স্টাফ রিপোর্টার: স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ৩৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে বেঁধে দেওয়া ৬ মাস সময় শেষ হবে আগামী জুন মাসে।
এসময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ব্যর্থ হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৩১শে ডিসেম্বর স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া নিয়ে বেঁধে দেওয়া চতুর্থ দফা সময়সীমা শেষ হয়। এর আগে গত ছয় বছরে তাদেরকে চার দফায় সময় দেয়া হয়েছে। কিন্তু পুরোনো ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এখনো ৩৯টি পুরোপুরিভাবে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। তবে কেউ কেউ আংশিক গেছে, কেউ কেউ জমি কিনেছে, কেউ নকশা পর্যায়ে আছে, একটি জমিও কেনেনি। পূর্ণাঙ্গভাবে নিজস্ব ক্যাম্পাসে গেছে ১২টি।
বিশ্ববিদ্যালয় মালিকদের মতে, স্থায়ী ক্যাম্পাস কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-নিষ্ঠার, বিশেষত শিক্ষার মানের একমাত্র নিয়ামক নয়। সর্বোচ্চ আন্তরিতা সত্ত্বেও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নির্দিষ্ট সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। তারা বলছেন, স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এরইমধ্যে জমি কিনেছে। এর মধ্যে অনেকগুলো রাজউক থেকে নকশাও অনুমোদন নিয়েছে। কিন্তু সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা এবং বিধিমালার বিভিন্ন শর্তের কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করতে পারছে না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির বক্তব্য, একটি স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে যে ব্যয় তা জোগাতে ব্যাংকঋণের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের জমি বন্ধক রেখে ব্যাংকঋণ নিতে পারে না। কোনো ব্যক্তির একক চেষ্টায় অখ- এক একর নিষ্কণ্টক জমি সীমাহীন উচ্চমূল্যে কিনে আবার একক চেষ্টায় ভবন নির্মাণ করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য।
এ ধরনের দীর্ঘসূত্রতার কারণে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে বিলম্ব ঘটে থাকে। এ কারণে ঋণ গ্রহণের সুবিধার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর সংশ্লিষ্ট ধারারও সংশোধন চায় তারা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া নিয়ে গতমাসে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইউজিসি’র কার্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নেতৃেত শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি’র যৌথ বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব ক্যাম্পাসে না যাওয়াসহ অন্যান্য সমস্যা চিহ্নিত করার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কমিটির প্রধান করা হয় ইউজিসি’র সদস্য অধ্যাপক আখতার হোসেনকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ইউজিসি’র সদস্য এম. শাহ্ নেওয়াজ আলী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী, ইউজিসি’র উপ-পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) জেসমিন পারভীন। জেসমিন পারভীনকে ওই কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, এ কমিটি আগামী ৩০শে জুনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেবে। তবে এর আগেও তারা সময়ে সময়ে জরুরি ভিত্তিতে সুপারিশ করবে। এর ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে স্থায়ী না যাওয়া ৩৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমস্যার কথা আলোচনা হয়। নির্দিষ্ট সময়ে ক্যাম্পাসে না যাওয়া প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া যায় তা জানতে চান শিক্ষামন্ত্রী।
বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এ বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী তাদের সাময়িক অনুমতি বাতিলসহ বিভিন্ন ব্যবস্থার কথা জানান। এ ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ, সমাবর্তন ও শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রাখা, একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নিয়োগকৃত ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগ বন্ধ করতে প্রেসিডেন্ট কার্যালয়কে সুপারিশ করা যায়।
পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে শিক্ষামন্ত্রী, সচিব, ইউজিসি’র সদস্য আখতার হোসেন আলাদা বৈঠকে বসেন। সেখানে কমিটি গঠনসহ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়ার সিদ্ধান্ত আসে। বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী মালিকদের নানা দাবির বিষয় তুলে বলেন, তাদের কিছু দাবি যুক্তিসঙ্গত বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।
সুতারাং তাদের আরও কিছু সময় দেয়া প্রয়োজন। এ সংত্রুান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জানান, আমাদের উদ্দেশ্য বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করা নয়। আমাদের উদ্দেশ্য এগুলো আরও ভালোভাবে চলুক। তবে আজকেই তো কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারি না। সমস্যা চিহ্নিত করার জন্য কমিটি করা হয়েছে। তারা সমস্যা চিহ্নিত করবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
< Prev | Next > |
---|