bnp-logoস্টাফ রিপোর্টার: ঢাকায় ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবসের’ সমাবেশ করতে না দেওয়ার প্রতিবাদে আজ রোববার সারাদেশে বিক্ষোভ করবে বিএনপি।

গতকাল শনিবার সকালে পুলিশবেষ্টিত নয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আমি বিএনপির পক্ষ থেকে সরকার কর্তৃক আজকের কর্মসূচিতে বর্বরোচিতভাবে বাধা দেওয়ার তীব্র নিন্দা, ঘৃণা ও ধিক্কার জানাচ্ছি।

আজকে কর্মসূচি করতে না দেওয়া এবং গত ৫ জানুয়ারি সারাদেশে আমাদের ঘোষিত কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে আমরা সারাদেশে মহানগর ও জেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। রাজধানী ঢাকার প্রতিটি থানায় বিক্ষোভ হবে বলে জানান রিজভী।

দশম সংসদ নির্বাচনের দিনটি ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস হিসেসে পালন করে বিএনপি। এবছর দিনটিতে সারাদেশে কালো পতাকা মিছিল করলেও ঢাকায় দুদিন পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের পরিকল্পনা করেছিল তারা। তবে সমাবেশের অনুমতি পায়নি বিএনপি। না দেওয়ার বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকেও এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

২০১৫ সালে ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করতে না পেরে লাগাতার অবরোধ ডেকেছিল বিএনপি; তিন মাসের ওই কর্মসূচিতে নাশকতায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাদের এবারের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ বললেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, বিএনপি আবারও পরিস্থিতি সহিংস করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে না দেওয়ায় আবারও প্রমাণিত হল, তারা (সরকার) গণতন্ত্রের সকল দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়েছে।

নাগরিক স্বাধীনতার গলায় ফাঁসি দড়ি লটকিয়ে দিয়েছে। নিঃশব্দ বোবাকণ্ঠই আওয়ামী বাকশালীদের কাছে প্রিয়। রিজভী বলেন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছে। সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও একই যুদ্ধংদেহী পরিবেশ বিরাজমান।

আজ ক্রসফায়ারে নিহত লাশ ও আটক বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বন্দিশালার উপর, গুম-খুন হয়ে যাওয়া সন্তানদের মায়ের অশ্রুজলের উপর বিরোধী দলের কর্মসূচিকে থেঁতলে দেওয়ার জন্য জলকামান আর আর্মার্ড কারের উপর আওয়ামী গণতন্ত্রের পতাকা উড়ে, বলেন তিনি। সরকারকে হুঁশিয়ার করে বিএনপি নেতা বলেন, পরিণতিতে আপনাদের পরিস্থিতি যদি হয় ভয়াবহ, তাহলে আপনাদের জন্য কান্না ও হায়-হুতাশ করার লোকও খুঁজে পাবেন না। আওয়ামী লীগের বর্তমান সরকার আমলে বিরোধী দল বিশেষ করে নারীদের উপর নির্যাতনের মাত্রা অতীতের যে কোনো সময়কে ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি করেন রিজভী।

বৃহস্পতিবারের কর্মসূচিতে বাধার ঘটনাগুলো তুলে ধরে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, বরিশালে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা হামলা চালিয়ে মহিলা কাউন্সিলরসহ মহিলা দলের অর্ধশত নেতা-কর্মীকে নির্যাতন করে মারাত্মক আহত করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাদের বিভিন্ন বাহিনী ও দলীয় ক্যাডাররা নারী নির্যাতনের প্রতিযোগিতাকে অলিম্পিকের স্তরে উন্নীত করেছে। ভিন্নমত সরকার সহ্য করতে পারছে না দাবি করে রিজভী বলেন, বিরোধী দলের নিশ্চিহ্ন করার জন্যই অনাচারের পথ বেছে নিয়েছে সরকার। এই পথ বেছে নেওয়ার জন্যই অপরাধীরা আশকারা পাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সংগঠন নিজেই যেন অপরাধীদের প্রজনন খামার।

গতকাল শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি না পাওয়ার প্রতিবাদে রোববার সারাদেশে বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করেন রিজভী। বিএনপি ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় যেতে চাইছে বলে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় উল্টো ক্ষমতাসীন দলটির বিরুদ্ধেই একই অভিযোগ করেছেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতার উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসে আছে।

দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে। এখন র‌্যাব-পুলিশ ও অদৃশ্য ক্ষমতার জোর আপনাদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে। আজ দেশে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই। রিজভী বলেন, এরশাদ একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করেছেন যখন, আজকে যিনি প্রধানমন্ত্রী তিনি বলেছিলেন, ‘আই অ্যাম নট আনহ্যাপি’। এটা কী ষড়যন্ত্রের অংশ নয়-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে জানতে চাই।

মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সংবিধান বহির্ভূতভাবে দুই বছর ক্ষমতায় ছিলেন এবং আপনারা তাদের বলেছেন, আন্দোলনের ফসল এবং তারা যা কিছু করবেন- সেটা বৈধতা দান আপনারা করবেন। এরকম একটা অনিয়মতান্ত্রিক অবৈধ সরকারকে সমর্থন করলেন, তারা কী ষড়যন্ত্রকারী নয়? আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে এই দুই বিষয়ে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা দাবি করেন বিএনপি নেতা।

সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, সহ দপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। বেলাল বলেন, গত ২৮ ডিসেম্বর সমাবেশের ঘোষণা দেওয়ার পর পুলিশ ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের কাছে চিঠি দেওয়া হলেও তাদের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে, দশম সংসদ নির্বাচনের বছরপূর্তি উপলক্ষে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার মধ্যে নয়া পল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে ফেলে পুলিশ। গতকাল শনিবার সকাল থেকে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশর অবস্থান নেয়। কার্যালয়ের সামনে দুই সারিতে দাঁড়িয়ে থাকে পুলিশ।

কার্যালয়ের ডান দিকে জলকামান, আর্মার্ড কার, প্রিজন ভ্যানসহ পুলিশের কয়েকটি গাড়ি রাখা হয়। তবে কার্যালয়ের ভেতরে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ দপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমেদসহ কয়েকজন অফিস কর্মী ছাড়া আর কেউই ছিলো না।

সকাল সাড়ে ৯টায় কার্যালয়ের সামনে থেকে তিন কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে বলে বিএনপির দপ্তরে কর্মরত কর্মীরা জানান। নয়া পল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের পাশে দিয়ে পথচারীদেরও যেতে দেয়নি পুলিশ। সমাবেশের অনুমতি চেয়ে পুলিশ ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের কাছে চিঠি দেওয়া হলেও অনুমতি পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমেদ। এই পরিস্থিতিতে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে বিএনপি।

সাম্প্রতিক