আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দোহার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে চার আরব দেশের দেওয়া ১৩ দফা শর্ত মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে কাতার। ওই শর্তগুলোকে ‘অযৌক্তিক’ ও ‘অকার্যকরী’ উল্লেখ করেছে দেশটি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা খবরটি নিশ্চিত করেছে।
শুক্রবার (২৩ জুন) এক বিবৃতিতে কাতার সরকারের যোগাযোগ কার্যালয়ের পরিচালক শেখ সাইফ বিন আহমেদ আল থানি বলেন, ‘শুরু থেকে কাতার যে কথা বলে আসছে এ শর্তগুলো তারই প্রমাণ। সন্ত্রাসবাদ ঠেকানোর কথা বলে এ অবরোধ আরোপ করা হলেও আসলে তা নয়, বরং এটি কাতারের সার্বভৌমত্ব সীমাবদ্ধ রাখা এবং আমাদের পররাষ্ট্র নীতিমালার আউটসোর্সি এর প্রশ্ন।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি কাতার বয়কটকারী দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছে যেন তারা অভিযোগের পক্ষে ‘যুক্তিসঙ্গ’ ও ‘কার্যকরী’ কারণ তুলে ধরে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বয়কটকারী দেশগুলোর দাবি ‘পরিমিত’ ও ‘বাস্তবসম্মত’ হতে হবে। অথচ এ তালিকাটির মধ্যে সন্তোষজনক কিছু পাওয়া যায়নি।”
কাতার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চার আরব দেশের শর্তগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে জবাব প্রস্তুত করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ১০ দিনের মধ্যে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বন্ধ করে দেওয়াসহ শুক্রবার কাতারের কাছে ১৩ দফা শর্তবিশিষ্ট একটি তালিকা পাঠায় সৌদি আরব,মিসর,সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন সেইসঙ্গে বলে দেওয়া হয়,কাতার যদি আরব দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার প্রত্যাহার চায় তবে অবশ্যই এ ১৩টি শর্ত পূরণ করতে হবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ‘যুক্তিসঙ্গত ও কার্যকর’ দাবি-দাওয়া পেশ করার জন্য কাতারের প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানোর পর শর্তগুলো পাঠানো হলো। সেখানে কাতারকে দেশটির সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে এবং ১০ দিনের মধ্যে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক হ্রাস ও তুরস্কের একটি সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া কাতারকে চার আরব দেশ আরও যে শর্তগুলো দিয়েছে তাহল:
- অন্য আরব দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করা
- চার দেশের মানুষকে নাগরিকত্ব না দেওয়া এবং বর্তমানে তাদের ভূখণ্ডে বসবাসরতদের বহিষ্কার করা। কেননা, এ পদক্ষেপকে চার দেশ তাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে কাতারের হস্তক্ষেপ বন্ধের প্রচেষ্টা বলে উল্লেখ করেছে।
- চার দেশ যাদেরকে সন্ত্রাসী বলে মনে করে তাদেরকে হস্তান্তর করা।
- সৌদি আরব ও অন্য দেশগুলোর যেসকল বিরোধী ব্যক্তিকে কাতার তহবিল সরবরাহ করে তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করা।
- রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জিসিসির সঙ্গে এক কাতারে থাকা।
- আল জাজিরার পাশাপাশি আরাবি ২১ এবং মিডল ইস্ট আইসহ অন্য সংবাদ মাধ্যমগুলোতে তহবিল বন্ধ করা।
- অনির্দিষ্ট পরিমাণের ক্ষতিপূরণ সরবরাহ করা।
- চার আরব দেশের একটির সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, কাতারকে আইএস, আল-কায়েদা এবং হিজবুল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বলা হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, শর্তগুলো মানা না মানার ব্যাপারে কাতারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি এর আগে বলেছিলেন, শাস্তিমূলক পদক্ষেপ প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তারা আলোচনায় যাবেন না।
< Prev | Next > |
---|