয়টি চারের মার। ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি করেন ১২টি চারের সাহায্যে ১২৭ বলে।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৩তম অর্ধশতক হাঁকিয়ে সাকিব বিদায় নেন ৭২ রান করে। ৭১ বলে চারটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান সাকিব। দলীয় ২৬৪ রানের মাথায় চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সাকিব-তামিম জুটি থেকে আসে ১৪৪ রান।
এরপর দলীয় ২৮৯ রানের মাথায় টাইগারদের পঞ্চম ব্যাটসম্যান হয়ে সাজঘরে ফেরেন তামিম। ইনিংসের ৪৮তম ওভারে ১২৭ রানে কুমারার বলে গুনাথিলাকার হাতে ধরা পড়েন তিনি। ১৪২ বলের ইনিংসটিতে তামিম ১৫টি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান।
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৭ বলে একটি ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ১৩ রানে। শেষ সময়ে ব্যাটে ঝড় তুলে ৯ বলে তিনটি চার আর একটি ছক্কায় ২৪ রানে অপরাজিত থাকেন মোসাদ্দেক হোসেন।
এ ম্যাচে বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয় মেহেদি হাসান মিরাজের। ১৯ বছর বয়সী মিরাজ বাংলাদেশের ১২৩তম ওয়ানডে ক্রিকেটার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩২৪/৫ (তামিম ১২৭, সাকিব ৭২, সাব্বির ৫৪, মোসাদ্দেক ২৪*, মাহমুদউল্লাহ ১৩*; লাকমাল ২/৪৫, গুনারত্নে ১/৪০, সান্দাকান ১/৪৩)।
শ্রীলঙ্কা: ৪৫.১ ওভারে ২৩৪ (চান্ডিমাল ৫৯, পেরেরা ৫৫, পাথিরানা ৩১, গুনারত্নে ২৪; মুস্তাফিজ ৩/৫৬, মাশরাফি ২/৩৫, মিরাজ ২/৪৩, সাকিব ১/৩৩, তাসকিন ১/৪১, মোসাদ্দেক ০/২১)।
ফল: বাংলাদেশ ৯০ রানে জয়ী।
প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ: তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)।
ওয়ানডে অভিষেক: মেহেদি হাসান মিরাজ (বাংলাদেশ)।
< Prev | Next > |
---|