bank allস্টাফ রিপোর্টার: সরকারি ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। গত এক বছরে দ্বিগুণ বেড়েছে সরকারি ৬টি ব্যাংকের লোকসানি সংখ্যা। সংশ্লিষ্টদের দাবি ওসব ব্যাংক যে পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করেছে তা বিতরণ করতে না পারার কারণেই আয় কমে ব্যয় বেড়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। একই সাথে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে। আবার নতুন পে-স্কেলও লোকসানি শাখার সংখ্যা বাড়িয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি লোকসানি শাখা রয়েছে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে রূপালী ব্যাংক। তারপর রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক। তাছাড়া সরকারি খাতের বিশেষায়িত ব্যাংক বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকেরও (বিডিবিএল) লোকসানি শাখা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত জুন শেষে সরকারি ৬টি ব্যাংকের মোট শাখা সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭১৬টি। যদিও ওসব ব্যাংকের নেতিবাচক সূচকের উন্নতির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে চুক্তি অনুসারে গতবছর শেষে ওসব শাখার মধ্যে মাত্র ৮৬টি লোকসানি শাখা থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে বিপরীত। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার পরিবর্তে বরং গত একবছরের ব্যবধানে লোকসানি শাখা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৫ সালের শেষে সরকারি মালিকানাধীন ওসব ব্যাংকে লোকসানি শাখা ছিল ২২২টি। আর গতবছর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯৩টিতে।

সূত্র জানায়, দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের মোট শাখা রয়েছে এক হাজার ২১১টি। তার মধ্যে গতবছর শেষে ২৩৩টি শাখা লোকসানে রয়েছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে চুক্তি অনুযায়ী ৩০টি শাখা লোকসানে থাকার কথা। আগের বছর ২০১৫ সালে লোকসানি শাখা ৩৫টিতে নামিয়ে আনার চুক্তি থাকলেও তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২৪টি। তাছাড়া ওই ব্যাংকের ২০১৩ সালে ৪৭টি এবং ২০১৪ সালে ৩১টি লোকসানি শাখা ছিল। আর সরকারি দ্বিতীয় বৃহত্তর ব্যাংক অগ্রণীর শাখা রয়েছে ৯২৫টি। এক বছরের ব্যবধানে ওই ব্যাংকের লোকসানি শাখা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। গত ২০১৫ সালে ব্যাংকটির লোকসানি শাখা ছিল ৩৪টি। এক বছওে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৮টিতে। যদিও গতবছরে তাদের লোকসানি শাখা ১০টিতে নামিয়ে আনার চুক্তি ছিল। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে তার আগের বছরে ১৫টি নামিয়ে আনতে ব্যাংকটি চুক্তি করে। তাছাড়া ব্যাংকটির গত ২০১৪ সালে ২১টি এবং ২০১৩ সালে ২৭টি শাখা লোকসান করে। একইভাবে জনতা ব্যাংকের ৯০৫টি শাখার মধ্যে গত ২০১৬ সালে লোকসানি শাখা দাঁড়িয়েছে ৪৮টি। এক বছরে লোকসানি শাখা বৃদ্ধির হার ৩ গুণেরও বেশি। আগের বছরে লোকসানি শাখা ছিল ১৫টি। আর গত ২০১৪ সালে ৪৩টি এবং ২০১৩ সালে ব্যাংকটির ৬০টি লোকসানি শাখা ছিল। যদিও ব্যাংকটি গত ২০১৫ সালে ৩৫টিতে এবং ২০১৬ সাল শেষে লোকসানি ৩০টিতে নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। আর রূপালী ব্যাংকের আগের বছরে যেখানে মাত্র ১০টি লোকসানি শাখা ছিল, গতবছর শেষে তা দাঁড়িয়েছে ৮৭টিতে। ব্যাংকটির মোট শাখা ৫৬১টি। গতবছর শেষে লোকসানি ১০টি কমিয়ে আনতে চুক্তিবদ্ধ ছিল ব্যাংকটি। আগের ২০১৩ সালে ৮টি এবং ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ১৩টি শাখা লোকসান করে।

সূত্র আরো জানায়, সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের মোট ৬৮টি শাখার মধ্যে ২৮টি শাখাই লোকসানে রয়েছে। আর গতবছর লোকসানে ছিল ব্যাংকটির ২৫টি শাখা। তবে আগের দুই বছরের তুলনায় বেসিক ব্যাংকের লোকসানি শাখা কমেছে। গত ২০১৩ সালে ৩৭টি এবং ২০১৪ সালে ৩৬টি লোকসানি শাখা ছিল। তাছাড়া বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) মোট শাখা ৩৯টি। সেখানে লোকসানি শাখাই ১৯টি। আর আগের বছর লোকসানি শাখা ছিল ১৪টি। ব্যাংক দুটির লোকসানি শাখা গতবছর শেষে ৩টিতে নামিয়ে আনার চুক্তি ছিল। তবে লোকসানি শাখার সংখ্যা বাড়ার বিষয়ে সরকারি ব্যাংকগুলোর কর্তৃপক্ষের মতে, নতুন পে-স্কেলে কর্মকর্তাদের বেতনভাতা প্রদান ব্যাংকগুলোর জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে লোকসানি শাখা বাড়া প্রসঙ্গে রূপালী ব্যাংকের এমডি মো. আতাউর রহমান প্রধান জানান, আগে অনেক খেলাপি ঋণকে নিয়মিত দেখিয়ে তার বিপরীতে আয় দেখানো হয়। ফলে কারসাজির মাধ্যমে মুনাফা বেড়েছে। কিন্তু তা বাদ দিয়ে ব্যাংকের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে সঠিক হিসাবায়ন করা হয়। ফলে মুনাফা থেকে লোকসানে পড়তে হয়েছে। পাশাপাশি একদিকে বেতন বাড়ানো হয়েছে, অন্যদিকে ঋণের সুদ হার কমছে। আবার বাড়ছে খেলাপি ঋণও। সব মিলিয়ে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। সেজন্য লোকসানি শাখার পরিমাণও বেড়েছে।

অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওবায়েদ উল্ল্যাহ আল মাসুদ জানান, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি বলে লোকসানে পড়তে হয়। আয় বাড়াতে হলে ঋণ বিতরণ বাড়াতে হবে। কিন্তু নানা কারণে ঋণ বিতরণ বাড়ানো যাচ্ছে না। সোনালী ব্যাংক সংগৃহীত আমানতের মাত্র ৩৮ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পেরেছে। তবে নিয়মের মধ্য থেকে ঋণ বিতরণ বাড়াতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া বেশকিছু গ্রাহক ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছে না। ফলে খেলাপি ঋণও বাড়ছে। ওসব কারণে ব্যাংকের আয় কমে গিয়ে লোকসানে পড়তে হচ্ছে।

সাম্প্রতিক