স্টাফ রিপোর্টার: নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলা ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির বিধান থাকলেও অনেক মামলাই চলছে বছরের পর বছর। ফলে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালগুলোতে বিপুলসংখ্যক মামলার জট লেগেছে। বর্তমানে ১৮ জেলাতেই ট্রাইব্যুনাল নেই। আর জেলা জজ অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলার বিচার কার্যক্রম চালাচ্ছেন। আর গত দুই বছর ধরেই ওই জেলাগুলোতে ৪১টি ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রক্রিয়া ঝুলে রয়েছে। বিগত ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮২টি মামলা বিচারাধীন ছিল। ওসবের মধ্যে ৪৬টি জেলার ৫৪টি ট্রাইব্যুনালে১ লাখ ৪১ হাজার ১৮৭টি এবং ট্রাইব্যুনাল না থাকা ১৮টি জেলায় ১৪ হাজার ৮৯৫টি মামলা রয়েছে। আর ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিচারাধীন মামলা ছিল ১ লাখ ৫২ হাজার ৩৫টি। আইন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আইন অনুযায়ী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলা ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে মামলা শেষ করার কোনো রেকর্ড নেই। বরং হাজারো মামলা রয়েছে যেগুলোর বিচারকাজ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলছে। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালগুলোতে মামলার সংখ্যা অনেক বেশি। পাশাপাশি ওসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। তাছাড়া মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১২ অনুযায়ী আলাদা কোনো ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়নি। বরং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকেই ওই আইনের মামলার বিচারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ফলে মানবপাচারের মামলাগুলোও নিষ্পত্তি হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলার বিচারে বিলম্ব হওয়ায় আসামি জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর ওই আইনের বেশির ভাগ মামলার আসামি প্রভাবশালী। ফলে জামিনে থেকে তারা নানাভাবে বিচারকাজকে প্রভাবিত করে। পাশাপাশি ওসব মামলার আইনজীবী ও বিচারকদের দক্ষতা বাড়াতেও সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমানে চট্টগ্রামের ৩টি ট্রাইব্যুনালে ১২ হাজার ৮১৩টি, ঢাকার ৫টি ট্রাইব্যুনালে ১২ হাজার ১২৬টি, খুলনার একটি ট্রাইব্যুনালে ৫ হাজার ১৪৩টি ও মৌলভীবাজারের একটি ট্রাইব্যুনালে পাঁচ হাজার ২৬টি মামলা বিচারাধীন। ফলে ট্রাইব্যুনালগুলোতে মামলার পরিমাণ বেশি হওয়ায় আইন-নির্দিষ্ট সময়ে বিচার শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগপত্র দেরিতে জমা পড়ে। সাক্ষীর অভাবেও বিচার ঝুলে থাকছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারকেই কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে।
সূত্র আরো জানায়, সুপ্রিম কোর্ট বিগত ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর ১৮টি জেলায় ৪১টি ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দেয়। তারপর মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করে। গতবছরের ৩ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয় তাতে অনুমোদন দেয়। তার আগে সম্মতি জানায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বর্তমানে রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও ভোলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নেই।
এদিকে এ প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ জানান, ওসব জেলায় জেলা জজরা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলার বিচার করছেন।
অন্যদিকে ওই প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জানান, ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল গঠনের কাজ প্রায় চূড়ান্ত। ওই সংক্রান্ত ফাইল অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রয়েছে। আশা করা যায় শিগগির অনুমোদন মিলবে।
Next > |
---|