একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসতে এখনো দেড় বছরের বেশি সময় বাকি। তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলো ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় সংসদ সদস্যদের এলাকায় গিয়ে জনসংযোগ বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক দল নয়, জনগণকেও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করতে হয়। প্রকাশ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দাবি করে আসা বিএনপি জেলায় জেলায় সাংগঠনিক সফর শুরু করেছে। ভিশন-২০৩০ নিয়ে আসছে জনসমক্ষে। কোনো কোনো জোট পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করছে। কোনো কোনো দল জোট গড়ার চেষ্টা করছে। নির্বাচন কমিশনও আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের রোডম্যাপ তৈরি করছে। সব মিলিয়ে বলা যেতে পারে, নির্বাচনের আবহ তৈরি হতে শুরু করেছে।
রাজনীতিতে দল যেমন, জনগণও তেমনি একটি বড় প্রভাবক। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতি যেন এক চরম দুঃসময় পার করছে এখন। খোলা চোখেই দেখা যাচ্ছে আদর্শ, জনকল্যাণ, আত্মত্যাগ ও নৈতিকতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে দেশের রাজনীতি ক্রমেই ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করছে অর্থ ও পেশিশক্তি। অনেকের কাছেই রাজনীতি এখন বিত্তবৈভব অর্জনের হাতিয়ার। দুর্নীতি, লুটপাট বাড়ছে। ফলে সব ধরনের অপকর্মই আজ রাজনীতির অনুষঙ্গ হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় দলে শুদ্ধি অভিযান। তার ইঙ্গিতও মিলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায়। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে বলেছেন, নির্বাচনী এলাকায় কার কী অবস্থা, জনসমর্থন কার কেমন, কারা জনপ্রিয়তা হারিয়েছেনÑসব রিপোর্ট তাঁর কাছে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কথায় এটা স্পষ্ট হয়েছে, দলীয় সংসদ সদস্যদের বিষয়ে একটি জরিপ করেছে ক্ষমতাসীন দল। তবে এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। আরো জরিপ করতে হবে। কারো জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়লে তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এরই মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জেলায় জেলায় রাজনীতিবিদদের প্রফাইল তৈরির কাজ শুরু করেছে পুলিশ। শুধু বিরোধীদলীয় নয়, সরকারদলীয় রাজনীতিবিদদের প্রফাইলও তৈরি করা উচিত। দুদক ও এনবিআর এ ব্যাপারে কাজ করতে পারে। কাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। অর্থ উপার্জনের ব্যাপারে রাজনৈতিক নেতাদের সততা নিয়ে যেন কোনো প্রশ্ন না থাকে, এ বিষয়ে কাজ করা যেতে পারে। তাতে সরকারও উপকৃত হবে। বিশেষ করে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ উপকৃত হবে। স্থানীয়ভাবে বিতর্কিত কাউকে মনোনয়ন দিয়ে আসন হারানোর আগে জনসমর্থন আছে, এমন কাউকে মনোনয়ন দেওয়াই বাঞ্ছনীয়।
আমরা চাই দেশের রাজনীতি দুর্নীতিমুক্ত হোক। পেশিশক্তি ও কালো টাকামুক্ত রাজনৈতিক অঙ্গনই সবার কাম্য। তার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। অবাঞ্ছিতদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করা গেলে রাজনীতি কলুষমুক্ত হবে, তাতে সন্দেহ নেই।
< Prev | Next > |
---|