remittaceস্টাফ রিপোর্টার: গত ফেব্রুয়ারিতে রেমিটেন্সে ধস নেমে এসেছিল। সূত্রমতে, ফেব্রয়ারি মাসে মাত্র ৯৩ কোটি ৬২ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা গত পাঁচ বছরে কোনো একক মাসের প্রবাসী আয়ের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে ২০১১ সালের নভেম্বরে ৯০ কোটি ডলারের রেমিটেন্স বাংলাদেশে এসেছিল। তবে মার্চ মাসে এ অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। মার্চে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ১০৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

এ হিসেবে গত ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে রেমিটেন্স কিছুটা বেড়েছে। তবে গত বছরের মার্চের তুলনায় তা অনেক কম। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রেমিটেন্স এসেছিল ৯৪ কোটি ডলার এবং গত বছরের মার্চে এসেছিল ১২৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। আর চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) প্রবাসী আয় এসেছে ৯১৯ কোটি ডলার।

গত অর্থবছরের (২০১৫-১৬) একই সময়ে এসেছিল এক হাজার ১০৫ কোটি ডলার। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরে রেমিটেন্স কমেছে ১৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। রেমিটেন্স কমে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সব মহল। সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রবাসী আয় কমার কারণ জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া গিয়েছিল। সেখানকার প্রবাসীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দলটি একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রেমিটেন্স বাড়ানোর বিষয়ে নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, রেমিটেন্স যখন কম, তখন চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে দুই হাজার ৫৯৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি। মূলত তৈরি পোশাক রপ্তানির উপর ভর করেই এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। তবে এই নয় মাসে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ আয় কম এসেছে।

সর্বশেষ মার্চ মাসে গত বছরের মার্চের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ আয় বেশি হয়েছে। এই মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ২ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি মাসে গত বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে সাড়ে ৪ শতাংশ রপ্তানি আয় কম এসেছিল। ওই মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছিল ১০ শতাংশ। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে প্রায় ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।

কিন্তু এবার সেই ইতিবাচক ধারা ধরে রাখা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা এজন্য ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের দাম কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন। রেমিটেন্সের অধঃগতিতে চিন্তিত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আমাদের অর্থনীতিতে বর্তমানে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

এরমধ্যে প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রেমিটেন্সের কম প্রবাহ। আমাদের প্রবাসী আয়ের বড় অংশ আসছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। এসব দেশের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। তেলের দামও সেভাবে বাড়েনি, ফলে বাজেট ঘাটতি হয়েছে। এ কারণে সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের আয় কমে গেছে। অনেকের বেতনও কমে গেছে, চাকরিও হারিয়েছে কেউ কেউ। এ কারণে প্রবাসী আয় কমে গেছে।

সূত্র জানায়, প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার কারণ খুঁজতে গবেষণা শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রবাসী আয়ের নিম্নগতি ঠেকাতে গবেষণার ফল অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে রপ্তানি আয় বৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

কিন্তু গত অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে এ আয় কম হওয়ায় তা পুরোপুরি সন্তোষজনক নয়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের সর্বশেষ হালনাগাদ থেকে দেখা যায়, চলতি (২০১৬-১৭) অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ২ হাজার ৫৯৪ কোটি ৬০ লাখ (২৫.৯৪ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে দুই হাজার ৯২ কোটি ৮৮ লাখ (২০.৯২ বিলিয়ন) ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে।

প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। এরমধ্যে নিট খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। উভেনে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ মাত্র দশমিক ১৮ শতাংশ। তৈরি পোশাক খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ শতাংশ আয় কম এসেছে। তবে মোট রপ্তানির প্রায় ৮২ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। গত অর্থবছরের এই নয় মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে ২ হাজার ৪৪ কোটি (২০.৪৪ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছিল। বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পোশাকের দরপতন হয় ৩ দশমিক ৮১ শতাংশ।

ওই বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশে গড়ে দরপতন হয় দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পোশাকের দরপতন হয় ১ দশমিক ১ শতাংশ।

ইউরোপের বাজারে দর কমেছে ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। এছাড়া, জুলাই-মার্চ সময়ে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি থেকে আয় কমেছে ৩ দশমিক ২৯ শতাংশ। চামড়া রপ্তানি ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ কমলেও চামড়াজাত পণ্যে রপ্তানির বেড়েছে ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। জুতা রপ্তানি বেড়েছে আরও বেশি ১৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৩ শতাংশের মত। এছাড়া ওষুধ রপ্তানি ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে ৩ হাজার ৭০০ কোটি (৩৭ বিলিয়ন) ডলার। গত অর্থবছরে (২০১৫-১৬) পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৪২৫ কোটি ৭১ লাখ (৩৪.২৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০১৪-১৫) চেয়ে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি।

সাম্প্রতিক