আন্তর্জাতিক ডেস্ক :মার্কিন কোম্পানির মেক্সিকোতে বিনিয়োগ পছন্দ নয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানাচ্ছে, ট্রাম্পের চারটি প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে মেক্সিকোতে ব্যবসার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সমালোচকদের দাবি, মেক্সিকোতে ব্যবসার অনুমোদন নিয়ে প্রেসিডেন্ট শপথ ভঙ্গ করেছেন। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের কথাটি ট্রাম্পের প্রচারণার অন্যতম অংশ। গতবছর ১৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনি প্রচারণাকালে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘মেক্সিকানরা যুক্তরাষ্ট্রে এসে চাকরি করেন, ব্যবসা করেন। কিন্তু মার্কিনিরা কিছুই পাননা।’ আর একইদিনে মেক্সিকোতে ট্রাম্পের কোম্পানির পক্ষে ট্রেডমার্কের জন্য আবেদন করে একটি আইনি সংস্থা। এরপর ট্রাম্পের আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানের জন্য আবেদন করা হয়। চারটি প্রতিষ্ঠানই মেক্সিকোতে অনুমতি পায়। সর্বশেষ ২১ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলো দেশটিতে ব্যবসার অনুমতি পায়।
এদিকে, মার্কিন বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানায়, চীনা সরকার ইতোমধ্যে ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩৮টি ট্রেডমার্ক অনুমোদন করেছে। এই বিষয়টি সামনে আসার পর ডেমেক্র্যাট সিনেটর ও সমালোচকদের তোপের মুখে পড়েন ট্রাম্প। তাদের অনেকেই ট্রাম্পকে ব্যবসায়িক সংশ্লিষ্টতা কমিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কারণ তা মার্কিন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সাম্প্রতিক এই ট্রেডমার্ক অনুযায়ী, মেক্সিকোতে কন্সট্রাকশন, হোটেল, হসপিটালিটি ও ট্যুরিজম, রিয়েল এস্টেট ব্যবসা করতে পারবেন ট্রাম্প। ২০২৬ সাল পর্যন্ত ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন তিনি। এর আগে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ব্যবসার অনুমোদন পেয়েছিলেন তিনি। তবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের বাইরে কোনও ব্যবসা না করারও শপথ নেন তিনি। সমালোচকরা বলছেন, হোয়াইট ছাড়ার পর ব্যবসার কথা চিন্তা করে হয়তো পদেক্ষপ নিচ্ছেন ট্রাম্প।
তবে ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠানের পদস্থ কর্মকর্তা অ্যালান গার্টেন দাবি করেছেন, ট্রাম্পের কারণে মেক্সিকোর সরকার বিশেষ কোনও সুবিধা দেয়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন নতুন কিছু পাইনি। আগেও আমরা এমন অনুমতি পেয়েছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ট্রাম্প এখন প্রেসিডেন্ট এবং বিদেশি ব্যবসা করা থেকে বিরত। তাই দুটি উদ্দেশ্যে এই ট্রেডমার্ক করা হয়েছে, ব্যবসার নতুন ক্ষেত্র তৈরি ও ট্রাম্পের নাম যেন কেউ ব্যবহার করতে না পারে।’
জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় হোয়াইট হাউসের প্রধান এথিক্যাল আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা রিচার্ড পেইন্টার জানান, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ‘কিছুটা আইনসিদ্ধ’ হতে পারে। তবে তিনি দায়িত্ব ছাড়ার পর এখান থেকে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মেক্সিকোর রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলেজান্দ্রো হোপ জানান, ‘ট্রেডমার্কের এই সিদ্ধান্তগুলো স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকে।
তবে এই সিদ্ধান্তটি হয়তো কৌশলগত।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনি প্রচারণার সময় যে মেক্সিকোর জোর সমালোচনা করেছিলেন, সেই মেক্সিকোতেই কিভাবে ব্যবসা করার কথা ভাবতে পারেন তিনি (ট্রাম্প)। এটা দেখে আমি ভীষণ অবাক হয়েছি।’ গত দশকে মেক্সিকোতে ট্রাম্প ও তার সন্তানরা বিলাসবহুল হোটেলের ব্যবসা শুরু করেন।
২০০৬ সালের ডিসেম্বরে ১৮৮টি ইউনিট ১২২ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে এই ব্যবসা ভেঙে পড়ে। তার ক্রেতারাও ক্ষতির সম্মুখীন হন। ২০১৩ সালের নভেম্বরে ক্ষতিগ্রস্ত ক্রেতাদের সঙ্গে আদালতে মীমাংসা করেন ট্রাম্প। ওই ক্রেতাদের ৭২ লাখ ৪০ হাজার ডলার দেন ট্রাম্প। এখনও মেক্সিকোতে ২০টি ট্রেডমার্ক ট্রাম্পের নিয়ন্ত্রণে। ট্রাম্প ওয়েশন রিসোর্ট ও ট্রাম্প আইলা কজুমেলসহ গলফ ক্লাব, স্পা সার্ভিস, অ্যালকোহলিক বেভারেজ ব্যবসা রয়েছে ট্রাম্পের।
সূত্র: এপি।
< Prev | Next > |
---|