স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদীতে স্কুলের শরীরচর্চা শিক্ষকের বিরুদ্ধে দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের হাত থেকে স্কুল ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের রক্ষায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা।
এ ঘটনায় শরীরচর্চা শিক্ষক সৈয়দ এনামুল হককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় শিক্ষকের লোকজন সংখ্যালঘু স্কুলছাত্রীর বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় অস্ত্রের মুখে ছাত্রীর বাবাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ ও নির্যাতনের শিকার স্কুলছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আলীজান জে এম একাডেমির শরীরচর্চা শিক্ষক সৈয়দ এনামুল হক বিভিন্ন অজুহাতে ছাত্রীদের শরীরে হাত দেন।
তিন বছর আগে শিক্ষক এনামুল তাঁর স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে সাজেশন দেওয়ার কথা বলে ছাত্রীকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যায়। তিনি ওই ছাত্রীর ওপর নির্যাতন চালানোর চেষ্টা করেন। পরে ছাত্রী চিৎকার করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। এ ঘটনায় ছাত্রীর বাবা স্কুলের প্রধন শিক্ষকের কাছে অভিযোগ করেন। জানা গেছে, সন্তানের ওপর এমন নির্যাতনের খবরে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে (স্ট্রোক) দীর্ঘদিন হাসপাতালের বিছানায় পড়ে থাকেন।
লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হলেও সম্প্রতি ওই শিক্ষার্থীকে পুনরায় কুপ্রস্তাব দেন এনামুল। এতে রাজি না হলে শারীরিক শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) ও ক্যারিয়ার শিক্ষায় নম্বর কমিয়ে দেওয়া হবে বলে ছাত্রীকে হুমকি দেন। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন ছাত্রীর অভিভাবকরা। তাঁরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
সম্প্রতি এ ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করে সদর মডেল থানার পুলিশ। এতে নড়েচড়ে বসেন শিক্ষক সৈয়দ এনামুল হক ও তাঁর সহযোগীরা।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিক্ষককে আটক করে পুলিশ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এনামুলের স্বজনরা ৩০-৩৫ জন অস্ত্রধারী লোকজন স্কুলছাত্রীর বাসায় হামলা চালায়। অস্ত্রের মুখে ছাত্রী ও তার বাবাকে তুলে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে। স্কুলছাত্রীর বাবা অভিযোগ করে বলেন, আমি হিন্দু মানুষ। বিচার চেয়েও যেন ভুল করেছি। এখন বাড়িতে থাকার উপায় নেই। প্রতিমুহূর্তে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে থানায় মিথ্যে সাক্ষী দিতে বাধ্য করছে অস্ত্রধারীরা। শুধু তাই নয়, ওই শিক্ষকের কিছু হলে আমার পরিবারকে শেষ করে দেবে বলেও হুমকি দিয়ে গেছে।
স্কুলছাত্রীর বরাত দিয়ে সদর মডেল থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) বিল্লাল হোসেন বলেন, শিক্ষক এনামুল ছাত্রীকে নিয়ে ড্রিম হলিডে পার্কে বেড়াতে গিয়েছিলেন। অটো দিয়ে আসার সময় ছাত্রীর গায়ে হাত দেন। স্কুলের দুজন শিক্ষকও বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে প্রধান শিক্ষক কিছুই জানেন না বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।
আগামি শনিবার দুই পক্ষকে নিয়ে পুলিশ সুপারের অফিসে বসা হবে। সেখানে যে সিদ্ধান্ত হয়, সেটাই গ্রহণ করা হবে। এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শিক্ষক সৈয়দ এনামুল হক। তিনি বলেন, এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। শিক্ষক ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির দলাদলির শিকার হচ্ছি আমি। তবে কী কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে সে ব্যাপারে কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি। পুলিশ সুপার আমেনা বেগম বলেন, এসব ঘটনায় ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে ঘটনাটি বেশ পুরোনো। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। আদালতের মাধ্যমে নারী নির্যাতন আইনে মামলা হলে বিষয়টি আরো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা যাবে।
< Prev | Next > |
---|