pilkhanaঢাকা : পিলখানা হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আসামিদের আপিলের ওপর আজ বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে শুনানি শেষ হয়েছে। শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য সুনির্দিষ্ট দিন ধার্য না করে অপেক্ষমাণ রেখেছে আদালত। বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ শুনানি নিয়ে মামলটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে।

পিলখানা হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত ও খালাসপ্রাপ্ত প্রায় ৬০০ জোয়ানের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে সরকারের করা পৃথক তিনটি আপিল খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্টে। সরকার এসব আপিল ১০৬৩ দিন বিলম্বে দাখিল করেছিল। কিন্তু হাইকোর্ট বিলম্ব মার্জনার দরখাস্ত মঞ্জুর করেনি। ফলে আপিলগুলো খারিজ হয়ে যায়। বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেয়।

২ এপ্রিল সরকার এসব জোয়ানদের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল দায়ের করেছিল। এ আপিল দায়েরের বিষয়টি আদালতে তুলে ধরেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সারওয়ার কাজল।

পিলখানা হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানির জন্য ২০১৫ সালে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হয়। বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চে ওই বছরের জানুয়ারি মাসে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার। ইতমধ্যে ৩৬৪ কার্যদিবসব্যাপী ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক পাঠ করা হয়েছে ১২৪ কার্যদিবস। বাকি ২৪০ কার্যদিবস রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করেছেন।

এ অবস্থায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাষ্ট্রপক্ষ সময় চেয়ে আবেদন করে। এরপর হাইকোর্ট ২ এপ্রিল পর্যন্ত এই মামলার শুনানি মুলতুবি করেন। এদিকে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা নিয়ে ২০০৯ সালে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রকাশিত সচিত্র (ভিডিও) প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ ধরনের বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলের প্রতিবেদনের সিডি এই মামলার সাক্ষ্য হিসাবে বিচারিক আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এরপর ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানিতে ওইসব ঘটনার ভিডিও সিডি হাইকোর্টে প্রদর্শন করা হয়। প্রদর্শনের সময় যখন নিহত সেনা কর্মকর্তাদের লাশ উদ্ধার এবং তাদের স্বজনদের কান্নার দৃশ্য দেখানো হচ্ছিল তখন আদালত কক্ষে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে।

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতর পিলখানায় বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। এতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়। পরবর্তীকালে মামলা দুটি স্থানান্তর হয় নিউমার্কেট থানায়। হত্যা মামলায় মোট আসামি ছিল ৮৫০ জন। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে এ বিডিআরের উপসহকারি পরিচালক (ডিএডি) তৌহিদুল আলমসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, আওয়ামী লীগের নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২৫৬ জনকে। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পেয়েছেন ২৭৭ জন। এই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছাড়া ৬০০ জন আসামির বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিলে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে বলে জানান জাহিদ সারওয়ার কাজল।

সাম্প্রতিক