স্টাফ রিপোর্টার: দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বেশির ভাগ সরকারি কলেজেরই বেহাল দশা। ওসব কলেজের অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও তা খুবই ধীরগতিতে চলছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে সরকারি কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রমও। আর এমন পরিস্থিতির জন্য সংশ্লিষ্টরা শিক্ষা এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতাকে দায়ি করছেন। বিগত ২০১০ সালের আগস্টে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সদরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ৭০টি সরকারি পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট কলেজের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর লক্ষ্যে হাতে নেয়া প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হয়। আর ওই প্রকল্পের আওতায় কলেজগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতের কথাও বলা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারি কলেজের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প শুরুর ৭ বছর পরও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিরাজ করছে বেহাল দশা। ওই ৭ বছরেও প্রকল্পের অধিভুক্ত তিন ডজন কলেজের ভবন নির্মাণের কাজ এখনো শেষ হয়নি। বরং গোটা প্রকল্প বাস্তবায়নে আরো ৩ বছর প্রয়োজন হবে। একই সাথে তা শেষ করার জন্যও প্রয়োজন হবে অতিরিক্ত আরো ৫২৯ কোটি টাকা। প্রককল্পের কাজ ২০১০ সালে শুরু হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় যথাসময়ে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে পারেনি। বিগত ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রকল্পটি শুরুর সময় ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ছাড় করা হয়েছিল মাত্র ৩ কোটি টাকা। পরের অর্থবছর ২৪২ কোটির জায়গায় ছাড় হয় মাত্র ৩৫ কোটি টাকা। একইভাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ছাড় হয় মাত্র ১৮৫ কোটি টাকা। সেজন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সমন্বয়হীনতাই দায়ি। তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব দুর্বলতার কারণেই প্রকল্প কাজে গতি আসেনি।
সূত্র জানায়, অর্থ বরাদ্দ নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণে প্রকল্পের কাজ ঠিকমতো এগুচ্ছে না। ঠিকাদার নিয়োগে জটিলতা, যথাসময়ে অর্থ হাতে না পাওয়া, কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মতবিরোধসহ নানাবিধ কারণে একটি কলেজেরও কাক্সিক্ষত অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি।
বর্তমানে প্রায় তিন ডজন কলেজের ভবন নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে। নির্মাণের কারণে ওসব কলেজের শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন পুরনো ভবন হারিয়েছে, অন্যদিকে নতুন ভবনগুলো কবে পাওয়া যাবে তাও অনিশ্চিত। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা বছরের পর বছর ধরে শ্রেণীকক্ষ সংকটেই রয়েছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে ক্লাস, পরীক্ষাসহ নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম। অথচ কলেজ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে পাঁচতলা ভিতের ওপর দুই-চারতলা পর্যন্ত নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় কয়েকজন সংসদ সদস্যসহ প্রভাবশালীদের চাপ ও অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর কারণে নির্মাণাধীন ভবনগুলোকে পাঁচতলা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরকম জটিলতায় প্রায় দুই ডজন ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে আছে।
সূত্র আরো জানায়, সরকারি কলেজের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি গুণগত মানোন্নয়নের ক্ষেত্রেও বেহাল দশা বিদ্যমান। যদিও প্রকল্পের শুরুর বছর থেকেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা ছিল, কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই ধরনের কোনো কার্যক্রমই শুরু হয়নি। তাছাড়া শিক্ষাদানে ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রচলনের কথা থাকলেও কেনা হয়নি কোনো মাল্টিমিডিয়া যন্ত্রপাতি ও কম্পিউটার। তাছাড়া কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনের কথা থাকলেও সেক্ষেত্রেও কোনো অগ্রগতি নেই। বর্তমানে অধিকাংশ সরকারি কলেজই নানা সমস্যায় জর্জরিত। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেরই লাইব্রেরি রয়েছে ভাঙাচোরা দশায়। কোনোটিতে আবার লাইব্রেরিয়ানও নেই। শিক্ষার্থীদের জন্য নেই আবাসন ও পরিবহন ব্যবস্থাও। খেলার মাঠ থাকলেও অভাব সরঞ্জামের। কলেজের এমন পরিবেশ সুষ্ঠু পাঠদানের অন্তরায় বলে মনে করেন শিক্ষকরা।
এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক তাহিয়াত হোসেন জানান, প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করা হয় ২০০৮ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী। আর কাজ শুরু হয় ডিপিপি তৈরির তিন বছর পর। ফলে ঠিকাদারদের মধ্যেও এ নিয়ে আগ্রহ ছিল কম। পরবর্তীতে ওই সমস্যার সমাধান করে কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ সময়মতো হাতে না আসায় কাজের প্রত্যাশিত মাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি। তবে তিন বছরের মধ্যেই সব কাজ শেষ করা যাবে।
অন্যদিকে একই বিষয়ে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব জিয়াউল ইসলাম জানান, ডিপিপি অনুযায়ী সময়মতো কাজ শেষ করার বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের নির্দেশনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দসহ যাবতীয় তৎপরতাও অব্যাহত রয়েছে। তবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব সমস্যার কারণে অনেক সময় প্রকল্পের কাক্সিক্ষত গতি অর্জন হয় না।
< Prev | Next > |
---|