স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় সংসদের স্বীকৃতির পর একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিকভাবেও দিবসটি পালনের জন্য ইতোমধ্যে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছেন।
সচিবালয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার বিষয়টি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পালনের জন্য ২৫ মার্চকে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত একটি দিবস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। গত ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে গণহত্যা দিবস পালনের এই প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।
মন্ত্রিসভার অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ায় এখন থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে দিবসটি পালন করা হবে। এ বছর থেকেই তা শুরু হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে শফিউল আলম বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সেটা বলতে পারবে। আমরা এ মুহূর্তে বলতে পারছি না, কারণ তাদের প্রস্তুতি আছে কি না জানি না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত দিবসে সরকারিভাবে সর্বোচ্চ পরিমাণ আর্থ খরচ করা যায়। কারা
অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তার বিবরণও সেখানে লিপিবদ্ধ আছে। দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালনের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রক্রিয়া শুরু করেছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, জাতিসংঘে এ-সংক্রান্ত একটি সংস্থা আছে। তাদের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
তেইশ বছরের শোষণ থেকে বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।
‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে কালরাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। অবশ্য তার আগেই ৭ মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় বাঙালির অবিসংবাদিত এই নেতা বলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম- এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। কার্যত সেটাই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা, যার পথ ধরে কালরাতের পর শুরু হয় বাঙালির প্রতিরোধ পর্ব।
নয় মাসের যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদান, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং জাতির অসাধারণ ত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের দাবির মধ্যেই জাসদের সংসদ সদস্য শিরীন আখতার গত ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে প্রস্তাব তোলেন। তার প্রস্তাবে বলা হয়, সংসদের অভিমত এই যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যাকে স্মরণ করে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হউক এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হউক। সেদিন প্রায় সাত ঘণ্টা আলোচনার পর সর্বসম্মতভাবে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব কণ্ঠভোটে পাস হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ ৫৬ জন সংসদ সদস্য ওই আলোচনায় অংশ নেন। এদিকে, গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শততম টেস্টে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ বিষয়ে জানিয়েছেন।
তিনি জানান, আগামি দিনেও সাফল্য অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। সচিব বলেন, এই বিজয় গৌরবের। এ বিজয়ে মন্ত্রিসভাসহ পুরো দেশ অভিভূত। গত ১৫-১৯ মার্চ শ্রীলঙ্কার কলম্বোয় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের শততম টেস্ট ম্যাচে চার উইকেটে জয় পায় টাইগার দল। দুই ম্যাচ সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে সমতা হয়।
শততম টেস্ট জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দল মোট ৯টি জয়ের স্বাদ পায়। এদিকে, মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণে বোর্ড গঠন ব্যাপারে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তিনি জানান, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সবচেয়ে বড় অংশীদার প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা ও অসুবিধাগুলো চিহ্নিত করে তা নিরসন করবে এ বোর্ড।
সচিব জানান, ‘প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড আইন-২০১৭’ -এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। আইনটির প্রস্তাব করেছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডে ১৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালনা পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে। এতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব চেয়ারম্যান এবং প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক (নূন্যতম যুগ্ম সচিব মর্যাদা) সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে, সারাদেশে ভূমির অপব্যবহার রোধ করতে নতুন একটি আইনের খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ আইনের ফলে ভূমির ওপর কোনো উন্নয়ন কাজ করতে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। ‘নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা আইন-২০১৭’ শীর্ষক এ আইন লঙ্ঘন করলে জেল-জরিমানার বিধানও রাখা হয়েছে। আইন অনুযায়ী হতে পারে ৫ বছরের কারাদ- ও ৫০ লাখ টাকা জরিমানা।
এছাড়া, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতে (আইসিটি) গবেষণার জন্য ফেলোশিপ এবং উদ্ভাবনীমূলক কাজের জন্য সরকারি অনুদান বৃদ্ধির জন্য একটি নীতিমালার সংশোধনীতে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠকে ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতে গবেষণার জন্য ফেলোশিপ এবং উদ্ভাবনীমূলক কাজের জন্য অনুদান প্রদান সম্পর্কিত (সংশোধন) নীতিমালা-২০১৬ এর খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতে গবেষণার জন্য ফেলোশিপ এবং উদ্ভাবনীমূলক কাজের জন্য অনুদান প্রদান সম্পর্কিত (সংশোধন) নীতিমালা-২০১৬ এর খসড়ার কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনুদানগুলো একটু বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। যেমন- বিদেশে অধ্যয়নের ক্ষেত্রে মাস্টার্স কোর্সে মাসিক ৩০ হাজার টাকার সমপরিমাণ মার্কিন ডলার দেওয়া হবে, যেটা আগে নির্দিষ্ট করা ছিল না। এ রকম অনেকগুলো আর্থিক বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব।
< Prev | Next > |
---|