স্টাফ রিপোর্টার: চট্টগ্রামে প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইলের শনাক্তকরণ নম্বর (আইএমইআই) পাল্টে ফেলতে সক্ষম একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে প্রযুক্তিতে অভিজ্ঞ এই অপরাধী চক্রটির অবস্থান।
পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, মোবাইল সেটের একমাত্র দালিলিক প্রমাণ আইএমইআই নম্বর পাল্টে ফেলার মতো প্রযুক্তি বাংলাদেশে সহজলভ্য ছিল না।
এক বছর ধরে ঢাকা-চট্টগ্রামে আইএমইআই পাল্টে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। চুরি-ছিনতাইয়ের মাধ্যমে পাওয়া মোবাইলের আইএমইআই অপরাধীরা রিয়াজউদ্দিন বাজারে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে নিয়ে পাল্টে ফেলছে। এতে মোবাইলের সিম এবং আইএমইআই ধরে অপরাধী গ্রেফতারে পুলিশের উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে।
জঙ্গিরাও এই প্রক্রিয়ায় আইএমইআই পাল্টে জঙ্গিবাদি কার্যক্রম চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি-পশ্চিম) এএএম হুমায়ন কবির। গত বৃহস্পতিবার রাতে রিয়াজউদ্দিন বাজারের সিডিএ মার্কেটে অভিযান চালিয়ে ন্যাশনাল মোবাইল টেকনোলজি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো.রফিক (৩৪) ও কর্মচারী মো.নূরুন্নবী লিটনকে (২৬) আটক করে পুলিশ।
এডিসি হুমায়ন কবির বলেন, অপরাধীরা মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তনের জন্য রিয়াজউদ্দিন বাজারে নিয়ে আসছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য এলাকার মোবাইল আসছে এখানে। চট্টগ্রামের মোবাইলগুলো যাচ্ছে ঢাকায়। এই নম্বর পাল্টে ফেলতে পারলে অপরাধীদের শনাক্ত করা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, চীনের তৈরি সব ধরনের দামি মোবাইল সেট, স্যামসাং, অপ্পোসহ কয়েকটি ব্র্যান্ডের সেটের আইএমইআই সহজেই পাল্টে ফেলা যায়। দঙ্গল নামে একটি ডিভাইস আছে যাতে বিশেষ ধরনের সিম থাকে। ওই সিমে অসংখ্য ১৪ ডিজিটের আইএমইআই সংযুক্ত থাকে। ওই ডিভাইস ব্যবহার করে পাল্টে ফেলা হচ্ছে শনাক্তকরণ নম্বর। তবে নকিয়া-আইফোন সেটের আইএমইআই পাল্টে ফেলা সহজ নয়। প্রত্যেক ব্র্যান্ডের জন্য আলাদা সফটওয়্যার আছে। সেই সফটওয়্যার যে কোন মোবাইল-ল্যাপটপে ব্যবহার করা যাবে না। এজন্য গেটওয়ে দরকার। সেই গেটওয়ে হচ্ছে দঙ্গল। আটক রফিক পুলিশকে জানায়, সাধারণ মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করতে আধাঘণ্টা সময় লাগে। স্মার্টফোনে লাগে সর্বোচ্চ দুইদিন।
তবে আইএমইআই পরিবর্তনের পর যদি সেট ফ্ল্যাশ করা হয় তাহলে আগের প্রকৃত নম্বরটি চলে আসে। প্রতিটি মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের জন্য ২-৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে বলে জানান এডিসি হুমায়ন কবির। রিয়াজউদ্দিন বাজারে ৮-১০টি সার্ভিসিং সেন্টারে আইএমইআই পরিবর্তনের কাজ হয়। শাহআমানত মার্কেটেও কয়েকটি আছে বলে আটক লিটন জানিয়েছে। তবে এই প্রযুক্তির ব্যবহার জানে এমন মানুষের সংখ্যা কম।
তিনি বলেন, চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত নির্দিষ্ট লোকজন আছে। তারাই মোবাইল সংগ্রহ করে সার্ভিসিং সেন্টারে নিয়ে যায় এবং টাকার বিনিময়ে আইএমইআই পাল্টে ফেলে। তবে সাধারণ গ্রাহকদের কথায় সাধারণত আইএমইআই পাল্টানো হয় না। আটক লিটন পুলিশকে জানায়, ঘনিষ্ঠজন কেউ নিয়ে আসলে তারা মোবাইলের আইএমইআই পাল্টে দেয়।
হুমায়ন কবির জানান, পাল্টে ফেলা ভুয়া আইএমইআই অনেক ক্ষেত্রে ৮-১০টি মোবাইলে ব্যবহার হয়। আবার নিরীহ গ্রাহকের প্রকৃত নম্বরও অনেক সময় ভুয়া আইএমইআই হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটনের পর নিরীহরাও পুলিশি ঝামেলায় পড়ছেন।
আটক রফিকের বাড়ি সাতকানিয়ার এওচিয়ার ছড়ারকূল গ্রামে। লিটনের বাড়ি একই উপজেলার খাগরিয়ার মৈষামুড়া গ্রামে। রফিকের দাবি, মোবাইলের লক খোলার জন্য ফ্ল্যাশ করার প্রয়োজন পড়ে। ফ্ল্যাশ দিলে আপনাআপনি আইএমইআই পাল্টে যায়। সরাসরি আইএমইআই পাল্টানোর কাজ তারা করে না। তবে লিটন একবছর আগ পর্যন্ত আইএমইআই পাল্টানোর কথা স্বীকার করেছে।
গত রমজানের সময় একটি মোবাইলের আইএমইআই পাল্টানোর সূত্র ধরে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ তাকে ধরে নেয়। এরপর থেকে সে আর এই কাজ করছে না বলে দাবি তার। তাদের কাছ থেকে আইএমইআই পাল্টানোর জন্য রাখা ১৪টি মোবাইল সেট, ১টি ল্যাপটপ ও ৪টি ট্যাব উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
< Prev | Next > |
---|